ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

মুক্তমত

এ কেমন দেশপ্রেম!

মাহমুদ খায়রুল, কুয়ালালামপুর করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৫
এ কেমন দেশপ্রেম! ফাইল ফটো

কুয়ালালামপুর: ছোটো মুখে রাজনৈতিক আলাপ শোভা পায় না। বঙ্গবন্ধুর জ্বালাময়ী ভাষণ শোনার সৌভাগ্যআমার হয়নি।

সুযোগ হয়নি জিয়াউর রহমানের দেশপ্রেম চাক্ষুষের।

তবে একটু জেনেছি, মানুষের জন্য ভালোবাসা আর দেশপ্রেমে একটুও ঘাটতি ছিলো ক‍ারো ভেতর। স্বাধীনতা পাওয়ার পর যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশকে মাথা তুলে দাঁড় করানোর প্রত্যয়ে আমৃত্যু খেটেছেন তারা।

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে জন্মনেবার সৌভাগ্য হওয়ায় একাত্তরের হানাদার ও তাদের এদেশীয় দোসরদের নির্মমতার আঁচ যেমন পেয়েছি, তেমনি অনুভব করেছি দেশের মুক্তিকামী মানুষের অসীম সাহসিকতার স্বরূপ।

সেই দেশপ্রেম, সেই সাহসিকতার বীরত্ব গাঁথার নজির এখন কোথায়?

দেশ স্বাধীন হয়েছে প্রায় ৪৪ বছর। আমরা কি কি অর্জন করেছি তার যদি তালিকা করা যায় তাহলে সেটা বেশ বড়ই। এতো কম সময়ে এতো ক্ষেত্রে উন্নতি খুব কম দেশেরই আছে।

তবে একই ভাবে, অর্জিত দুর্নামের তালিকাটাও নেহায়েত ছোট নয়।

কিন্তু সাধারণ মানুষের নিত্যকার জীবন সংগ্রামের চিত্র মন খারাপ করে দেয়। রিকশাওয়ালা সকালে রিকশা নিয়ে রাস্তায় নামে। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে জোগাড় করে খাবার।

মধ্যবিত্ত কর্মজীবীদের জীবন কাটে বাসের ধাক্কায় ঘর্মাক্ত শরীরে। আর সিএনজিতে চড়বেন? চালকদের সিন্ডিকেটে আপনি বন্দি। ১৫০-২০০ টাকার নিচে কোনো অটো রিকশা পাওয়া অসম্ভবই বটে।

টাকা থাকলেও ব্যবসা করতে পারবেন না। চাঁদাবাজদের চাহিদা মেটাতে মেটাতেই অর্ধেক জীবন শেষ। চাকরিতে পদস্থ কর্মকর্তার হম্বিতম্বি। বাসায় ফিরে হিন্দি সিরিয়ালের অত্যাচার।

ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় ফেসবুকে। স্কুল-কলেজের বইয়ের ব্যাগে ঢুকে পড়েছে ইয়াবা।  

ছোট বেলায় সমাজ শিক্ষা বইয়ে পড়েছিলাম, আমাদের মৌলিক অধিকার খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা। বার বার তাই স্মরণ করছি। মৌলিকতা আমাদের চাহিদাকে হার মানিয়েছে।   

বাংলাদেশের মাটিতে এখন মৃত্যু যেনো নিত্যকার ঘটনাই হয়ে উঠেছে। ১ অথবা ২ জনের মৃত্যু আমরা গণনায় রাখি না। তার সঙ্গে মানুষকে মারার বিভিন্ন পদ্ধতি আবিষ্কার করতে আমরা সর্বদা প্রস্তুত। আমাদের সর্বশেষ জনপ্রিয় আবিষ্কার হল পেট্রোল বোমা।

বিশ্ববাজারের সঙ্গে তাল রেখে বাংলাদেশে পেট্রোলিয়ামের দাম না কমলেও পেট্রোল বোমার যথেচ্ছ ব্যবহার বেশ লক্ষণীয়। বাড়ি থেকে বের হতে হচ্ছে পরিবারের কাছে শেষ বিদায় নিয়ে।   দুশ্চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম। মনে হয় যেনো, প্রতিদিন কোনো যুদ্ধক্ষেত্র পাড়ি দিচ্ছে আমজনতা।

কিন্তু হরতাল, দাঙ্গা, ফ্যাসাদ কি প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে!

এর শেষ কোথায়? ক্ষমতার লোভ কি কখনই শেষ হবে না? ক্ষমতার লোভে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে খেলার অধিকার কে কাকে দিলো!

ক্ষমতার লোভ কি মনুষ্যত্বের উর্ধে চলে গেছে? আমাদের আদর্শ নেতাদের থেকে কি আমরা কিছুই শিখতে পারিনি ?

আর কত মিথ্যাকে ঘিরে আমরা বেড়ে উঠবো? যদি দেশের স্বার্থেই কাজ করি তাহলে দেশের যে মানুষকে পুড়িয়ে মারছি তারা কি দেশের না? দেশের যেসব যানবাহনে যে আগুন দিচ্ছি, সেগুলো কি আমার দেশের নয়? দেশের যেসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধবংস করছি, সেসব কি আমার মাতৃভূমির না? এ কেমন দেশপ্রেম আমাদের? এ কেমন ভালবাসা আমার, দেশ ও মানুষের প্রতি?

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।