ঢাকা, মঙ্গলবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

মুক্তমত

পঞ্চম সমাবর্তন বৃহস্পতিবার

গৌরবের অগ্রযাত্রার ৪৫ বছরে জাবি

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৫
গৌরবের অগ্রযাত্রার ৪৫ বছরে জাবি

জাবি: বৃহস্পতিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পঞ্চম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ সভাপতিত্ব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট ছাত্র-ছাত্রীদের সনদপত্র প্রদান করবেন।



সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তব্য দান করবেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম সমাবর্তনে ভাষণ দেবেন।

কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করায় বিভিন্ন নামে প্রদত্ত ট্রাস্ট ফান্ড বৃত্তিপ্রাপ্ত বিশজনেরও অধিক গ্রাজুয়েটকে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক প্রদান করবেন।

সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল রূপে। উৎসবের অপেক্ষায় সব কিছুতেই যেন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিশাল এলাকা জুড়ে সমাবর্তন প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে।
 
এর আগে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি সমাবর্তন অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ১৯৯৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি। তখন চ্যান্সেলর ছিলেন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ এবং উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম চৌধুরী। সমাবর্তন বক্তা হিসেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক ড. মফিজ উদ্দিন আহমদ ‘বাংলাদেশে উচ্চতর বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি শিক্ষা, গবেষণা ও প্রয়োগ’ শীর্ষক ভাষণ দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ২০০১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। চ্যান্সেলর ছিলেন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ এবং উপাচার্য ছিলেন খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ও কলামিস্ট  অধ্যাপক আবদুল বায়েস। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের (১৯৯৬) প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমান।

তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ২০০৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। চ্যান্সেলর ছিলেন রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ড. ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ এবং উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ড. খন্দকার মুস্তাহিদুর রহমান। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামাল। চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারি। চ্যান্সেলর ছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো. তাফাজ্জাল হোসেন।

পঞ্চম সমাবর্তন যখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে তখন এ বিশ্ববিদ্যালয় ৪৫ বছরে পদার্পণ করেছে। ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আহসান আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন। তবে এর আগে ৪ জানুয়ারি অর্থনীতি, ভূগোল, গণিত ও পরিসংখ্যান বিভাগে ক্লাস শুরু হয়। প্রথম ব্যাচে ছাত্র-ছাত্রী ছিলেন ১৫০ জন।  

ইতিহাসের এ পথ পরিক্রমায় ৪৫ বছর একেবারে কম সময় নয়, আবার অনেক দীর্ঘ সময়ও নয়। ৪টি বিভাগ ও ১৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিলো, প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছরে সেই বিশ্ববিদ্যালয় আজ মহীরুহ আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেবর অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ৩৩টি বিভাগ ও দু’টি ইনস্টিটিউটে পনের হাজারেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী এখন লেখাপড়া করছেন। ছাত্র হলের সংখ্যা ৮টি এবং ছাত্রী হলের সংখ্যা ৮টি। বর্তমানে শিক্ষকের সংখ্যা ৬৬৪ জন, কর্মকর্তা ২৭০ জন, তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী ৬৪১ জন এবং চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীর সংখ্যা ৭৫০ জন।

২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৪১৮৬ জন স্নাতক (সম্মান), ১৯৮৯৬ জন স্নাতকোত্তর, ২৭৭ জন এমফিল গবেষক ও ৫৪৫ জন পিএইচডি গবেষক তাদের গবেষণা সম্পন্ন করে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। প্রথম সমাবর্তনে নিবন্ধনকৃত গ্রাজুয়েট ছিলেন ৪৪৮৪ জন, দ্বিতীয় সমাবর্তনে ৫০১২ জন, তৃতীয় সমাবর্তনে ৪৩৮৩ জন, চতুর্থ সমাবর্তনে ৩৮৭৪ জন, ২২ জন এমফিল এবং ৫৩ জন পিএইচডি ডিগ্রিধারী। পঞ্চম সমাবর্তনে প্রায় নয় হাজার গ্রাজুয়েট, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী অংশগ্রহণ করছেন।

৪৫ বছরের পথ পরিক্রমায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণাসহ নানা ক্ষেত্রে গৌরবের কীর্তি রচিত হয়েছে। এ গৌরবের সর্বশেষ সংযুক্তি ঘটেছে দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম নারী উপাচার্য যোগদানের মধ্য দিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম গত বছরের ২ মার্চ উপাচার্য হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে এ অনন্য গৌরব রচনা করেন।

অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম নির্বাচিত উপাচার্য।   তিনি সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে প্রথম হয়েছিলেন।

একটি উচ্চমান সম্পন্ন শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার মানসে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রার প্রাক্কালে দেশের খ্যাতনামা শিক্ষকদের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। তারাসহ পর্যায়ক্রমে সকল উপাচার্য ও শিক্ষকরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি এবং দেশে-বিদেশে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছেন।

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতি ও সুনাম বহুলাংশে নির্ভর করে তার শিক্ষা ও গবেষণা কর্মকাণ্ড দিয়ে। বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. মুস্তাফা নূরউল ইসলাম শ্রেষ্ঠ শিক্ষাবিদ হিসেবে ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদক লাভ করেন। অধ্যাপক ড. মুস্তাফা নূরউল ইসলাম ২০১১ সালে জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে ঘোষিত হওয়ায় এ বিশ্ববিদ্যালয় গৌরবান্বিত হয়েছে। ইংরেজি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী কবিতার জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার, বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক আবদুল কাইউম বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন পুরস্কার লাভ করেন।

বাংলা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক হায়াৎ মামুদ গবেষণা ও সাহিত্যকর্মের জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মো. নূরুল ইসলাম তার গ্রাহাম গ্রিণ এর ওপর রচিত গ্রন্থের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন পুরস্কার লাভ করেন। ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর এমেরিটাস ইতিহাসবিদ ড. আজিজুর রহমান মল্লিক এক সময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন এবং অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ সফিউল্লাহ ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স এবং থার্ড ওয়ার্ল্ড একাডেমি অব সায়েন্স স্বর্ণপদক অর্জন করেন।

প্রাক্তন উপাচার্য ও বর্তমানে সরকারি কর্মকমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. শরীফ এনামুল কবির ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অ্যাওয়ার্ড, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স স্বর্ণপদক, ২০০৭ সালে বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স-ড. এম ও গণি স্বর্ণপদক লাভ করেন। রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: ইলিয়াস মোল্লা ১৯৮৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এইচ পি রায় স্বর্ণপদক লাভ করেন।

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: সলিমউল্লাহ ১৯৮১ সালে এইচ পি রায় স্বর্ণপদক, ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স ও টিডব্লিউএস পুরস্কার, ১৯৯৪ সালে ইরানের আল খারাজামি আন্তর্জাতিক পুরস্কার, ২০০১ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ পুরস্কার, ২০০২ সালে বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সের সিনিয়র গ্রুপের পুরস্কার এবং ২০০৩ সালে তেহরানে অনুষ্ঠিত ওআইসি সভায় ওআইসিভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে পদার্থবিজ্ঞানে সর্বোচ্চ ISESCO SCIENCE  অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামান ভূ-পদার্থ বিদ্যা গবেষণার জন্য ১৯৮৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন পুরস্কার লাভ করেন।

অধ্যাপক ড. এ এ মামুন ২০০৯ সালে জার্মানির হামবোল্ট ফাউন্ডেশনের The Bessel Research Prize, ২০০৬ সালে ইতালি থেকে Third World Academy of Science (TWAS)  এবং ২০০০ সালে ইতালি থেকে Young Physicist Medal and Certificate লাভ করেন। ড. মামুন ২০০৪ সালে Bangladesh Academy of Science Gold Medal (Junior Group), ২০০৪ সালে Razzak-Shamsun Prize  এবং ১৯৯২ সালে Best Young Scientist Prize লাভ করেন।

মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষক ড. আলী আজম তালুকদার ২০০৫ সালে Bangladesh Academy of Science  Gold Medal (Junior Group) লাভ করেন। নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক মো: আকতার মাহমুদ ২০০৯ সালে U.S. Department of State Award  লাভ করেছেন। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান নরসিংদীর উয়ারি বটেশ্বরে ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে প্রাচীন সভ্যতা আবিস্কার করে এ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশকে উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।

ইরানের তেহরানে ২০০৭ সালের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় গণিত বিভাগের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে সপ্তম স্থান অধিকার করেন। অতি সাম্প্রতিক সময়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা এশীয় অঞ্চলে সফট্ওয়্যার প্রোগ্রামিং এ (এসিএম-আইসিপিসি) প্রতিযোগিতায় বিশেষ কৃতিত্বপূর্ণ স্থান অর্জন করেছেন। এ বিভাগের ছাত্র অনিন্দ্য মজুমদার বিশ্বখ্যাত সফ্টওয়্যার কোম্পানি ‘গুগল’ এর হেডকোয়ার্টারে চাকরি লাভ করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও গৌরব বৃদ্ধি করেছেন।

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোস্তফা ফিরোজ বণ্যপ্রাণি সংরক্ষণ ও গবেষণায় ‘বঙ্গবন্ধু গোল্ড মেডেল ২০১৪’,  পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. খবির উদ্দিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য ‘জাতীয় পরিবেশ পদক ২০১৪’ লাভ করেছেন। রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. তপন কুমার সাহা গবেষণা প্রবন্ধের জন্য ভৌত বিজ্ঞান শাখায় ২০১৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অ্যাওয়ার্ড লাভ করেছেন। পরিবেশ বিজ্ঞান শিক্ষক ড. আমির হোসেন ভূঁইয়া পরিবেশ গবেষণায় ‘দ্য ওয়ার্ল্ড একাডেমি অফ সায়েন্সেস’ তরুণ বিজ্ঞানী পুরস্কার লাভ করেছেন। এসব পুরস্কার অর্জনের মধ্য দিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধিতে বিশেষ অবদান রেখেছেন। বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ড. আবদুল্লাহ সোহায়েল বিদেশি ফল ‘প্যাশন ফ্রুট’ চাষে সফল হয়ে দেশব্যাপী আলোচিত হয়েছেন।      

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. জসীম উদ্দিন আহমদ শিক্ষা ও গবেষণায় ২০০৬ সালে, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম আল দীন ২০০৭ সালে একুশে পদক লাভ করেছেন। এছাড়াও অধ্যাপক ড. সেলিম আল দীন ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৯৪ ও ১৯৯৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ২০০০ সালে কলকাতা নান্দিকার পুরস্কার লাভ করেন। ২০০৪ সালে সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বেগম রোকেয়া পদক এবং ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।

এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান জিয়াউর রহমানের সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন আহমেদ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বিগত মহাজোট সরকারে মন্ত্রী পদমর্যাদায় শিক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেন।

সরকার পরিচালনার পাশাপাশি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সম্মানিত শিক্ষক দেশে-বিদেশে সম্মানজনক পদে অধিষ্ঠিত হয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছেন। অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. তাজুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য হিসেবে, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আমির হোসেন খান কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু সাঈদ খান জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

রসায়ন বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ ও আর্ন্তজাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক খোন্দকার মউদুদ ইলাহী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল লতিফ মাসুম পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণায় বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক শিক্ষা ও সহযোগিতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্বিপাক্ষিক শিক্ষা ও গবেষণার জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জাপানের সাগা বিশ্ববিদ্যালয়, সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, কানাডা, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য, ইতালি, বেলজিয়াম, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ইত্যাদি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীরা উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণায় নিয়োজিত থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরব বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অমর একুশ, সংশপ্তক ও দেশের মধ্যে সবচেয়ে উঁচু শহীদ মিনার এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ও গৌরব বহুলাংশে বৃদ্ধি করেছে। অধ্যাপক ড. কাজী সালেহ আহমেদ উপাচার্য থাকাকালে (১৯৮৮-১৯৯৩) বিভিন্ন ভাস্কর্য নির্মাণ করে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবগাথা সমৃদ্ধ করেন। মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য সংশপ্তক ও ভাষা আন্দোলনের ভাস্কর্য অমর একুশ নির্মিত হয়।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সংশপ্তক ভাস্কর্যের ব্রোঞ্জের শরীরে প্রতীকী ব্যঞ্জনায় উদ্ভাসিত করেছেন শিল্পী হামিদুজ্জামান। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় চেতনাকে অমর একুশ ভাস্কর্যটি কংক্রিটের শরীরে জীবন্ত করেছেন শিল্পী জাহানারা পারভীন।

প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছরের অগ্রযাত্রায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্রমশ তার প্রত্যাশা পূরণে ধাবমান। একটিমাত্র আবাসিক হল দিয়ে দেশের একমাত্র আবাসিক এ বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিলো। আজ সেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক হল সংখ্যা ১৬টি। ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। এমফিল ও পিএইচডি গবেষকের সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিশাল আয়তনের এ ক্যাম্পাসে বর্তমান শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে যাচ্ছে কাঙ্খিত লক্ষ্যের দিকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার স্বাভাবিক ও সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করার ফলে বর্ধিষ্ণু সেশনজট বর্তমানে নিরসনের দ্বারপ্রান্তে। বর্তমান উপাচার্য মনে করেন, ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী, স্থানীয় প্রশাসন সবাই এ সাফল্যের অংশীদার।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম পঞ্চম সমাবর্তন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নে সকলকে একযোগে চলার আহবান জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সকলে মনে করেন যে, পরমত সহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক সহযোগিতার সম্মিলন ঘটলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবের অগ্রযাত্রায় বহুমাত্রিকতা যুক্ত হবে এবং দেশ-বিদেশে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি আরও উদ্ভাসিত হবে।

মোহাম্মদ মহিউদ্দিন: উপ-পরিচালক, জনসংযোগ অফিস, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।