ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

দুঃস্বপ্নের যাত্রী ।। আদনান সৈয়দ

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০১৪
দুঃস্বপ্নের যাত্রী ।। আদনান সৈয়দ

অনেক ত্যাগ আর কষ্টে মাখা এই পরবাসী জীবন, প্রবাস জীবন। আর সে কারণেই হয়তো প্রতিটি প্রবাসীর ছোট্ট ধমনিতে বাসা বেঁধে আছে প্রবাস জীবনের হাজারো না বলা গল্প, হৃদয়ের কোনো এক গহীন কোনে জমাট বেঁধে আছে হাজারো দুঃখগাঁথা।

নিজের ভাষা, সংস্কৃতি, প্রিয় মানুষ আর প্রিয় মাতৃভূমিকে পেছনে ফেলে শুধু উন্নত আর নিশ্চিত এক জীবনের আশায় আমরা মোহগ্রস্ত হয়ে ঘুরছি দেশ থেকে দেশান্তরে। জীবনকে হাতের তালুতে নিয়ে সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়ে আমরা পৃথিবীর নানান বন্দরে আমাদের জীবনের নৌকাটাকে ভিড়িয়ে দিচ্ছি। কঠিন সত্য হল এই যে, সেই সাধের সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিতে যেয়ে আমাদের জীবন থেকে কতো সুন্দরই না ঝরে পড়ে—কতো বসন্তই না হারিয়ে যায়, আমরা সেই খবর কজন রাখি বলুন?

ভদ্রলোকের নাম ফয়েজুল বারী, বর্তমান ঠিকানা লং আইল্যান্ড সিটি, নিউইয়র্ক। ১৯৮২ সালে পশ্চিম জার্মানি থেকে নিউইয়র্কে এসেছিলেন। কিন্তু অভিবাসী হওয়ার পথ তার কখনোই সুন্দর আর মোমের মতো মোলায়েম ছিলো না। সে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। চলুন তার জীবনের গল্পটি উনার মুখ থেকেই শুনি।

১৯৭৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের কোনো একদিনে রাত আনুমানিক ১০টার দিকে আমরা ১৩ জনের একটি দল বাংলাদেশ থেকে পূর্ব জার্মানিতে পৌঁছি। তখন পূর্ব জার্মানিতে আসতে কোনো ভিসার প্রয়োজন ছিলো না। পূর্ব জার্মানির বার্লিন শহরে এসে আমার বুক যেন ভয়ে শীতল হয়ে গেলো। রাস্তা-ঘাঁট চিনি না, কারো সাথে কোনো চেনা পরিচয় নেই। বুকের মধ্যে এক ধরনের দলা পাকানোর আওয়াজ ঠিক শুনতে পেলাম। পিছনে ফেলে আসা ভাইবোনদের প্রত্যাশা মাখানো মুখ, মায়ের মলিন হাসি, বড় ভাইয়ের জীবন সংগ্রামী হওয়ার কঠিন উপদেশ সবই মনে পড়ল। তাই মনকে সান্ত্বনা দিলাম। জীবন যুদ্ধের এ খেলায় আমাকে জিততে হবেই। সেখানে পৌঁছেই পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা ৬ জন এবং ৭ জন দুটো দলে ভাগ হয়ে পড়ি। এবং এবং সেখানকার পাতাল ট্রেনে চড়ে পশ্চিম জার্মানির দিকে এগুতে থাকি। ট্রেনে আমরা এমন অভিনয় করতে থাকি যে, কেউ যেন আমাদের কোনো সন্দেহ করতে না পারে। এরই মাঝে হঠাৎ করে কয়েকজন পাকিস্তানি ছোকরার দল হন্তদন্ত হয়ে আমাদের ট্রেনে উঠে বলল, ‘আপনারা আর সামনে এগুবেন না। সামনে পুলিশ সবাইকে ধরছে। ‘এ ধরনের কথা শুনে আমরা সবাই তখন ভয়ে কাঠ হয়ে গেলাম। পাতাল ট্রেন থেকে ঝটপট নেমে কোথাও গা ঢাকা দেওয়ার পরিকল্পনা করলাম। সেই পাকিস্তানিগুলো আমাদের পেছন পেছন অনুসরণ করল। ট্রেন থেকে নেমেই দেখি একটা পার্কের মতোন নীরব প্রান্তর। পরে বুঝেছিলাম যে ওটা পার্ক ছিল না আসলে ওটা ছিল একটা গোরস্থান। আমাদেরকে পাকিস্তানিরা এই কবরখানায় ভোর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলল এবং আরো বলল যে, আমাদের সাথে করে নিয়ে আসা ব্যাগ আর সুটকেসগুলো যেন তাদেরকে দিয়ে দেই। কারণ তারাই সেগুলোর দেখভাল করবে এবং ভোরে একটা নির্দিষ্ট সময়ে আমাদেরকে আবার নিতে আসবে। বলা বাহুল্য সেদিন আমরা পাকিস্তানিদের ওপর এমন বোকার মতো বিশ্বাস করে আমাদের সর্বস্ব খুইয়েছিলাম। মনের ভেতর সারাক্ষণ ভয় কাজ করলে যা হয়। সেই মুহূর্তে ভেবেছিলাম যে, হয়তো তারা সত্যি সত্যি আমাদের উপকার করার চেষ্টা করছে।

যাইহোক ভোরবেলা তাদের কথামতো আমাদেরকে কেউ নিতে আসে নি আর আমরা ব্যাগগুলোও আর কখনো ফিরে পাইনি। সারারাত আমাদের কেটে গেল এই কবর খানায়। যখন ভোর হল তখন আমাদের দলনেতা একটা উকিলের ঠিকানা লিখে দিয়ে বললেন যে, তার সাথে যেন আমরা দেখা করি। উনি আগে থেকেই উকিল সাহেবের সাথে সব ব্যবস্থা করে রেখেছেন। তার কথা অনুযায়ী একটা ট্যাক্সি নিয়ে উকিলের সাথে দেখা করতেই ভদ্রলোক আমাদেরকে হাসি মুখে আভ্যর্থনা জানালেন। সেখানেই আমরা সবাই নির্ধারিত ফর্মে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করি। রাজনৈতিক আবেদনের একটা কপি চলে যায় সেখানকার ইমিগ্রেশন বিভাগে আর এর আরেকটা কপি আমাদের দিতে হয়েছিল স্থানীয় পুলিশ বিভাগে।   সাময়িক অনুমোদনপত্র পাওয়ার পর সেখান থেকে আমাদেরকে পাঠানো হয় সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার বিভাগে। আমাদের হোটেলে থাকা খাওয়া ফ্রি করে দেওয়া হয় এবং প্রতিদিন হাত খরচার জন্য কিছু বাড়তি মার্কও আমরা পেতে শুরু করি। সেখানকার নিয়ম অনুযায়ী ৯০ দিনের মধ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থীদের ফলাফল জানিয়ে দেওয়া হতো। যারা ভাগ্যবান তাদের আবেদন গৃহীত হতো এবং জার্মানিতে সুখে আনন্দে দিন কাটাতে পারতেন। আর যারা আমার মতোন অভাগা তাদের পায়ের নিচ থেকে যেন মাটিটা আস্তে করে সরে যেতো। আরেকটা কথা হল, ১৯৮০ সালে সিডিও সরকার আসার পর থেকেই এরা ইমিগ্র্যান্টদের বিরুদ্ধে জোরেসোরে নেমে পড়ে। কিন্তু এর আগের সরকার অর্থাৎ এসপিডির সময় এমনটা ছিল না। যাইহোক বেশিরভাগ অভাগাদের মতোই আমার রাজনৈতিক আশ্রয় নাকচ হয়ে গেল এবং তখন থেকে আমি জার্মানি ছাড়ার বিভিন্নরকম ফাঁকফোকর খুঁজতে শুরু করে দিলাম। এমন সময় জানা গেল জার্মানি থেকে আমেরিকায় যাওয়ার একটা রাস্তা আবিষ্কৃত হয়েছে।

তখন জার্মানি থেকে বাহামা যেতে ভিসার প্রয়োজন হতো না। জার্মানি থেকে বাহামা আর বাহামা থেকে দালালের হাত ধরে মায়ামি। কিন্তু বিষয়টা যতো সহজে বলে ফেললাম সত্যিকার অর্থে বাস্তবে তা ছিল খুবই ভয়াবহ। কিন্তু জীবনের বাঁচা-মরা হাতে নিয়েই যেহেতু ঘর থেকে বের হয়েছিলাম তাই এমন আরেকটা ঝুঁকি আমাকে নিতেই হল। বারো’শ ডলারের বিনিময়ে দালালের মাধ্যমে রফাদফা হলো। তারা আমাকে বাহামা থেকে মায়ামি নিয়ে যাওয়ার ভার নিলো। আমাকে আগের থেকেই বলে দেওয়া হলো যে, বাহামা এয়ারপোর্টে নেমেই যেন আমি কালো পোশাক পরে থাকা হাতে লাঠি আছে এমন একজন ব্যক্তিকে খোঁজ করি। কারণ সে আমার জন্য বিমান বন্দরে অপেক্ষা করবে। আমি যথারীতি বাহামায় পৌঁছেই সেই কথিত কালো পোশাক আর লাঠি হাতের মানুষটার খোঁজ করতে শুরু করে দিলাম এবং পেয়েও গেলাম। সে আমাকে ট্রেক্সিতে করে একটা হোটেলে নিয়ে এলো। পরদিন সেখান থেকে সী-প্লেনে চড়ে বাহামার একটি দ্বীপ যার নাম বিমিনি সেখানে পৌঁছে গেলাম। সেই দ্বীপে নেমেই দেখি আমার মতো আট দশজনের বাঙালি। তারাও আমার মতোই একই পথের যাত্রী। একই উদ্দেশ্য। সেখানে আমরা সবাই ফানি নামের এক মহিলার (যিনি এই দালালচক্রের মূল নেতা) বাড়িতে আশ্রয় নেই। ফানি পরদিন ভোরে একে একে আমাদের সবার সাক্ষ্যাৎকার নিলেন। একদিন  আমাদের একটা দল তৈরি করে দিয়ে মায়ামিতে যাওয়ার দিন তারিখ ঠিক হলো। আমাদেরকে বলা হলো যে, আমরা একটা মাছ ধরার ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে করে মায়ামিতে যাবো। কিন্তু শুধুই কি ট্রলারে? মোটেই না। ট্রলারের পাটাতনের নিচে আমাদেরকে গাদাগাদি করে চুপচাপ মরা মানুষের মতো পড়ে থাকতে হবে।

স্পষ্ট মনে আছে, সেদিন ছিলো ১৭ নভেম্বর। আকাশে বড় একটা চাঁদ। আহা! কি সুন্দরই না ছিলো সেই চাঁদের আলো! এক চুমুকে চাঁদের সবকটা আলো দুই চোখ দিয়ে চেটে নিয়েছিলাম। মনে পড়লো বাংলাদেশে ফেলে আসা আমার সেই অসহায় মায়ের কথা। ভাই বোনদের কথা। সবার করুণ স্বপ্নমাখা চোখগুলো আমার উপর যেন নিবদ্ধ। এই সুন্দর জোস্নাখচিত ঝকঝকে আকাশটাকে স্বাক্ষী রেখে আমারা আট জন গাদাগাদি করে বোটের পাটাতনের নিচে ঢুকে গেলাম। জানতাম, যদি ধরা পড়ি তাহলে জেলের বন্দি খাঁচায় সারা জীবন পচে মরতে হবে। তারপরও সাহসী আমাদের যে হতেই হবে। তখন আমার যে কি অনুভূতি হয়েছিল তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না। বারবার মনে হচ্ছিল প্রিয় জন্মভূমির কথা, চোখের সামনে ভাসছিল দেশে ফেলে আসা অসহায় ছোট ছোট ভাই-বোনদের ছবি। ভেসে আসছে বড় ভাই-এর সেই ভালোবাসায় মাখা উপদেশগুলো, মার নরম হাতের স্পর্শ। বার বার কেন যানি মনে হচ্ছিল যে আমাকে যেন কেউ মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আমি যেন মৃত্যুর দিকেই এগিয়ে চলছি। হঠাৎ করেই বিকট আওয়াজ তুলে আমাদের ছোট্ট বোটটা স্টার্ট নিলো। বোট চললো মায়ামির উদ্দেশ্যে সমুদ্রের উথাল-পাতাল ঢেউ কেটে কেটে। কিন্তু দুর্ভাগ্য! কিছুদূর বোটটা যাওয়ার পরই এর ইঞ্জিনটা বিকল হয়ে গেল। ছোট্ট বোটের পাটাতনের নিচে আমাদের তখন আত্মা যায় যায় আর কি! শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল। বোটকা গন্ধ। তখন মনে হচ্ছিল যে, আমরা সবাই যেন মৃত্যু ফাঁদে পা দিয়েছি। মেক্সিকো গাল্ফ এর উত্তাল ডেউয়ের ওপর আমাদের ছোট্ট বোটটা যেন কাগজের নৌকার মতো দুলতে লাগলো। যেকোনো সময় বোটটা উল্টে যেতে পারে এই নিয়ে আমাদের কয়েকবার সতর্ক করে দেওয়া হলো। আমাদের তখন আল্লাহকে ডাকা ছাড়া আর কিছুই ছিলো না। এদিকে আমার সাথে অনেকেই বমি আর প্রস্রাব করে বোটের পাটাতনের নিচে এক বিচ্ছিরি অবস্থা। তারপর সেই কয়েকটা নারকীয় মুহূর্তের কথা ভাষায় আর প্রকাশ করা সম্ভব না। এইভাবে কিছুক্ষণ থাকার পর বোটটা আবার যেন স্টার্ট নিলো।   আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করলাম। তারপর এক নাগাড়ে বোটের ইঞ্জিনের শব্দ, পুরা ডিজেলের ঝাঁঝালো গন্ধ, প্রস্রাব, বমি এইসব কিছু মিলিয়ে আমরা পাটাতনের নিচে আটজন যাত্রী চললাম মায়ামির উদ্দেশ্যে। হঠাৎ কে জানি আমাদের জানালো যে, আমরা মায়ামির কাছাকাছি চলে এসেছি। এদিকে আকাশে হেলিকপ্টারে পুলিশের সার্চ লাইট। সুযোগ বুঝে আমাদের বোটটা ঝোঁপ ঝাড় আছে এমন একটা জায়গা তড়িৎ ভিড়লো। তখন আমাদের গায়ে কারোরই কোনো শক্তি ছিলো না।

একে একে সবাই বোট থেকে কোনোরকম হামাগুড়ি দিয়ে আমরা সমুদ্রের তীরে বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেলাম। তবে বুঝতে পারলাম আমরা আমেরিকার মাটিতে শুয়ে আছি। এভাবে কতক্ষণ ছিলাম মনে নেই। হঠাৎ টের পেলাম যে, সকাল হয়ে গেছে আর আমরা একটা পার্কের মধ্যে সবাই ঘুমাচ্ছি। সকালে উঠে আমি আর আমার এক বন্ধু দুজনেই মায়ামির রাস্তায় সাধারণ মানুষের মতো হাঁটতে শুরু করে দিলাম। এমন সময় দেখি একটা ভেন গাড়ি সেখানে রাফায়েল নামে এক কিউবিয়ান আমাদের দেখে বলছে, ‘ফানি ফানি?’ মানে আমরা ফানির লোক কিনা। আমরা কি বলতে কি বলে আবার কোন বিপদ ডেকে আনি সেই কারণে প্রথমে কোনো কথাই বললাম না। কিছুক্ষণ পর বুঝলাম যে, সে ফানি অর্থাৎ আমাদের দালালের লোক এবং মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বোধক ইশারা করতেই সে আমাদের দুজনকে তাদের গাড়িতে তুলে নিলো এবং আমাদর তথ্য অনুযায়ী ফেলে আসা বাকি সঙ্গীদেরকেও পার্ক থেকে উদ্ধার করলো। পরদিন রাফায়েলের মাধ্যমে আবারো মায়ামি থেকে নিউইয়র্ক এর একটা টিকেট কিনে লাগুয়ার্ডিয়া এয়ারপোর্টে এসে পৌঁছি। এয়ারপোর্ট থেকে চলে আসি ৩০-৫৮ স্টাইনওয়ে স্ট্রিট, এস্টোরিয়ার, নিউইয়র্ক এর একটা বাড়িতে।

সেখানে শুরু হয় আমার আরেক নতুন জীবন। আমেরিকার জীবন। নিউইয়র্কের জীবন। সম্পূর্ণ শূন্য অবস্থায় এক অনাগত স্বপ্নিল ভবিষ্যতের পাখায় ভর করে জীবন শুরু হয়েছিল এখানে। কাগজপত্র নেই, হাতে টাকা-পয়সা নেই, কাউকে চিনি না, জানি না, রাস্তাঘাঁট বুঝি না, মনের জোর নেই। শুরু হয় এখানকার অড জব দিয়ে জীবনের আরেক আয়োজন। সেই জীবন খুব নিষ্ঠুরভাবেই বয়ে চলে। প্রবাস নামক জীবনের কঠিন এই খাঁচায় ধীরে ধীরে হারিয়ে যায় আমার ত্রিশটি বসন্ত। এদিকে দেশের ভাইবোনরা সবাই নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে যায়। গ্রামের মাটির বাড়িতে দোতলা দালান ওঠে। আমিও ধীরে ধীরে পা উঁচু করে দাঁড়াতে চেষ্টা করি এবং দাঁড়াই অন্য আর সবার মতোই। কিন্তু ততোদিনে হারিয়ে যায় আমার অনেক কিছুই। হারিয়ে যায় আমার সেই পরিচিত ‘আমি’। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার সেই হারিয়ে যাওয়া ত্রিশটি বসন্তকে আমি কি আর ফিরে পাবো? কেউ কি কখনো তা আমাকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন? পারবেন কখনো? আমি যে আবার আমার সেই ফেলে আসা অতীতে বারবার ফিরে যেতে চাই! সেই আমার ফেলে আসা ছোট্ট গ্রাম, মায়ের স্নেহমাখা আদরের আচঁল, সেই আমার বাংলাদেশ। এখন আমার নামের আগে ‘প্রবাস’ নামের একটা সুন্দর শব্দ যোগ হয়েছে। মাঝে মাঝে খুব অবাক লাগে। ‘আমি’ কে সেই ফয়জুল যাকে আমি খুব ভালো করে চিনতাম? না, আমি এখন নিজেকেই খুব ভালা করে যেন চিনতে পারি না। আমার এই ‘আমি’টা কোথায় যেন বিলীন হয়ে গেছে। আমি জানি এই প্রবাসী হয়েই আমি হয়তো একদিন এই পৃথিবী থেকে চলে যাবো। অন্য আরো দশটা প্রবাসীর মতোই আমিও যে দুস্বপ্নের যাত্রী! আমাদের এই যাত্রাপথের কি কোনো শেষ সীমানা আছে? আছে কি?

আদনান সৈয়দ: লেখক, প্রাবন্ধিক

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।