ঢাকা, শনিবার, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ৩১ মে ২০২৫, ০৩ জিলহজ ১৪৪৬

মুক্তমত

উই রিভোল্ট: তিনবার তিন ভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন জিয়া

মো. জুবাইর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:১৯, মে ২৯, ২০২৫
উই রিভোল্ট: তিনবার তিন ভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন জিয়া

বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অগ্নিঝরা অধ্যায়ের নাম জিয়াউর রহমান। তিনি শুধু একজন সেনানায়ক নন, বরং এক বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাষ্ট্রনায়ক এবং বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতির অবিস্মরণীয় নায়ক।

১৯৭১ সালের মার্চের উত্তাল দিনগুলোয় যখন পাকিস্তানি বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই ভয়াল রাতে তিনি চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশি জাতির মুক্তির সংগ্রামের ডাক দেন। এ ঘোষণা কেবল একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন নয়, বরং বাঙালির জাতিসত্তার, ভাষার, সংস্কৃতির ও সার্বভৌম অস্তিত্বের দাবির প্রতীক হয়ে ওঠে।

যুদ্ধ শেষে, এক নতুন বাংলাদেশের পুনর্গঠনের সময়, জিয়াউর রহমান তার সাহসিকতা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও জনগণের প্রতি দায়িত্ববোধ দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন। তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), যা একাধারে স্বাধীনতা-সংগ্রামের চেতনা, বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং জাতীয়তাবাদের ভিত্তি নিয়ে গড়ে ওঠে। বিএনপি কেবল একটি রাজনৈতিক দল নয়, বরং বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়ের, আত্মমর্যাদার এবং জনগণের শাসনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক ধারা প্রতিষ্ঠার প্রতীক।

জিয়াউর রহমানের জীবন বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত এবং তার অবদান শুধু এক ব্যক্তির নয়, বরং একটি জাতির আত্মপরিচয় ও স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামেরই প্রতীক।

পেছন ফিরে দেখা
১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি, বগুড়ার বাগবাড়ী গ্রামের এক সাধারণ পরিবারে জন্ম নেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন যুগের সূচনাকারী নেতা জিয়াউর রহমান। বাবা মনসুর রহমান কাজ করতেন কলকাতায় ব্রিটিশ সরকারের দপ্তরে রসায়নবিদ হিসেবে। মায়ের নাম জাহানারা খাতুন। জিয়াউর রহমানের ডাক নাম ছিল ‘কমল’। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে জিয়াউর রহমান ছিলেন দ্বিতীয়। কমল হতে চেয়েছিলেন চিকিৎসক। কিন্তু নিয়তি তাকে নিয়ে যায় এমন এক জায়গায়, যেখানে তিনি ছিলেন শুধু সম্মুখ সারিতে।

কমলের প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু হয় বগুড়ায়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাজনের পর তার পরিবার পশ্চিম পাকিস্তানের করাচীতে পাড়ি জমায়। কমল ভর্তি হন করাচীর একাডেমি স্কুলে। ১৯৫২ সালে তিনি মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন এবং ১৯৫৩ সালে করাচির ডি. জে. কলেজে ভর্তি হন। সেই বছরই কমলের জীবনের মোড় ঘুরতে শুরু করে। কমল জিয়াউর রহমান হয়ে উঠতে শুরু করেন। তিনি কাকুল মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৫৫ সালে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশনপ্রাপ্ত হন। অচিরেই পাকিস্তান আর্মির প্যারাট্রুপার ও কমান্ডো হিসেবে সুপরিচিতি অর্জন করেন। করাচিতে দুই বছর কর্মরত থাকার পর ১৯৫৭ সালে তার পোস্টিং হয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে। এরপর ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা শাখা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সে (আইএসআই) দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬৫ সালের পাকিস্তানের হয়ে ভারতের বিপক্ষে যুদ্ধ করেন জিয়াউর রহমান। খেমকারান সেক্টরে কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে তিনি ও তার অধীন বাঙালি সৈনিকরা অসীম সাহসিকতা দেখান। জিয়া তার বীরত্বের জন্য অর্জন করেন পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সামরিক ‘হিলাল-ই-জুরাত’ খেতাব। তার কোম্পানিকে আরও দুটি সিতারা-ই-জুরাত ও নয়টি তামঘা-ই-জুরাতসহ মোট ১১টি পদক দেয় পাকিস্তান সরকার।

১৯৭০ সালে মেজর হিসেবে তিনি চট্টগ্রামে নবগঠিত অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড নিযুক্ত হন। ১৯৭১ সালের শুরুর দিক পর্যন্তও তিনি পাকিস্তান আর্মির হয়ে কাজ করছিলেন। সে বছর মার্চে পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশের মানুষদের ওপর বর্বর নির্যাতন চালাতে শুরু করে। সে সময় বাংলাদেশের সুপ্রিম লিডার ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চলাইটের নামে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনারা ঘুমন্ত বাংলাদেশিদের ওপর হামলা চালায়। গ্রেপ্তার করে শেখ মুজিবুর রহমানকে। পরদিন ভোরে দেশের রেডিওগুলোয় ভেসে আসে একটি কণ্ঠ- ‘আমি মেজর জিয়া বলছি। ’ এই ভাষণের মাধ্যমেই তিনি হয়ে ওঠেন আজকের জিয়াউর রহমান হিসেবে।

২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে (মতান্তরে ২৫ মার্চ রাতের হত্যাকাণ্ডের পর রাত আড়াইটার মধ্যে) রেডিওতে এই কণ্ঠ ভেসে আসার আগে চট্টগ্রামে বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ছিল ‘জিয়ার বিদ্রোহ’। সংকটময় মুহূর্তে পাকিস্তান আর্মি থেকে বাঙালি জওয়ানদের নিয়ে বিদ্রোহ শুরু করেন জিয়াউর রহমান। ২৫ মার্চ দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বিদ্রোহ শুরুর আগে তিনি বলেছিলেন ‘উই রিভোল্ট’, অর্থাৎ ‘আমরা বিদ্রোহ করছি’। তারপরই আসে সেই মাহেন্দ্র ঘোষণা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন মেজর জিয়া। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে নিজেকে ‘অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও লিবারেশন আর্মির কমান্ডার-ইন-চিফ’ এবং ২৭ মার্চ বিকেলে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন জিয়াউর রহমান।

জিয়ার ভাষণ ও একটি জাতির জেগে ওঠা
কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়া তার ভাষণের শুরুতে কেন্দ্রটিকে ‘স্বাধীন বাংলা বেতার’ ঘোষণা করেন। তিনি তার ভাষণে বলেন, ‘This is Swadhin Bangla Betar Kendra. We are free now. We shall fight to the last to free our motherland from the enemy. We revolt.’ অর্থাৎ, ‘এটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। আমরা এখন মুক্ত। আমরা আমাদের মাতৃভূমিকে শত্রুদের হাত থেকে মুক্ত করার জন্য শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করব। আমরা বিদ্রোহ করেছি। ’ 

চট্টগ্রামের ষোলশহর এলাকায় মেজর জিয়া তার বিদ্রোহের সূচনা করেন পাকিস্তানি অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল জানজুয়াকে হত্যার মধ্য দিয়ে। এই জানজুয়া নিকৃষ্টভাবে নিরীহ বাংলাদেশিদের দমনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। ২৫ মার্চ রাতে মেজর জিয়া জানজুয়াকে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করেন। মধ্যরাতের পর জানজুয়াসহ অন্যান্য বন্দিদের হত্যা করা হয়। এরপর ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ড গ্রহণ করেন জিয়া। তারপর একটি ড্রামের ওপর দাঁড়িয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে নিজ সৈনিকদের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে যাওয়ার নির্দেশ দেন।  

২৬ মার্চ ভোরের দিকে মেজর জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের নেতারা। কালুরঘাট থেকে তাকে চট্টগ্রাম শহরে ফিরে আসার অনুরোধ জানান। কিন্তু মেজর জিয়া সে সময় ক্লান্ত ছিলেন এবং ২৭ মার্চের মধ্যে যুদ্ধ কৌশল নির্ধারণ করে যোগাযোগ করবেন বলে জানান। সে সময় কালুরঘাট বেতারের কর্মীরা জীবন বাঁচাতে বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে ছিলেন। জিয়া তাদের একত্র করে কেন্দ্রে আসার আহ্বান জানান। কালুরঘাট এলাকার স্থানীয়রা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বেতার কেন্দ্রের লোকজনকে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করেন। তারা আসার পর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পর্ব শুরু করেন। জানা যায়, বেতার কেন্দ্রের কয়েকটি ট্রান্সমিটার নষ্ট ছিল। স্থানীয়রা সেগুলোকে খুব দ্রুত ঠিক করেন।  

এই সময়টিতে মেজর জিয়াকে সহায়তাকারী বেশ কয়েকজন সেনা কর্মকর্তার নাম পাওয়া যায়। তারা হলেন ক্যাপ্টেন সাদেক, ক্যাপ্টেন ভূঁইয়া ও ক্যাপ্টেন অলি। তাদের সঙ্গে ছিলেন সেকান্দর হায়াত খান ও সৈয়দুর রহমানসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয়। ২৬ মার্চ সকাল ৭টা ৪৫ নাগাদ জিয়া তার অবিনশ্বর ঘোষণা দেন- I, Major Ziaur Rahman, Provisional President and Commander-in-Chief of Liberation Army do hereby proclaim independence of Bangladesh and appeal for joining our liberation struggle. Bangladesh is independent. We have waged war for the libreation of Banglsdesh. Everybody is requested to participate in the liberation war with whatever we have. We will have to fight and liberate the country from the occupation of Pakistan Army. Inshallah. victory is ours.

অর্থাৎ, ‘আমি মেজর জিয়াউর রহমান, বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং লিবারেশন আর্মির কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি এবং সকলকে আমাদের মুক্তিসংগ্রামে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশ এখন স্বাধীন। আমরা বাংলাদেশের মুক্তির জন্য যুদ্ধ শুরু করেছি। সবাইকে আহ্বান করছি, যার যা কিছু আছে তা নিয়েই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করুন। আমাদের এই দেশকে পাকিস্তানি বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করতে হবে। ইনশাআল্লাহ, বিজয় আমাদের। ’

প্রথম ঘোষণায় জিয়া নিজেকে ‘স্বাধীন বাংলার প্রভিশনাল হেড অব স্টেট’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে, সেনাবাহিনীর একজন কর্মকর্তা হিসেবে এমন ঘোষণা আন্তর্জাতিক মহলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। তা ছাড়া সে সময় আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছিল। শেখ মুজিবের নেতৃত্ব ছিল দুর্বার। জিয়াউর রহমান শেখ মুজিবের গুরুত্ব অনুধাবন করে পরবর্তী ভাষণে তিনি কিছুটা পরিবর্তন আনেন। ২৭ মার্চ তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

জিয়া তার ভাষণে বলেন, ‘This is Swadhin Bangla Betar Kendra. I, Major Ziaur Rahman, on behalf of our great national leader, the supreme commander of Bangladesh, Sheikh Mujibur Rahman, hereby proclaim the independence of Bangladesh. It is further proclaimed that Sheikh Mujibur Rahman is the sole leader of the elected representatives of 75 million people of Bangladesh. I therefore appeal, on behalf of our great leader Sheikh Mujibur Rahman, to the governments of all democratic countries of the world, especially the big world powers and the neighboring countries, to take effective steps to stop immediately the awful genocide that is being carried out by the army of occupation from Pakistan. I also appeal to them to recognize the legally elected representatives of the majority of the people of Bangladesh, as this is a moral struggle and a contradiction in terms which should be resolved. The guiding principles of the new state will be: first, neutrality; second, peace; and third, friendship to all and enmity to none. May Allah help us. Joy Bangla.’

অর্থাৎ, ‘এটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। আমি মেজর জিয়াউর রহমান, বাংলাদেশের মহান নেতা, বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। আরও ঘোষণা করা হচ্ছে যে, শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের ৭ কোটি ৫০ লাখ মানুষের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের একমাত্র নেতা। আমি তাই আমাদের মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক দেশের সরকার, বিশেষ করে বড় শক্তিধর দেশগুলো এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, যেন তারা পাকিস্তানি দখলদার সেনাবাহিনীর ভয়াবহ গণহত্যা অবিলম্বে বন্ধ করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আমি আরও আহ্বান জানাচ্ছি, তারা যেন বাংলাদেশের জনগণের সংখ্যাগরিষ্ঠ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের স্বীকৃতি দেয়, কারণ এটি নৈতিক সংগ্রাম এবং পরিপূর্ণ বিরোধিতা, যা সমাধান করা প্রয়োজন। নতুন রাষ্ট্রের দিকনির্দেশনা হবে: প্রথমত, নিরপেক্ষতা; দ্বিতীয়ত, শান্তি; এবং তৃতীয়ত, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে শত্রুতা নয়। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। জয় বাংলা। ’

মেজর জিয়ার ঘোষণাগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই ঘোষণাগুলো রেডিও অস্ট্রেলিয়া এবং বিবিসির মাধ্যমে প্রচারিত হয়, যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বার্তা পৌঁছে দেয়। তা ছাড়া জিয়ার ঘোষণায় বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে দ্রুত স্বাধীনতার বার্তা ছড়িয়ে পড়ে এবং মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। এই ঘোষণার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধারা সঙ্ঘবদ্ধ হতে সক্ষম হন।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠিত হলে জিয়াউর রহমানকে ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার করা হয়। তিনি চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, রাঙ্গামাটি, ফেনী, মিরসরাই, রামগড় প্রভৃতি এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন। সেনা, ছাত্র, যুবদের একত্রিত করে গঠন করেন ‘জেড-ফোর্স’। এই ফোর্স দেশের প্রথম নিয়মিত সশস্ত্র ব্রিগেড, যা প্রথম, তৃতীয় ও ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সমন্বয়ে গঠিত।

স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক
তবে আওয়ামী লীগের মনে করে, যুদ্ধের প্রস্তুতি ও স্বাধীনতার ঘোষণা আগে থেকেই শেখ মুজিবের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল। তাদের দাবি, শেখ মুজিব ৭ মার্চের ভাষণেই জনগণকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে বলেন। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরু করলে, মুজিব তখনই স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং পাকিস্তানি বাহিনীকে প্রতিরোধের আহ্বান জানান। যুদ্ধের প্রস্তুতি ও পরিচালনার জন্য আগেই আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। জিয়া কেবল শেখ মুজিবের ঘোষণার পক্ষে সমর্থন জানিয়ে বেতারে ঘোষণা দেন।

১৯৭৪ সালের ৫ ডিসেম্বর পিলখানায় তৎকালীন বিডিআরের এক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়ার সময় শেখ মুজিবুর রহমান দাবি করেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে তিনি চট্টগ্রামের ইপিআর (পাকিস্তান আমলে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস) দপ্তরে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘সেই রাতে আমি যখন পিলখানায় যোগাযোগ করার চেষ্টা করি, তখন দেখি পিলখানার দিক থেকে গুলি বর্ষণ হচ্ছে। আমি বাধ্য হয়ে চট্টগ্রামের ইপিআরের দপ্তরের মাধ্যমে বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করি। আমি সেই বার্তাটি পাঠিয়েছিলাম যাতে বাংলার গ্রামে গ্রামে বারুদের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ’

এই বক্তব্যের মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমান ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন, তিনি ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যার সময় চট্টগ্রামে বিদ্রোহের নির্দেশ পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু মূল প্রেক্ষাপট ও তার বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। রফিকুল ইসলাম নামে সেনাবাহিনীর সাবেক এক মেজর যিনি একাত্তরে চট্টগ্রাম ইপিআরের দায়িত্বে ছিলেন এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের রাজনীতি শুরু করেন; তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সেই রাতে (২৫ মার্চ) শেখ মুজিবুর রহমানের কোনো বার্তা বা নির্দেশনা তিনি পাননি। বরং তিনিই রাত সাড়ে এগারোটার মধ্যে চট্টগ্রামের সমস্ত ইপিআরের বাঙালি সদস্যদের নিয়ে সদর দপ্তর ত্যাগ করে রেলওয়ে হিল এলাকায় অবস্থান নিয়েছিলেন এবং সেটিকেই মূল প্রতিরক্ষা ঘাঁটি ও সদর দপ্তর হিসেবে স্থাপন করেছিলেন। মেজর রফিক সেখান থেকেই তার অপারেশন শুরু করেন।

এ থেকে বোঝা যায়, শেখ মুজিবুর রহমানের দাবি ও মেজর রফিকুল ইসলামের বক্তব্য সাংর্ঘষিক। যুক্তি বলছে, শেখ মুজিব যদি কোনো বার্তা দিয়েও থাকেন, সেটি চট্টগ্রাম পৌঁছেনি। ফলে মেজর জিয়া সেটি শোনেননি। তার স্বাধীনতার ঘোষণা ছিল স্বকীয়। ফলে শেখ মুজিবুর রহমানের করা দাবি যে তিনি চট্টগ্রামে বার্তা পাঠিয়েছিলেন, তা আওয়ামী লীগেরই শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বক্তব্যে বিভ্রান্তি বা অসত্য বলে প্রতীয়মান হয়।

জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার পক্ষে দলিল
১৯৭২ সালে কলকাতার আনন্দ পাবলিশার্স থেকে ‘বাংলা নামে দেশ’ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। যেখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেফারেন্স দেওয়া হয়েছে। বইয়ে বলা হয়েছে, ‘মুজিব গ্রেপ্তার হন। সব সংগঠিত বাহিনী বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারের জন্য মেজর জিয়া ২৮ মার্চ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে একটি অস্থায়ী সরকারের ঘোষণা দেন। তিনি সেই সরকারের প্রধান হন। ’

মুক্তিযুদ্ধের ১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর রফিক-উল ইসলাম ও ৩ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর কে এম সফিউল্লাহ তাদের গ্রন্থে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে বলেছেন, ‘মেজর জিয়া প্রথমে নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন, পরে রাজনৈতিক পরামর্শে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে ঘোষণা দেন। ’

মেজর কে এম শফিউল্লাহ ১৯৮৯ সালে তার রচিত, ‘Bangladesh at War’ গ্রন্থটিতে আরও উল্লেখ করেন, ‘২৫ মার্চ রাতে নিজের কমান্ডিং অফিসারের (জানজুয়া) সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে তার ব্যাটালিয়ন নিয়ে শহরের প্রান্তে চলে যান সেগুলো পুনর্গঠন, শক্তিশালীকরণ এবং পরে চট্টগ্রামে এক চূড়ান্ত আক্রমণ চালানোর জন্য। সব সৈন্যদের পটিয়া সংলগ্ন এক স্থানে একত্র করা হয়। এরপর সব সৈন্য বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্যের শপথ নেয়। এই শপথ ২৬ মার্চ বিকেল ৪টায় মেজর জিয়া নিজে নেন। তারপর তিনি ৩৫০ জন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈন্য এবং প্রায় ২০০ জন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের সৈন্যকে বিভিন্ন টাস্ক ফোর্সের মধ্যে ভাগ করে দেন। প্রতিটি টাস্কফোর্সের নেতৃত্বে একজন অফিসার থাকেন। এই টাস্ক ফোর্সগুলো চট্টগ্রাম শহরের জন্য গঠিত হয়েছিল। পুরো শহরকে বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ করা হয় এবং প্রতিটি সেক্টরের জন্য একটি টাস্কফোর্স নিয়োগ করা হয়। এই ব্যবস্থা সম্পন্ন করার পর, ২৬ মার্চ জিয়া প্রথম বেতার ঘোষণা দেন। এই ঘোষণায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের কথা বলার পাশাপাশি, তিনি নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন। অবশ্য এই ঘোষণা মুহূর্তের উত্তেজনা ও বিভ্রান্তির ফল হতে পারে। যখন ব্যাটালিয়ন শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে, ২৭ মার্চ বিকেলে জিয়া কালুরঘাটে স্থাপিত স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে আরেকটি ঘোষণা দেন। এই ঘোষণায় বলা হয়: 

‘আমি, মেজর জিয়া, বাংলাদেশের মুক্তি বাহিনীর অস্থায়ী সর্বাধিনায়ক হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। আমি আরও ঘোষণা করছি, আমরা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি সার্বভৌম, বৈধ সরকার গঠন করেছি, যা আইন ও সংবিধান অনুযায়ী পরিচালিত হবে। নতুন গণতান্ত্রিক সরকার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলবে এবং আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য কাজ করবে। আমি সব সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, বাংলাদেশে চলমান নৃশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে তাদের নিজ নিজ দেশে জনমত গঠনের জন্য। ’

জিয়া আরও বলেন, ‘আমরা কুকুরের মতো মরবো না, বরং বাংলা মায়ের যোগ্য নাগরিক হিসেবে মরবো। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস ও পুরো পুলিশ বাহিনী চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, যশোর, বরিশাল এবং খুলনায় পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাদের ঘিরে ফেলেছে। সেখানে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছে। ’

যুক্তরাষ্ট্রে ডিক্লাসিফাই করা দলিলপত্রে বলা হয়েছে, ‘২৭ মার্চ গোপন বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়ার নেতৃত্বে একটি বিপ্লবী সেনাবাহিনী ও অস্থায়ী সরকারের গঠন ঘোষণা করা হয়। ’

ভারত সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশিত বাংলাদেশের ইতিহাসবিষয়ক ‘ভারত রক্ষক’ শিরোনামের সাইটের ৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জিয়া ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং তিনি বাংলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধানের (Temporary Head of Republic) দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ’

১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তীতে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ জাতির উদ্দেশ্যে একটি বক্তব্য দেন, যা ১১ এপ্রিল ১৯৭১ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত হয়। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমাদের যোদ্ধা বাহিনীর দৃষ্টিনন্দন সাফল্য এবং তাদের সংখ্যায় ও বন্দি করা অস্ত্রশস্ত্রে প্রতিদিন যে বৃদ্ধি হচ্ছে, তা বাংলাদেশের প্রজাতন্ত্র সরকারের একটি পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম কেন্দ্র স্থাপন করার সক্ষমতা দিয়েছে, যা মেজর জিয়াউর রহমানের মাধ্যমে প্রথম ঘোষণা করা হয়েছিল। এই কেন্দ্র থেকে সরকার মুক্ত করা এলাকাগুলো পরিচালনা করছে। ’

জিয়ার দর্শন ও বাংলাদেশি পরিচয়
চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জিয়ার ঘোষণায় বাঙালি পরিচয়ের বাইরে বাংলাদেশি পরিচয়টি বড় হয়ে ওঠে। জিয়াউর রহমান কেবল যুদ্ধের ময়দানে একজন বীর ছিলেন না, তিনি ছিলেন সেই নেতা, যিনি বুঝেছিলেন জাতিগত বিভক্তি আমাদের দুর্বল করে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী অস্থির সময়ে তিনি বাঙালি পরিচয়ের সীমানা পেরিয়ে ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ নামে এক নতুন দর্শন দাঁড় করান। তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা ভাষায় বাঙালি, কিন্তু আমরা সবাই বাংলাদেশি। ’ এই কথা যেন এক বিদ্রোহী হুংকার, যা আজও বাঙালি মনের দেয়ালে লেখা রয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর, জাতি এক গভীর সংকটে নিমজ্জিত হয়েছিল। সেই সময় বন্দী অবস্থায় জিয়াউর রহমান হয়ে উঠেছিলেন প্রতিরোধের প্রতীক। ৭ নভেম্বরের সিপাহি-জনতার বিপ্লব তার বন্দিদশা ভেঙে তাকে রাষ্ট্রনায়কের আসনে বসায়। এখনও সেই দিন ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে এক বিদ্রোহের দিন হিসেবে।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে জিয়া যখন বাংলাদেশের হাল ধরেন, তখন তার মূল লক্ষ্য ছিল জাতীয় ঐক্য, অর্থনৈতিক অগ্রগতি আর জনগণের শক্তি জাগ্রত করা। ১৯৭৮ সালে বিএনপি প্রতিষ্ঠা করে তিনি রাজনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করেন, যেখানে ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি নির্বিশেষে সমমর্যাদার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ছিল স্পষ্ট। তিনি জানতেন, ‘জাতীয়তাবাদ মানে কেবল একক পরিচয় নয়, বরং একটি সমন্বিত সত্তা। ’

এই ধারায় জিয়া নতুন করে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় সত্তা, যেখানে সন্তু লারমার মতো নেতারা বলেন, ‘আমি বাঙালি নই, আমি বাংলাদেশি। ’ শেখ মুজিবুর রহমানের সময়ে উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর ওপর বাঙালি পরিচয়ের চাপ, সেই বিভ্রান্তির দেয়াল ভেঙে, জিয়া এক অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় পরিচয় গড়ে তুললেন।

জিয়ার সময়কালে শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য ও নারীর ক্ষমতায়নে তার উদ্যোগ জাতিকে একটি সমতাভিত্তিক সমাজের স্বপ্ন দেখিয়েছিল। তিনি জানতেন, ‘বৈচিত্র্যে ঐক্য আমাদের শক্তি, এবং এই শক্তি আমাদের অগ্রযাত্রার মূল। ’ ১৯৮১ সালে ঘাতকের বুলেটে তার জীবন শেষ হলেও জাতি তার আদর্শকে বুকে ধারণ করেছে। তিনি শহীদ হওয়ার পর খালেদা জিয়া সেই বিপ্লবের উত্তরসূরি হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে লড়াই চালিয়ে গেছেন, ১৯৯১ সালে দেশকে আবার গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়েছেন।

আজও শহীদ জিয়ার সেই বিদ্রোহী কণ্ঠ বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মশাল হাতে আমাদের মনে করিয়ে দেয়— জাতীয় পরিচয় মানে কেবল ভাষা নয়, কেবল ধর্ম নয়, বরং ইতিহাস, সংস্কৃতি আর বৈচিত্র্যের মধ্যে একতার প্রতীক। এই চেতনা আমাদের শিখিয়েছে, বাংলাদেশ মানে সবাই, বাংলাদেশ মানে একতা, মানবিক মর্যাদা আর ন্যায়বিচারের স্বপ্ন।

জিয়ার বিদ্রোহী আদর্শ আমাদের এখনো প্রেরণা জোগায়— একটি বৈষম্যহীন, সমৃদ্ধ, গর্বিত বাংলাদেশের স্বপ্নে। আমরা যদি সেই আদর্শকে বুকে লালন করতাম, আজ হয়তো আমাদের কোনো বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে হতো না। জিয়ার বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ আমাদের শিখিয়েছে— একতার চেয়ে বড় পরিচয় আর কিছু নেই।

লেখক: সাংবাদিক
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।