ঢাকা, শনিবার, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ৩১ মে ২০২৫, ০৩ জিলহজ ১৪৪৬

মুক্তমত

বহুদলীয় গণতন্ত্র, জাতীয় ঐক্য ও আত্মনির্ভরশীলতা

সাঈদ খান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:০৯, মে ২৯, ২০২৫
বহুদলীয় গণতন্ত্র, জাতীয় ঐক্য ও আত্মনির্ভরশীলতা

প্রাসাদ-রাজনীতি, স্বৈরাচারী রাজনীতি, সামরিক রাজনীতি, গণতন্ত্রের নামে অগণতান্ত্রিক রাজনীতি এবং একদলীয় রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও তার ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্র পরিচালনা করে জনগণকেই করেছেন ক্ষমতার উৎস এবং জনগণের কল্যাণের জন্য নিয়েছেন সব কর্মসূচি, যা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে করেছেন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ- তিনি আর কেউ নন, তিনিই প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য ছিল- গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা।

কিন্তু স্বাধীনতার পরবর্তী সাড়ে তিন বছরের বাস্তবতা ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা, সংঘাত এবং বিভাজনের নির্মম ইতিহাস। এই সংকটময় সময়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে, জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে এবং রাষ্ট্রকে পুনর্গঠনের প্রয়োজনে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধারণ করে একটি বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে কাজ করেন। তিনি বিভাজনের রাজনীতির পরিবর্তে ঐক্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠার জন্য উৎপাদন ও উন্নয়নের রাজনীতিকে রাষ্ট্রদর্শন হিসেবে গ্রহণ করেন।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে কে মুক্তিযোদ্ধা, কে পাকিস্তানপন্থী, কে দেশপ্রেমিক- এই বিতর্কে রাষ্ট্রে বিভাজন তীব্র হয়। এই সংকট উত্তরণে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ নামে একটি নতুন রাষ্ট্রদর্শন উপস্থাপন করেন। এই জাতীয়তাবাদ ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় সহনশীলতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সমন্বয়ে গঠিত ছিল, যা সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে একত্রিত করে একটি  বৈষম্যহীন ন্যায়ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র নির্মাণের পথ দেখায়। এই ধারণার মাধ্যমে তিনি পূর্ববর্তী সংকীর্ণ জাতিগত ও রাজনৈতিক বিভাজনকে অতিক্রম করে জাতির জন্য একটি বিস্তৃত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিচয়ের ভিত্তি গড়ে তোলেন।

বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ কেবল একটি রাজনৈতিক তত্ত্ব নয়; এটি ছিল এক অনন্য রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক রসায়ন, যার মাধ্যমে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভবপর হয়। এখানে কোনো গোষ্ঠী বা শ্রেণি বিশেষ সুবিধা পায় না; বরং সবাই রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির অংশীদার হয়। এই দর্শন ছিল শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সম্প্রীতির ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র গঠনের প্রয়াস।

জিয়াউর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন, ভাষা যদি একটি ফুল হয়, ধর্ম আরেকটি ফুল। ধর্ম, ভাষা, সাহিত্য-সংস্কৃতি, ইতিহাস, ভূগোল, অর্থনীতি এবং মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ফুল নিয়ে যে তোড়া বেঁধেছি- সেটিই বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। তাঁর দৃষ্টিতে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা কেবল রাজনৈতিক মুক্তির জন্য ছিল না; বরং এটি দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং জাতিগত পরিচয় রক্ষার সংগ্রামও ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন, জাতীয়তাবাদ এবং সংস্কৃতি একে অপরের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। এই বিশ্বাস থেকেই তিনি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে একটি আধুনিক, বৈচিত্র্যপূর্ণ এবং ঐক্যবদ্ধ সমাজ গঠনের হাতিয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর এই রাষ্ট্রদর্শনে সকল নাগরিকের জন্য সমান অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করার অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়।

জাতীয় ঐক্য গঠনের ক্ষেত্রে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা ছিল দৃঢ় ও দূরদর্শনাপূর্ণ। স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভাজনের সময় তিনি সকল শ্রেণি-পেশার মানুষকে একত্রিত করার জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী, ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, সামরিক ও বেসামরিক- সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তিনি একটি বিস্তৃত জাতীয় প্ল্যাটফর্ম গঠনের চেষ্টা করেন। তার লক্ষ্য ছিল বাস্তবভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি জাতীয় ঐক্য, যেখানে ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি নির্বিশেষে সবাই রাষ্ট্র নির্মাণে সমানভাবে অংশ নিতে পারে।

ধর্মীয় সহনশীলতা ও সামাজিক সাম্যের প্রতি তার অঙ্গীকার দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভিতকে মজবুত করে। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান- সব সম্প্রদায়ের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান ও সহাবস্থান বজায় রাখতে তিনি আন্তরিকভাবে কাজ করেন, যা সকল জাতিগোষ্ঠীর রাষ্ট্র নির্মাণের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।

অর্থনৈতিক খাতে তিনি গ্রহণ করেন গ্রামকে শহর বানান কর্মসূচি, যার মাধ্যমে স্থানীয় জনগণকে উন্নয়ন প্রক্রিয়ার অংশীদার করা হয়। খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্পায়ন, রপ্তানি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় তিনি অংশগ্রহণমূলক নীতি অনুসরণ করে দেশের অর্থনীতিকে এক নতুন গতিতে এগিয়ে নিয়ে যান।

আন্তর্জাতিক পরিসরে তিনি পূর্ব ও পশ্চিম-উভয় ব্লকের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বাংলাদেশকে জাতিসংঘ, ওআইসি ও ন্যাম-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থায় মর্যাদাপূর্ণ স্থানে প্রতিষ্ঠা করেন। শান্তিপ্রিয় ও বন্ধুত্বপূর্ণ কূটনীতি তার পররাষ্ট্রনীতির মূল চেতনা ছিল।

জিয়াউর রহমানের বিশ্বাস ছিল, স্বাধীনতা কেবল রাজনৈতিক নয়, বরং অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আত্মনির্ভরতার বিষয়। তিনি বলেন, স্বাধীনতা মানে শুধু একটি পতাকা নয়, এটি আত্মমর্যাদা ও স্বনির্ভরতার প্রতীক। বিদেশি সহায়তার ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতাকে তিনি আত্মসম্মানের পরিপন্থি মনে করতেন। তাই নিজস্ব সামর্থ্যের ওপর ভিত্তি করে তিনি আত্মনির্ভরশীল রাষ্ট্র গঠনের আপ্রাণ চেষ্টা করেন।

তার নেতৃত্বের মূল বৈশিষ্ট্য ছিল আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও কর্মনিষ্ঠা। তিনি বিশ্বাস করতেন, দেশ আগে, আমি পরে। কথার চেয়ে কাজে বিশ্বাসী এই নেতা প্রশাসনিক স্থিতিশীলতার পর ধাপে ধাপে রাজনৈতিক পরিবেশ উন্মুক্ত করে জাতীয়তাবাদের একটি নবতর রূপ উপস্থাপন করেন- যার ভিত্তি ছিল গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও জাতীয় ঐক্য। বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি গঠন এবং একটি আধুনিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রের পথরেখা তৈরি- এসবই জিয়াউর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ফসল। এটি শুধূ রাজনৈতিক পুনর্জাগরণের ঘটনা নয়, বরং বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গৌরবময় মোড় পরিবর্তনের অধ্যায়।

জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রদর্শনে সার্বভৌমত্ব শুধু ভূখণ্ডের নিরাপত্তা নয়; এটি ছিল রাজনৈতিক স্বনির্ভরতা, অভ্যন্তরীণ নীতিতে বিদেশি হস্তক্ষেপমুক্ততা এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আত্মমর্যাদাসম্পন্ন অবস্থান নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি। তার বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ দর্শনের মূলে ছিল একটি জাতির নিজস্ব ইতিহাস, সংস্কৃতি ও জনগণের চাহিদার ভিত্তিতে পথ খুঁজে নেওয়ার প্রত্যয়- যেখানে বাইরের শক্তির নয়, দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষাই হবে রাষ্ট্র পরিচালনার মূল প্রেরণা।

অর্থনৈতিক পরিসরে তিনি আত্মনির্ভরতা ও উৎপাদনমুখী অর্থনীতির ওপর জোর দেন। আন্তর্জাতিক সাহায্যের ওপর অতিনির্ভরতা যে আত্মমর্যাদা হ্রাস করে এবং একটি জাতিকে দুর্বল করে তোলে- এই উপলব্ধি থেকেই জিয়া সরকার কৃষি বিপ্লব, স্বনির্ভর শিল্পায়ন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহ প্রদান, প্রবাসী আয়ের প্রসার ও পল্লী অর্থনীতির বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে এক কার্যকর বিকল্প পথ তৈরি করে।

তার নেতৃত্বে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা পায় একটি অন্তর্ভুক্তিমূল রাষ্ট্রচিন্তা- যেখানে ধর্ম, ভাষা, অঞ্চল, পেশা বা শ্রেণি নির্বিশেষে সকল নাগরিকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ কেবল ভাষাভিত্তিক পরিচয়ের সংকীর্ণতা অতিক্রম করে ভূগোল, ইতিহাস ও সংস্কৃতির সমন্বয়ে রাষ্ট্রের একটি নতুন পরিচয় নির্মাণ করে, যা সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষকে রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ প্রদান করে। ধর্মীয় সহনশীলতা ছিল তাঁর দর্শনের অন্যতম স্তম্ভ। সকল ধর্মাবলম্বীর পারস্পরিক সম্মান ও সহাবস্থানের পরিবেশ নিশ্চিত করে তিনি একটি শান্তিপূর্ণ, বহুমাত্রিক সমাজ গঠনের ভিত্তি স্থাপন করেন।

গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তার অবদান ছিল মৌলিক ও সময়োপযোগী। স্বাধীনতার পর যখন একদলীয় শাসনব্যবস্থায় জনগণের রাজনৈতিক অধিকার সংকুচিত হয়ে পড়ে, তখন জিয়াউর রহমান গণভোট, রাষ্ট্রপতি ও সংসদ নির্বাচন আয়োজন করে জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেন। পাশাপাশি সংবাদপত্র ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তিনি বহুদলীয় ও বহুবচনভিত্তিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির পথ সুগম করেন।

আজকের বাস্তবতায়, যখন গণতন্ত্র সংকুচিত, মতপ্রকাশ বাধাগ্রস্ত এবং জাতীয় ঐক্য প্রশ্নবিদ্ধ- তখন জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রচিন্তা একটি সময়োপযোগী, প্রয়োজনীয় ও অনুপ্রেরণাদায়ী দিকনির্দেশনা হয়ে ওঠে। তার বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ কোনো একক দলের নয়, বরং রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও অংশগ্রহণমূলক দর্শন- যার ভিত্তিতে নাগরিকগণ দায়িত্ব গ্রহণ করে ভবিষ্যতের রাষ্ট্র নির্মাণে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে।

২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি অনন্য ও যুগান্তকারী ঘটনা। একদলীয় কর্তৃত্ববাদ, অনির্বাচিত শাসন এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ কেবল প্রতিবাদের রূপ নেয়নি, বরং একটি বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, জবাবদিহিমূলক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামোর প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরে। তবে সেই অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতায় গঠিত ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জাতীয় ঐক্য এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় প্রত্যাশিত নেতৃত্ব দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। যদিও এই সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব সীমিত, তবুও রাজনৈতিকভাবে এর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কেবল নির্বাচন আয়োজন নয়, একটি অংশগ্রহণমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক পরিবেশ তৈরি করাও তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের উচিত দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব একটি গ্রহণযোগ্য এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা। জনগণ তাদের অধিকার প্রয়োগের জন্য প্রস্তুত- এখন প্রয়োজন সরকারের উদ্যোগ। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার মাধ্যমে সরকার জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারে।

সর্বাধিক উদ্বেগজনক বিষয় হলো- এই অনির্বাচিত সরকার কৌশলগত ও নিরাপত্তা-সংক্রান্ত বিষয়ে স্থায়ী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। করিডোর নীতি, বন্দর ব্যবস্থাপনা কিংবা বিদেশি কোম্পানির হাতে কৌশলগত খাত হস্তান্তর ভবিষ্যৎ সরকারের জন্য অযাচিত বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থি।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যথার্থভাবে বলেছেন, এই সরকারের আইনগত বৈধতা না থাকায় কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ গ্রহণযোগ্য নয়। জাতীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় কেবল একটি নির্বাচিত ও জবাবদিহিমূলক সরকারের মাধ্যমেই নির্ধারিত হওয়া উচিত।

বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত রাষষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান একটি বাস্তববাদী ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছিলেন, যা আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের অবস্থানকে সুসংহত করেছিল। তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ছিল- সহায়তা নেওয়া যেতে পারে, তবে তা হতে হবে শর্তসাপেক্ষ ও আত্মমর্যাদাপূর্ণ। বর্তমান সরকারের একতরফা সিদ্ধান্ত সেই নীতির পরিপন্থি।

জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার বাগবাড়ী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে দ্বিতীয়। ১৯৫২ সালে করাচি একাডেমি স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করার পর ১৯৫৫ সালে কাকুল মিলিটারি একাডেমি থেকে কমিশন লাভ করেন। এরপর ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে বদলি হন। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে খেমকারান সেক্টরে বীরত্বের জন্য সম্মানিত হন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি জেড ফোর্স গঠন করেন এবং ১ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। স্বাধীনতা-উত্তর ৭২ সালে সেনাবাহিনীতে উচ্চ পদে দায়িত্ব না নিয়ে তিনি সৈনিক জীবনে ফিরে যান।

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন। ১৯৭৭ সালে তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন এবং ১৯৮১ সালে নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি হন। ওই বছর ৩০ মে, চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে এক চক্রান্তের মাধ্যমে তিনি শহিদ হন।

লেখক: সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক, সাংগঠনিক সম্পাদক- ডিইউজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।