মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৫২তম বার্ষিকী ১৬ ডিসেম্বর। ডিসেম্বর মাস মানেই বিজয়ের মাস।
পাকিস্তান নামে যে দেশটির সৃষ্টি হয়েছিল ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট, ২৪ বছর ধরে সংগ্রাম করে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষকে স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিলেন যে মানুষটি, তিনি হলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যতদিন বাংলার আকাশে চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারা রইবে, যতদিন বাংলার মাটিতে মানুষ থাকবে, ততদিন মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অমর স্মৃতি বাঙালির মানসপটে চির অম্লান থাকবে।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরই বঙ্গবন্ধু উপলব্ধি করেছিলেন যে, এ পাকিস্তান বাঙালিদের জন্য হয়নি। তাই দুটি লক্ষ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করেছেন, একটি হচ্ছে স্বাধীনতা এবং অন্যটি হল বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত্তি বলতে কিছুই ছিল না। প্রতিটি গ্রাম ছিল বিচ্ছিন্ন, বৃহত্তর অর্থনীতির সঙ্গে প্রায় সংযোগবিহীন। বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৮৪ শতাংশ দরিদ্র ছিল এবং সে সময়ে শুধু আফ্রিকার দরিদ্রতম দেশ বুরকিনা ফাসোর চেয়ে এগিয়ে ছিল।
মাত্র ৫২ বছরে বাংলাদেশে যে বিষ্ময়কর উন্নতি ঘটেছে তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। সত্তরের দশকে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ যখন যাত্রা শুরু করে তখন রাস্তাঘাট, রেল, বিমানবন্দর, শিল্প-কারখানাসহ সব অবকাঠামোই ছিল বিধ্বস্ত। ১৯৭২ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল মাত্র ৮০ মার্কিন ডলারের মতো, সঞ্চয়ের হার জিডিপির ৩ শতাংশ, বিনিয়োগের হার জিডিপির ৯ শতাংশ, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বিদেশি মুদ্রার মজুদ ছিল প্রায় শূন্য।
তথাপি স্বাধীনতার তিন বছরের মধ্যে বাংলাদেশ পাক-হানাদার বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞ থেকে উঠে দাঁড়াতে সক্ষম হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পরাজিত দোসর খুনী মোশতাক-রশিদ-ফারুক-ডালিম চক্র স্বপরিবার বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করল। আমরা অকৃতজ্ঞ জাতি। আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টাকে কত নির্মমভাবে হত্যা করা হল। জাতির জনকের বাসভবনে রক্তের বন্যা বইয়ে দেওয়া হলো। শিশু রাসেলের কান্নাও ঘাতকদের হৃদয় স্পর্শ করেনি। শুধু তাই নয়, ঘাতকের দল তাঁর কবর তিন মাস পর্যন্ত পাহাড়া দিয়েছে।
আজ বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে নেই। টুঙ্গিপাড়ার নিভৃত পল্লীতে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। আর কোনোদিন আসবেন না। কিন্তু তাঁর রক্ত ও চেতনার যোগ্য উত্তরসূরী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। পদ্মা সেতু, পায়রা সমুদ্রবন্দর, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ ইত্যাদি অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এ ঐকান্তিক কামনা।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।