ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

ব্যর্থদের নতুনভাবে পুরোনো ষড়যন্ত্র

ড. সেলিম মাহমুদ, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৩
ব্যর্থদের নতুনভাবে পুরোনো ষড়যন্ত্র

ফৌজদারি মামলা, বিচারিক প্রক্রিয়া ও বিচারে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে ড. ইউনূস বহির্বিশ্বে তার নোবেল লরিয়েট কমিউনিটির বন্ধুবর্গ, কিছু অবসরপ্রাপ্ত রাজনীতিবিদ ও সেলিব্রেটির বিবৃতির মাধ্যমে নিজেকে বিচারের বাইরে রাখার চেষ্টা করছেন। এর পাশাপাশি আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারবিরোধী দেশি-বিদেশি একটি গোষ্ঠী নতুনভাবে পুরোনো ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।

এই বিবৃতির প্রক্রিয়াটি লবিস্টের মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার বিনিময়ে করা হয়েছে। এই সেলিব্রেটিদের বিবৃতি এবং এ সম্পর্কিত ষড়যন্ত্র অচিরেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। কারণ বিবৃতিটি বাংলাদেশের সংবিধানসহ পৃথিবীর সকল সভ্য দেশের সংবিধানের লঙ্ঘন। বিবৃতিতে একজন বিশেষ ব্যক্তিকে আদালতের বিচারের বাইরে রাখার বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার ফলে বিবৃতিটি আইনি ও নৈতিকভাবে এর গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। এছাড়া একই বিবৃতিতে আগামী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়টি উল্লেখ করায় এটি যে দূরভিসন্ধিমূলক তা বলার অপেক্ষা রাখে না।  

সারা পৃথিবীকে বোকা বানিয়ে ড. ইউনূস লবিস্টের মাধ্যমে নিজেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা দেখিয়ে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। অথচ গ্রামীণ ব্যাংক ১৯৮৩ সালে রাষ্ট্রপতির অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত একটি সংবিধিবদ্ধ সরকারি প্রতিষ্ঠান। আর ড. ইউনূস ছিলেন সেই প্রতিষ্ঠানে সরকার নিযুক্ত ও বেতনভুক্ত এমডি। গ্রামীণ ব্যাংক আইন অনুযায়ী এমডির বয়স সীমা ৬০ বছর। অথচ ড. ইউনূস ৭০ বছর পর্যন্ত এমডির পদ দখল করে রেখেছিলেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো সরকারি পদ (স্বৈরশাসক ছাড়া) এরকম বেআইনি ও ন্যক্কারজনকভাবে দখল করে রাখার নজির আর দ্বিতীয়টি নেই। আইন অনুযায়ী তাকে সরকার অব্যাহতি দিয়েছিল। আইন লঙ্ঘন করে ওই পদে থাকার জন্য তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। সেই মামলায় তিনি হেরেছেন। তার বিরুদ্ধে বিশাল অংকের অর্থ পাচারের অভিযোগ রয়েছে। অর্থ পাচারে লিপ্ত থাকার কারণেই এমডি পদ আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করেছেন তিনি।  

ড. ইউনূস ২০০৭ সালে রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। দুর্নীতি ও শোষণ ছাড়া এদেশের নানা ক্রান্তিকালে, মানুষের প্রয়োজনে তাকে পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করলে এদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিটি মানুষ তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।  

ড. ইউনূস বিদেশে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। বিদেশে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন। বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য লবিস্টদের মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার দিয়েছেন। এই টাকা এদেশের গরিব মেহনতী মানুষের রক্ত চুষে আহরণ করা হয়েছে। এদেশের মানুষের কাছে তিনি গরিবের রক্তচোষা হিসেবেই পরিচিত।  

পশ্চিমা বিশ্বে স্বার্থের দ্বন্দ্ব বা কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ কে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল। এটি সকলেরই জানা যে, ড. ইউনূস বাংলাদেশের পদ্মা ব্রিজের অর্থায়ন বন্ধ করতে সফল হয়েছিল হিলারি ক্লিনটনের সহায়তায়। পদ্মা ব্রিজের জন্য বিশ্বব্যাংকের সহায়তা বন্ধ হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে সারা পৃথিবীকে অবাক করে দিয়েছিল। বিশ্ব মোড়লদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থে শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সেটি বিশ্ব ব্যবস্থায় উন্নয়নশীল বিশ্বের পক্ষে এক ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করেছে।  

ইউনূস যে ব্যক্তি স্বার্থে লবিস্টদের মাধ্যমে নানা কর্মকাণ্ডে যুক্ত, শুধু বাংলাদেশ নয় যুক্তরাষ্ট্রেও সর্বোচ্চ পর্যায়ে এই অভিযোগ উঠেছে। গত রিপাবলিকান প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের তৎকালীন জুডিশিয়ারি কমিটির প্রধান সিনেটর চুক গ্রাসলি যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট রেক্স টিলারসনের কাছে অভিযোগ করেছিলেন যে, ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ এবং ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের ডোনার ইউনূসকে সাবেক সেক্রেটারি অব স্টেট হিলারি তার দায়িত্বে থাকা অবস্থায় সুবিধা দিয়েছেন যা কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের মধ্যে পড়ে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২৩
নিউজ ডেস্ক 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।