ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

মুক্তমত

শুধু এক প্রতিষ্ঠানেই ড. ইউনূসের হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি

নিউজ ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৯ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২৩
শুধু এক প্রতিষ্ঠানেই ড. ইউনূসের হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি

ড. ইউনূসের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র গ্রামীণ টেলিকমেই প্রায় এক হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।  

ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণসহ প্রকাশিত হয়েছে কীভাবে ড. ইউনূস দেশের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকম থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা কয়েক হাত ঘুরে সামাজিক ব্যবসার নামে বিদেশে পাচার করেছেন! 

কীভাবে শ্রমিক কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য আদালতে বিচারাধীন মামলার রায় নিজের পক্ষে আনার লক্ষ্যে বিচারকসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ঘুষ দেওয়ার জন্য একটি দালালচক্রের সঙ্গে ঘৃণ্যতম চুক্তি করেছেন! 

বাংলাদেশের অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন এবং দণ্ডবিধি অনুযায়ী এসব কাজ গুরুতর দণ্ডনীয় অপরাধ।

ড. ইউনূসের অর্থ পাচার, দুর্নীতি ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ‌

এবার তার বিস্ময়কর কর ফাঁকির অপরাধের ঘটনা সংশ্লিষ্ট সবাইকে হতবাক করেছে। ব্যাপকতা, গভীরতা ও অপরাধের অভিনবতা বিবেচনায় এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কর ফাঁকির ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ‌‌

১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে গ্রামীণ টেলিকম তথা গ্রামীণফোনের লাইসেন্স গ্রহণ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। লাইসেন্স গ্রহণের আগে তিনি সরকারের কাছে অঙ্গীকার করেছিলেন গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তিনি গ্রামীণফোনের লাইসেন্স নিতে চাচ্ছেন।

অঙ্গীকার করেছিলেন কোনো মুনাফার জন্য নয় বরং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে সেবা প্রদানই হবে এই প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য।  

মূলত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গ্রামীণ টেলিকমের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। লাইসেন্স গ্রহণকালে দেশের দরিদ্র মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের অঙ্গীকার করলেও ড. ইউনূস দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শুধু নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য যা যা করণীয় তার প্রতিটিই করেছেন। দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে গ্রামীণফোনের অধিকাংশ শেয়ার বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দিয়েছেন।  

গ্রামীণ টেলিকম বর্তমানে গ্রামীণফোনের ৩৪.২০ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার যার মাধ্যমে গ্রামীণ টেলিকম প্রতিবছর গ্রামীণফোন থেকে হাজার কোটি টাকার উপর ডিভিডেন্ড পায়। কোম্পানি আইনের ২৮ ধারায় গঠিত এই  অলাভজনক কোম্পানির কোন শেয়ার মূলধন নেই, কোন ব্যক্তি মালিকানা নেই ।  

আইন অনুযায়ী এর কোনো ডিভিডেন্ট অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে হস্তান্তরের সুযোগ নেই।  

অথচ ড. ইউনূস প্রতিবছর গ্রামীণ টেলিকমের হাজার কোটি টাকার উপর ডিভিডেন্ট সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে কয়েক হাত ঘুরিয়ে সামাজিক ব্যবসার নামে বিদেশে পাচার করে আত্মসাৎ করছেন। ড. ইউনূসের এই অপরাধ অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী গুরতর দণ্ডনীয় অপরাধ।  

গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি আইন ১৯৯৪ -এর ধারা ২৮ এবং ২৯ এর বিধান লঙ্ঘন করে গ্রামীণ ফোন লিমিটেড থেকে গ্রামীণ কল্যাণকে তার লভ্যাংশ আয়ের ৪২.৬ শতাংশ বিতরণ করে আসছে যদিও গ্রামীণ কল্যাণ গ্রামীণ ফোন লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডার নয়৷ 

আইন অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের সমগ্র লভ্যাংশ আয়কে এর আয় হিসাবে বুক করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট আর্থিক বছরের জন্য প্রযোজ্য করপোরেট হারে কর দিতে হবে।  

কিন্তু তাদের নিরীক্ষিত হিসাব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা গ্রামীণ টেলিকম থেকে গ্রামীণ কল্যাণকে তাদের লভ্যাংশ আয়ের প্রায় অর্ধেক প্রদান করেছে শুধুমাত্র অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ১০-২০ শতাংশ হারে। অথচ আইন অনুযায়ী তাদের জন্য প্রযোজ্য করপোরেট করের হার ছিল ৩৫ শতাংশ থেকে ৩৭.৫ শতাংশ পর্যন্ত।  

এই করপোরেট হার এবং ডিভিডেন্ড ট্যাক্সের পার্থক্য কর ফাঁকি কারণ গ্রামীণ কল্যাণ প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোনোভাবেই  গ্রামীণ টেলিকসের লভ্যাংশ আয়ের অধিকারী নয়।  

গ্রামীণ টেলিকম শুরু থেকে যে সকল কর ফাঁকি দিয়েছে সেগুলো যোগ করলে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় এক হাজার কোটি টাকা।  

এই কর ফাঁকির হিসাব শুধুমাত্র গ্রামীণ টেলিকমের। ড. ইউনূসের নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান এবং তার ব্যক্তিগত আয়করের ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে কর ফাঁকির ঘটনা অনেকটা স্বাভাবিক নিয়মের মতোই বহু বছর ধরে ঘটেছে। ‌‌ 

ড. ইউনূস নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কর ফাঁকির ঘটনাসমূহ হিসাব করলে এর পরিমাণ দাঁড়াবে বিশাল অংকের।  

গ্রামীন টেলিকমের ২৬ বছরের কার্যক্রম চলাকালীন প্রায় এক হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দেওয়া হয়। এই দীর্ঘ সময়ে ড. ইউনূস প্রতিবছর শতকরা ১৫ থেকে ২৫ ভাগ পর্যন্ত কর ফাঁকি দিয়ে আসছেন।  

১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গ্রামীণ টেলিকমে ড. ইউনুস ২৫ শতাংশ কর ফাঁকি দিয়েছেন। ওই সময়ে কর ছিল ৩৫ শতাংশ, প্রদান করেছিলেন মাত্র ১০ শতাংশ।  ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানে ড. ইউনূস কর ফাঁকি দিয়েছেন বছরে ২০ শতাংশ।  

ওই সময়ে কর ছিল ৩৫ শতাংশ, প্রদান করেছিলেন মাত্র ১৫ শতাংশ।  ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ড. ইউনূস নিয়ন্ত্রিত গ্রামীণ টেলিকমে প্রতিবছর ১৫ শতাংশ কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে কর ছিল ৩৫ শতাংশ, আর প্রদান করেছিলেন মাত্র ২০ শতাংশ।  

এটি লক্ষণীয়,  ড. ইউনূস তার কর ফাঁকির বিষয়গুলো ধামাচাপা দিতে দেশের আদালতে বেশ কয়েকটি মামলা ও রিট পিটিশন দায়ের করে রেখেছেন। এসব মামলা ও রিটের উদ্দেশ্য হচ্ছে কর ফাঁকি সংক্রান্ত বিষয়ে ইউনূসকে যেন আইনের মুখোমুখি হতে না হয়।  

ড. ইউনূসের কর সংক্রান্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার কর ফাঁকির বিষয়গুলো দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তার কর ফাঁকির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ পরিচালিত তদন্তে এটি সন্দেহাতীত প্রমাণিত হয়েছে যে, ড. ইউনূস নিজে এবং তার  নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো তার নির্দেশনাতেই কর ফাঁকির অপরাধে জড়িত।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৫ ঘণ্টা, মে ২২, ২০২৩
এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।