পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘পার্থিব ভোগ্য সামগ্রীতে একে অন্যের ওপর আধিক্য লাভের বাসনা তোমাদের উদাসীন করে রাখে। যতক্ষণ না তোমরা কবরে পৌঁছ।
অল্পতে তুষ্ট হওয়ার গুণ অর্জন একটু কঠিনই বটে। কারণ মানুষের চাহিদার অন্ত নেই। আমৃত্যু তা পূরণে ব্যস্ত থাকে সে। তার সীমাহীন এ চাহিদার অবসান ঘটাতে পারে শুধু কবরের মাটি।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো আদম সন্তানের অধীনে যদি দুই উপত্যকা ভর্তি স্বর্ণ থাকে, তবু সে তৃতীয় একটি স্বর্ণ ভর্তি উপত্যকা অর্জনের ইচ্ছা করবে। মাটি ব্যতীত অন্য কিছুই তার মুখ ভর্তি করতে পারবে না। ’ (তিরমিজি, হাদিস ২৩৩৭)
বিলাসিতা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও অতিভোগে শান্তি-স্বস্তি নেই। সীমাতিরিক্ত বিলাসী জীবন মুমিনের অন্তর থেকে আল্লাহভীতি দূর করে দেয়। ইবাদতের আগ্রহ নষ্ট করে ফেলে। মানুষকে চরম হতাশাগ্রস্ত করে তোলে। অল্পতে তুষ্টিতেই কল্যাণ ও সফলতা নিহিত।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলামের দিকে হেদায়েতপ্রাপ্ত হয়েছে, যাকে প্রয়োজন মাফিক রিজিক প্রদান করা হয়েছে এবং যে তাতেই পরিতুষ্ট থাকে, সে-ই সফলকাম হয়েছে। (ইবনে মাজাহ, হাদিস ৪১৩৮)
অল্পতে তুষ্টি অর্জনের কয়েকটি পন্থা
অল্প সম্পদে তুষ্ট থাকার জন্য প্রয়োজন আল্লাহ তাআলার প্রতি দৃঢ় আস্থা ও বিশ্বাস। অন্তরে এ বিশ্বাস বদ্ধমূল করা যে আল্লাহ তাআলা একজন বান্দার রিজিক তার মায়ের গর্ভে অবস্থানকালেই নির্ধারণ করে দেন। যেমন রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মায়ের গর্ভে একজন ফিরিশতা প্রেরণ করা হয়, সে নবজাতকের মধ্যে আত্মা ফুঁকে দেয়। এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে চারটি অধ্যাদেশ জারি করে।
১. সে কী পরিমাণ রিজিক পাবে।
২. তার দুনিয়াতে অবস্থানকাল কতটুকু।
৩. তার আমল কেমন হবে।
৪. সে সৌভাগ্যবান না দুর্ভাগা। (বুখারি, হাদিস ৭৪৫৩)
অল্পে তুষ্টি অর্জনের জন্য চাই মানসিক শক্তি বৃদ্ধি। যেকোনো দুঃখ-কষ্ট ও অভাব-অনটনে মনোবল অটুট রাখা। সব সময় হৃদয়ে প্রশস্ততা অনুভব করা। কেননা ধনাঢ্যতা ও দারিদ্র্যতা মানুষের মনের ওপর নির্ভর করে। তাই রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রকৃত ধনী আত্মার ধনী। (বুখারি, হাদিস ৬৪৪৬)
অল্পে তুষ্টি অর্জনের আরেকটি পন্থা হলো, সব সময় নিজের চেয়ে নিম্নমানের লোকের দিকে লক্ষ করা। এতে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ জাগ্রত হয়। লোভ-লালসা ও হতাশা দূর হয়। এ জন্যই রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নিজের চেয়ে নিম্নমানের লোকের দিকে লক্ষ করো। নিজের চেয়ে বেশি আছে যার আছে, তার প্রতি নয়। কারণ এতে বেশি সঞ্চয়ের লোভ অন্তরে জেঁকে বসে। (বুখারি, হাদিস ৬৪৯০)
আরেকটি পন্থা হলো, সম্পদ অর্জনে পরকালীন জবাবদিহিতা অন্তরে লালন করা। সম্পদ যেন কোনোভাবেই অবৈধ পথে অর্জিত না হয় কিংবা সম্পদে কোনোরূপ হারামের সংমিশ্রণ না ঘটে এদিকে সতর্ক ও সচেতন থাকা। অন্যথায় এ সম্পদই কাল কিয়ামতে মহাবিপদ হয়ে দাঁড়াবে।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, চারটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে কোনো আদম সন্তান নিজের জায়গা থেকে একচুল পরিমাণও অগ্রসর হতে পারবে না। তন্মধ্যে তৃতীয়টি হলো—সম্পদ কোত্থেকে উপার্জন করে কোথায় ব্যয় করা হলো। (তিরমিজি, হাদিস ২৪১১)
চলমান সংকটকালীন মুহূর্তে আমাদের অল্পে তুষ্টির মনোভাব সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। আল্লাহর প্রতি আস্থা ও দৃঢ়তা, পরকালীন জবাবদিহিতা এবং প্রাচুর্যময় হৃদয়ের অল্পে তুষ্টির চেতনাই পারে এ হতাশাগ্রস্ত সময়ে সান্ত্বনার পরশ বুলাতে।
আল্লাহ তায়ালা সর্বদা অল্পতে তুষ্ট থাকার তাওফিক দান করুন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৪ ঘণ্টা, মে ১৭, ২০২০
এইচএডি