এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রধান ‘নাখোদা মসজিদ’এর ইমাম, মৌলানা মহম্মদ শফিক কাশমি বলেছেন, ‘মানুষ বেঁচে থাকলে তবেই ধর্ম বেঁচে থাকবে। মানুষই ধর্মাচরণ করে।
‘এখন মসজিদে জামাত করে নমাজ পড়া যাবে না। প্রত্যেকে নিজের নিজের বাড়িতে নমাজ পড়বেন। নিজের বাসাকেই বানিয়ে ফেলুন মসজিদের মতো পবিত্র। আর প্রতিটা মসজিদের ভেতরে যারা বসবাস করেন তারাই মসজিদে আজান দেবেন, নামাজ পড়বেন। এমনকী ওই ৪ থেকে ৫ জন ব্যক্তিই মসজিদে পড়তে পারবেন তারাবির নামাজ। ’
শুধুমাত্র কলকাতায় কমবেশি, ছোটবড় মিলিয়ে ২ হাজারের মতো মসজিদ আছে। তারমধ্যে, প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি মসজিদের ইমাম অবাঙালি। মূলত এসব ইমামদের বাসস্থান ভারতের বিহার রাজ্যে। অর্থাৎ বেশিরভাগই বিহারি মুসলিম। তবে কলকাতা ছাড়া বাকি জেলাগুলোয় ইমামরা বাঙালি।
এসব মসজিদের প্রধান মসজিদ হলো উত্তর কলকাতার জাকিরিয়া স্ট্রিটের ‘নাখোদা মসজিদ’। এই মসজিদের ঐতিহাসিক গুরত্ব যথেষ্ট। এখানকার ইমাম মৌলানা মহম্মদ শফিক কাশমি একজন বিহারি মুসলিম।
তবে ঐতিহাসিকভাবে নাখোদা ছাড়া কলকাতায় আছে টিপু সুলতান মসজিদ, রাজাবাজার এলাকার বড় মসজিদ, কলুটলার ছোট মসজিদ, মল্লিকবাজারের জুম্মা মসজিদ, পার্কসার্কাসের রহমনিয়া মসজিদসহ আর কয়েকটি মসজিদ, ঐতিহাসিকভাবে উল্লেখযোগ্য।
তারাবারি নামাজ নিয়ে হাওড়া জেলায় বসবাসকারী এক বাঙালি ইমাম এস কে হাফিজ আব্দুল হালিফ জানান, বর্তমান পরিস্থিতি সঙ্কটজনক। তাই লকডাউনে শারীরিক দূরত্বই একমাত্র বিজ্ঞানসম্মত। তবে মসজিদ রক্ষণাবেক্ষণকারীরাই তারাবিরর নামাজ পড়তে পারে এটা মানা যায় না। সৎ ইচ্ছা থাকলে শারীরিক দূরত্ব ও বিজ্ঞানসম্মত উপায় মেনে সীমিত মানুষ নিয়ে পড়া যেতেই পারে তারাবির নামাজ। ফলে আমি এই বিষয়ে একমত নই।
‘কেউ বলবে মসজিদ ঘরে করুন, মন্দির, গির্জা ঘরে করুন। কখনই তা হতে পারে না। কারণ মসজিদের যে আবেগ, মসজিদের যে আকর্ষণ কখনই তা ঘরে পাওয়া যাবে না। তাই নিজের বাসাকেই মসজিদ বানিয়ে ফেলুন এতে আমি একমত নই। ’
পাশাপাশি ইমাম আব্দুল হালিফ বলেন, ‘১৫-২০ বছর আগেও নাখোদা মসজিদ রাজ্যের প্রধান মসজিদ ছিল না। প্রধান মসজিদ হিসেবে ছিল কলকাতার জামে মসজিদ। যা নাখোদা মসজিদের পাশে ট্রাম লাইন ধরে দক্ষিণদিকে রবীন্দ্রসরণির বাঁদিকে অবস্থিত। সেই জামে মসজিদই ছিল প্রধান মসজিদ। তবলিগ জামাত এলাকা দখল করে নাখোদা মসজিদকেই প্রাধান্য দেয়। তারপর থেকে নাখোদাই প্রধান মসজিদ হিসেবে প্রাধান্য পেয়ে আসছে। তবে তবলিগরা এখন বাদ পড়েছে। ’
সে যাই হোক আজ সবই ইতিহাস। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের নিরিখে প্রতিটা মসজিদে ৪ থেকে ৫ জন নিয়ম করে পড়ছেন তারাবির নামাজ। তবে অনেক মসজিদে নিয়ম মানা হচ্ছে না বলেও খবর পাওয়া যাচ্ছে। সেসব মসজিদে নিয়ম ভেঙে জামাত করে তারাবির নামাজ পড়ছেন বলে খবর আসছে। ফলে এ নিয়ে প্রশাসনও উদ্বিগ্ন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫০ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০২০
ভিএস/এইচএডি