ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

বাংলানিউজ টি-২০ বিশ্বকাপ-২০২১

রোজা রাখতে সম্পূর্ণ অক্ষম হলে ফিদিয়া দিতে হয়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৫ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৯
রোজা রাখতে সম্পূর্ণ অক্ষম হলে ফিদিয়া দিতে হয় ছবি : প্রতীকী

সমাজে ‘বদলি রোজা’ নামে একটি ভুল প্রচলিত আছে। কোনো ব্যক্তি অসুস্থতা কিংবা বার্ধক্যজনিত কারণে রোজা রাখতে অপারগ হলে অন্য কাউকে দিয়ে বদলি রোজা রাখাতে হয় মনে করেন অনেকে। অথচ ‘বদলি রোজা’ বলতে ইসলামে কোনো পরিভাষা নেই। আমরা যেটিকে বদলি রোজা ভাবি, তা মূলত ‘ফিদিয়া’।

কোনো ভুলভ্রান্তির দরুন শরিয়তের পক্ষ থেকে বাধ্যতামূলক করে দেওয়া বিনিময়কে ‘ফিদিয়া’ বলা হয়। ওই বিনিময় অপারগতার কারণে কোনো শারীরিক ইবাদত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য শরিয়তের পক্ষ থেকে বাধ্যতামূলক করা হয়।

এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া—একজন দরিদ্রকে খাবার খাওয়ানো। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৫)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘যারা সওম পালনে সক্ষম নয়, তাদের জন্য একজন মিসকিনকে খানা খাওয়ানোই ফিদিয়া। ’ তিনি আরো বলেন, ‘এ আয়াত রহিত হয়নি। এ বিধান ওই অতিবৃদ্ধ পুরুষ ও স্ত্রীলোকের জন্য, যারা সওম পালনে সক্ষম নয়। এরা প্রতিদিনের সওমের পরিবর্তে একজন মিসকিনকে পেট পুরে আহার করাবে।

ফিদিয়া কখন দেওয়া যাবে
আল্লাহ তার প্রিয় বান্দাদের ওপর কোনো অসাধ্য কাজ চাপিয়ে দেননি। তাই পবিত্র রমজান মাসেও রোজা রাখতে অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য বিকল্প বিধান রাখা হয়েছে। যদি কোনো ব্যক্তি অসুস্থতার দরুন অভিজ্ঞ কোনো ডাক্তারের বিবেচনায় রোজা রাখতে অক্ষম হন এবং পরে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সুস্থ হওয়ার পর রোজার কাজা আদায় করতে হবে। ওই ব্যক্তির জন্য ফিদিয়া নয়। তবে যদি ওই অসুস্থ ব্যক্তি কাজা করার আগেই ইন্তেকাল করেন, তাহলে তার পক্ষ থেকে আত্মীয়-স্বজন ফিদিয়া আদায় করবে। কেননা মারা যাওয়ার দরুন তাঁর আর কাজা করার সুযোগ নেই। (হেদায়া : ২/১২০)

আর যদি অসুস্থ ব্যক্তির আরোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে কিংবা এমন বৃদ্ধ হন যে কখনোই রোজা রাখার মতো সামর্থ্য ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই, তাহলে ফিদিয়া আদায় করবে। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৫/৪৫৫) পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তবে তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ হবে কিংবা সফরে থাকবে, তাহলে অন্য দিনে সংখ্যা পূরণ করে নেবে। (কাজা করে নেবে) আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া আদায় করা—অর্থাৎ একজন দরিদ্রকে খাবার খাওয়ানো। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৪)

দরিদ্ররা কিভাবে ফিদিয়া আদায় করবে
ফিদিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে ধনী-গরিবের মধ্যে কোনো তারতম্য নেই। তবে দারিদ্র্যের কারণে যারা ফিদিয়া দিতে একেবারেই অক্ষম, তারা তাওবা করবে। পরে কখনো সামর্থ্যবান হলে অবশ্যই ফিদিয়া আদায় করে দেবে। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৫/৪৫৫)

ফিদিয়ার পরিমাণ
রোজার ফিদিয়ার বিষয়ে কোরআনে এসেছে, ‘আর যাদের জন্য তা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া—একজন দরিদ্রকে খাবার খাওয়ানো। ’ (সুরা : বাকারা : ১৮৪) 

অর্থাৎ কোনো ব্যক্তি রোজা রাখতে একান্ত অপারগ হলে সে প্রতিদিন একজন দরিদ্রের পেট ভরে দুই বেলা খাবারের ব্যবস্থা করবে। কেউ চাইলে নগদ টাকাও দিয়ে দিতে পারে। প্রত্যেক রোজার জন্য ফিদিয়ার ন্যূনতম পরিমাণ হলো, সদকায়ে ফিতরের সমান। (আল ইনায়াহ : ২/২৭৩)

ফিদিয়া যাকে দেওয়া যাবে
ফিদিয়ার হকদার গরিব-মিসকিনরা, যারা জাকাতের হকদার। ফিদিয়া কোনো দ্বিনি প্রতিষ্ঠান, যেখানে যাকাতের হকদার আছে, সেখানেও দেওয়া যাবে। (আল ইনায়াহ : ২/২৭৩)

লেখক: গ্রন্থাকার, ইসলামবিষয়ক গবেষক ও অনুবাদক

রমজানবিষয়ক যেকোনো লেখা আপনিও দিতে পারেন। লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৫ ঘন্টা, মে ২৩, ২০১৯
এমএমইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বাংলানিউজ টি-২০ বিশ্বকাপ-২০২১ এর সর্বশেষ