ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

ঐতিহাসিক খেরুয়া মসজিদে শীতল আবহে তারাবির নামাজ!

বেলাল হোসেন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৮ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৯
ঐতিহাসিক খেরুয়া মসজিদে শীতল আবহে তারাবির নামাজ! খেরুয়া মসজিদ, ছবি: বাংলানিউজ

বগুড়া: সুলতানী আমলের নির্মাণ শৈলীর সঙ্গে প্রায় মিল রেখে বানানো মুসলিম স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন খেরুয়া মসজিদ। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদের চারদিকের দেয়ালের পুরুত্ব ৬ ফুট। উত্তর-দক্ষিণ লম্বা বিশিষ্ট মসজিদটির বাইরের দৈর্ঘ্য ৫৭ ফুট ও প্রস্থ ২৪ ফুট আর ভেতরের দৈর্ঘ্য ৪৫ ফুট ও ১২ ফুট।

তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদটি ৯৮৯ হিজরির ২৬ জিলকদ মোতাবেক ১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে জওহর আলী খান কাকশালের ছেলে নবাব মির্জা মুরাদ খানের পৃষ্টপোষকতায় আব্দুস সামাদ ফকির নির্মাণ করেছেন বলে মসজিদের দেয়ালের শিলালিপিতে লিপিবদ্ধ রয়েছে। ‘শেরপুরের ইতিহাস’ গ্রন্থের লেখক ইতিহাসবিদ প্রাক্তন অধ্যক্ষ রোস্তম আলীর বইটিতেও মসজিদটি সম্পর্কে এমন তথ্য পাওয়া যায়।

মুসলমি স্থাপত্যের এ অপূর্ব নিদর্শনটি এখন স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের খন্দকারটোলা গ্রামে। দীর্ঘকাল ধরে এ মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি জুমার নামাজ হয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় প্রত্যেক রমজানে তারাবিহ নামাজের ব্যবস্থাও করা হয়।

এবারও এ মসজিদে রমজানের শুরু থেকেই মসুল্লিরা তারাবি আদায় করে আসছেন। তবে অনেকটা অবাক করার মতো বিষয় হলো এ তীব্র গরমের মাঝেও মসজিদের ভেতরটা বেশ শীতল। প্রচণ্ড গরমেও ঐতিহাসিক এ খেরুয়া মসজিদে শীতল আবহে তারাবি আদায় করে থাকেন মসুল্লিরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মসজিদের পুরো এলাকা যেন কারপেটের মতো সবুজ ঘাসে মোড়ানো। সীমানা প্রাচীর বেষ্টিত চারপাশটা। পূর্বপ্রান্তে আসা যাওয়ার মূল পথ। দক্ষিণে রয়েছে যাতায়াতের আরেক পথ। দক্ষিণ পথের প্রান্ত ঘেঁষে রয়েছে একটি পুকুর। তার চারপাশে অনেক গাছপালা। ফলে এ তীব্র তাপদাহের মধ্যেও যেন বয়ে যায় শীতল হাওয়া।

এছাড়া সীমানা প্রাচীরের চারপাশ ঘিরে রয়েছে বিভিন্ন জাতের গাছ-পালা। দুপুর গড়িয়ে যেতেই এসব গাছপালায় আশ্রয় নেয় অসংখ্য পাখপাখালি। সার্বক্ষণিক মসজিদ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে রয়েছেন একজন তত্ত্বাবধায়ক। সবমিলে এখানকার নির্মল বাতাস ও ছায়াযুক্ত পরিবেশ যে কাউকে আকৃষ্ট করবে ঐতিহাসিক এ মসজিদ।
খেরুয়া মসজিদের অংশ, ছবি: বাংলানিউজএদিকে মসজিদের উত্তর পাশে বাঁশবাগানের ধারে রয়েছে অযুখানা। মসজিদের প্রধান প্রবেশ পথের সামনে রয়েছে নবাব মির্জা মুরাদ খানের পৃষ্টপোষক আব্দুস সামাদ ফকির কবর। মসজিদটির পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ইমাম মাওলানা আব্দুল হামিদ, খতিব মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক ও তারাবি নামাজের ইমামি করেন মাওলানা এজাজ আহমেদ।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের অধীনে সুলতানী আমলের নির্মাণ শৈলীর আদলে গড়ে এ মসজিদ। মসজিদটি পরিদর্শনে প্রায়ই আসেন দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা ছাড়াও বিদেশি পর্যটকরা। এরমধ্যে লন্ডন, জাপান, জার্মান, মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, ভুটান, আফগানিস্তান, মিশর অন্যতম। মসজিদের সাইট পরিচালক (কেয়ারটেকার) আব্দুস ছামাদ প্রামাণিকের কাছে সংরক্ষিত কয়েক বছরের পরিদর্শন বহি ঘেঁটে এমন তথ্য জানা যায়।

আব্দুস ছামাদ প্রামাণিক বাংলানিউজকে জানান, মসজিদে প্রবেশের জন্য মোট পাঁচটি দরজা রয়েছে। এরমধ্যে সামনের বড় দরজাটি খোলার ব্যবস্থা থাকলেও বাকিগুলো বন্ধ থাকে। এ মসজিদের দেয়ালের পুরুত্ব ৬ফুট। এছাড়া মসজিদের দক্ষিণ লাগোয়া একটু পুকুর। চারপাশে বিরাজমান সবুজ ও ছায়াযুক্ত পরিবেশ। এছাড়া বৈদ্যুতের ব্যবস্থাও রয়েছে।
 
এসব কারণে মসজিদের ভেতরে সব সময় ঠাণ্ডা আবহাওয়া বিরাজ করে। তীব্র গরমেও মসুল্লিরা শীতল আবহে তারাবি নামাজ আদায় করে থাকেন যোগ করেন আব্দুস ছামাদ প্রামাণিক।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৫০ ঘণ্টা, মে ১০, ২০১০
এমবিএইচ/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অপার মহিমার রমজান এর সর্বশেষ