ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জীবনযাপন

সুরা দ্বোহা: রাসুলকে আরও বেশি নেয়ামত দেয়ার সুখবর

ইসলাম ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৬ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৮
সুরা দ্বোহা: রাসুলকে আরও বেশি নেয়ামত দেয়ার সুখবর কোরআনের তাফসির

সূরা আদ-দ্বোহা
মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ১১

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু 
১) শপথ পূর্বাহ্নের, (২) শপথ রাত্রির যখন তা গভীর হয়, (৩) আপনার পালনকর্তা আপনাকে ত্যাগ করেননি এবং আপনার প্রতি বিরূপও হননি। (৪) আপনার জন্য ইহকাল অপেক্ষা পরকাল শ্রেয়।

(৫) আপনার পালনকর্তা সত্বরই আপনাকে দান করবেন, অতঃপর আপনি সন্তুষ্ট হবেন। (৬) তিনি কি আপনাকে এতিমরূপে পাননি? অতঃপর তিনি আশ্রয় দিয়েছেন। (৭) তিনি আপনাকে পেয়েছেন পথহারা, অতঃপর পথপ্রদর্শন করেছেন। (৮) তিনি আপনাকে পেয়েছেন নিঃস্ব, অতঃপর অভাবমুক্ত করেছেন। (৯) সুতরাং আপনি এতিমের প্রতি কঠোর হবেন না; (১০) সওয়ালকারীকে ধমক দেবেন না (১১) এবং আপনার পালনকর্তার নেয়ামতের কথা প্রকাশ করুন।

শানে নুযুল
এই সূরা অবতরণের কারণ সম্পর্কে বুখারি, মুসলিম ও তিরমিযিতে হযরত জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ (র.) থেকে বর্ণিত আছে যে, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর একটি আঙুলে আঘাত লেগে রক্ত বের হয়ে পড়লে তখন তিনি বলতে থাকেন, ‘তুমি তো একটি আঙুল; যা রক্তাক্ত হয়ে গেছো। তুমি যে কষ্ট পেয়েছো, তা আল্লাহর পথেই পেয়েছো, (কাজেই দুঃখ কিসের?)। ’ এ ঘটনার পর কিছু দিন জিবরাঈল (আ.) ওহী নিয়ে আগমন করলেন না। এতে মুশরিকরা বলতে শুরু করে যে, মুহাম্মদকে তার আল্লাহ পরিত্যাগ করেছেন ও তার প্রতি রুষ্ট হয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে সুরা আদ-দ্বোহা অবতীর্ণ হয়।  

বুখারিতে বর্ণিত জুনদুব (রা.)-এর রেওয়ায়েতে দু’এক রাত্রিতে তাহাজ্জুদের জন্যে না উঠার কথা আছে - ওহী বিলম্বিত হওয়ার কথা নেই। তিরমিযিতে তাহাজ্জুদের জন্যে না উঠার উল্লেখ নেই, শুধু ওহী বিলম্বিত হওয়ার উল্লেখ আছে। বলাবাহুল্য, উভয় ঘটনাই সংঘটিত হতে পারে বিধায় উভয় রেওয়ায়েতে কোনও বিরোধ নেই। বর্ণনাকারী হয়তো এক সময়ে এক ঘটনা এবং অন্য সময়ে অন্য ঘটনা বর্ণনা করেছেন। অন্য রেওয়ায়েতে আছে যে, আবু লাহাবের স্ত্রী উম্মে জামীল নবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে এই অপপ্রচার চালিয়েছিল। ওহী বিলম্বিত হওয়ার ঘটনা কয়েকবার সংঘটিত হয়েছিল। একবার কোরআন নাযিলের প্রথমভাগে, যাকে ‘ফাতরাতে-ওহী’র কাল বলা হয়। এটাই ছিল বেশি দিনের বিলম্ব। দ্বিতীয়বার যখন বিলম্বিত হয়েছিল, তখন মুশরিকরা অথবা ইহুদীরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে রূহের স্বরূপ সম্পর্কে প্রশ্ন রেখেছিল এবং তিনি পরে জওয়াব দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তখন ‘ইনশাআল্লাহ’ না বলার কারণে ওহীর আগমন বেশ কিছুদিন বন্ধ ছিল। এতে মুশরিকরা বলাবলি শুরু করলো যে, মুহাম্মদের আল্লাহ অসন্তুষ্ট হয়ে তাকে পরিত্যাগ করেছেন। যে ঘটনার প্রেক্ষিতে সূরা দ্বোহা অবতীর্ণ হয়, সেটাও এমনই ধরনের। সবগুলো ঘটনা একই সময়ে সংঘটিত হওয়া জরুরি নয়; বরং আগে-পিছেও হতে পারে।  

তাৎপর্য ও ফজিলত
এখানে শব্দদ্বয়ের প্রসিদ্ধ অর্থ পরকাল ও ইহকাল নেওয়া হলে এর ব্যাখ্যা হবে যে, মুশরিকরা আপনার বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার চালাচ্ছে, এর অসারতা তো তারা ইহকালে দেখে নেবেই, অধিকন্তু আমি আপনাকে পরকালে নেয়ামত দান করারও ওয়াদা দিচ্ছি। সেখানে আপনাকে ইহকাল অপেক্ষা অনেক বেশি নেয়ামত দান করা হবে। আয়াতের অর্থ এই যে, আপনার প্রতি আল্লাহর নেয়ামত দিন দিন বেড়েই যাবে এবং প্রত্যেক প্রথম অবস্থা থেকে পরবর্তী অবস্থা উত্তম ও শ্রেয় হবে। এতে জ্ঞানগরিমা ও খোদায়ী নৈকট্যে উন্নতিলাভসহ জীবিকা এবং পার্থিব প্রভাব-প্রতিপত্তি ইত্যাদি সব অবস্থাই অন্তর্ভুক্ত।

{{তাফসিরে মাআরেফুল কোরআন 
হযরত মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ শাফী (রহ.)}}

সম্পাদনায়
মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী
বিশিষ্ট মুফাসসিরে কুরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব
চেয়ারম্যান: বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৮
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জীবনযাপন এর সর্বশেষ