ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

অফবিট

ধ্বংসস্তূপে গড়া ইউরোপের স্থাপত্য পরীক্ষাগার! 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭
ধ্বংসস্তূপে গড়া ইউরোপের স্থাপত্য পরীক্ষাগার!  রটারডাম শহর সর্বাধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তিভিত্তিক স্থাপত্যকলায় নির্মিত। ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

নেদারল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর রটারডাম সর্বাধুনিক বিজ্ঞান-প্রযুক্তিভিত্তিক স্থাপত্যকলায় নির্মিত। কেবলমাত্র দুবাই বা দোহা শহরের সঙ্গেই তুলনা করা চলে বিশ্বের সবচেয়ে স্থাপত্য সৌন্দর্যমণ্ডিত আনন্দময় ডিজনিল্যান্ডের অনুরূপ শহরটির।

বিশ্বের অন্যতম বড় ও ব্যস্ততম বন্দরের জন্য বিখ্যাত রটারডাম গড়ে উঠেছে ১৯৪০ সালের দাবানলে সৃষ্ট ধ্বংসস্তূপের ওপরে। সে বছরের ১৪ মে দুপুর ১টা ২৮ মিনিটে পূর্ব থেকে আসা একটি ভয়ানক-আতঙ্কজনক শব্দ শোনা যায় ডাচ শহরগুলোর রাস্তায়।

এক মিনিটের মধ্যে অগ্নি জলোচ্ছ্বাসটি সরাসরি আমস্টারডামের যমজ বোন রটারডামের নিজস্ব খাল এবং প্রাচীন চর্মসার কাঠ ও ইটের ঘরগুলোর ওপর আঘাত হানে।

পনেরো মিনিট পরে অগ্নুৎপাত থামলেও ছয়দিনের আগুনে শহরটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সেখানকার ২৫০ হেক্টর জমি, ২৪ হাজার ঘর-বাড়ি ও ১১ হাজার বাণিজ্যিক ভবন ধসে পড়ে।  

শহরটি ধ্বংসের পর কর্মকর্তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, তারা টিকে থাকা অংশ থেকেই রটারডামকে পুনর্নির্মাণ করবেন। আধুনিকীকরণ করা শিল্প ইঞ্জিন শহর রটারডামের স্থাপত্য এখন ডিজনিল্যান্ডের মতো। শহরটিকে তাই ইউরোপের স্থাপত্য পরীক্ষাগার বা গবেষণামূলক শহর বলা হয়।

বৈশ্বিক খ্যাতি অর্জনের লক্ষ্যে রটারডাম এক শতাব্দীর জনগোষ্ঠীর তিন চতুর্থাংশের উন্নয়নশীল চাহিদা ও তারা যে সময়ের মধ্যে বসবাস করেছেন, তার প্রতিক্রিয়ায় বিকশিত হয়েছে।  

বিশ্বের সবচেয়ে আনন্দদায়ক ভবনটি রয়েছে শহরের আলেকজান্ডার ইরিও সেরিনের টিডব্লিউএ ফ্লাইট সেন্টার আইডেলউইড এয়ারপোর্টে (পরবর্তীতে জেডএফকে নামকরণ করা হয়েছে)। এটিকে সবচেয়ে ব্যাপকভাবে ডিজাইন করা পরিবহন হাবে পরিণত করা হয়েছে। রটারডেম স্টেশনে মহাকর্ষের অগ্রগতি, ইস্পাত, কাঁচ এবং কাঠের মধ্যে একটি ব্যালেটিক লিপ আটকে যায়।

রটারডাম গড়ে উঠেছে ১৯৪০ সালের দাবানলে সৃষ্ট ধ্বংসস্তুপের ওপরে।  ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীতএটি একটি জীবন্ত, চলন্ত সাইকেল শহর। কিন্তু পরিচালিত হয়েছে উপসাগরীয় রাষ্ট্রীয় শহরগুলোর মতো দুই বা তিনটি স্ট্যান্ডওয়াল ভবনের সঙ্গে একটি ট্রান্সমারেকা পিরামিড ও কয়েক ডজন ওয়াল্ট ডিজনি কনসার্ট হলের কারুকার্যময়তায়।

সাবওয়ে স্টেশনের ময়ুর টুপির মতো দেখতে টাওয়ারে বিংশ ও একবিংশ শতাব্দীর আর্কিটেকচারের প্রথম দু’টি মাস্টারপিসও রয়েছে। ডানদিকে পিট ব্লামের কুবউসউইনজেন, ৩৯টি ঘনবসতিপূর্ণ ঘর, নিজের স্তম্ভের ওপরে তার অনুভূতির প্রতিটি সমানুপাতিক, একটি কংক্রিট বনের মতো দেখায়- এমন স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে।  

বামদিকে মার্কাথালের আকৃতি সহজ কিন্তু একেবারে অনন্য। পাশাপাশি নির্মিত অ্যাপার্টমেন্ট ও কনডোমিনিয়ামগুলোর সঙ্গে রয়েছে বিশাল বাজার। এটি শহরের বাজারের লজিক্যাল বিবর্তন, যেখানে নাগরিকরা কিনতে, খেতে ও বাস করতে পারেন।

রটারডেম স্টেশনের স্থাপনায় মহাকর্ষের অগ্রগতি, ইস্পাত, কাঁচ এবং কাঠের মধ্যে একটি ব্যালেটিক লিপ আটকে যায়।  ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীতকিন্তু রটারডামের সেরাটা রয়েছে ট্রাম স্টপেজের কাছে ট্যাক্স কোম্পানির অফিস ভবনে। সেটির বালিঘড়ির মতো জানালা ও মেঝের আকৃতি স্থানান্তরযোগ্য। ডানদিকে অন্য অফিসে ভবনটির তিনটি তলা উচ্চ পদক্ষেপে উত্থাপিত, বেসমেন্টে ইতালীয় রেস্টুরেন্টও আছে।  

রটারডাম স্টেশনের পাশে মিলেনিয়াম টাওয়ারের সিটিজেন এম এ হোটেলেও রয়েছে ইউরোপীয় উচ্চ নকশা। টাওয়ারের নিচতলায় আবাসন হোটেলের অংশ, সমতল একটি গুদাম, প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং একটি মেস অ্যাটমানও পোস্টমর্ডানিজমের উদাহরণ।

উইক্কবেলব্যাট হোটেলের ভাসমান রুম জাহাজের ডেক ও বারবিকিউয়ের সঙ্গে সম্পূর্ণ আবৃত পিচবোর্ডের ২৪টি স্তরে গঠিত। এটি রেড অ্যাপলের অ্যালুমিনিয়ামে তৈরি একটি ক্যান্টাইলাইন্ড মাল্টিস্টোরেজ ভবন, যার ব্যবহার জটিল, কিন্তু সময়ের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে লালন করে।

সাবওয়ে স্টেশনের ময়ুর টুপির মতো দেখতে টাওয়ারে বিংশ ও একবিংশ শতাব্দীর আর্কিটেকচারের প্রথম দু’টি মাস্টারপিসও রয়েছে।  ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীতশহরের সেরা ক্যাফে এলাকায় রয়েছে একটি গৌরব কোণার বক্ররেখার বাউহাওয়াস ইটের ভবন,  স্থপতির নামে ডুডক নামকরণ করা হয়েছে। হাইমডার্নিস্ট হিলটনে বার নাইটক্লাবের নামকরণ করা হয়েছে শহরটির প্রধান যুদ্ধোত্তর স্থপতি হিউ মাসক্যান্টের নামে, যিনি শহরের বড় টাওয়ারও নির্মাণ করেছেন।  

বাংলাদেশ সময়: ০৪৫৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।