ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

নিউইয়র্ক

বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদে বরখাস্ত নিউইয়র্ক টাইমসের নির্বাহী সম্পাদক!

ডেস্ক রিপোর্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৯ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৪
বেতন বৈষম্যের প্রতিবাদে বরখাস্ত নিউইয়র্ক টাইমসের নির্বাহী সম্পাদক! জিল অ্যাব্রামসন

হঠাৎ করেই সরিয়ে দেওয়া হলো নিউইয়র্ক টাইমসের নির্বাহী সম্পাদক জিল আব্রামসনকে! তার জায়গায় বসানো হলো ডিন বাকেটকে। বিষয়টি নিয়ে যখন গোটা বিশ্বের সাংবাদিকতা জগতে আলোচনা তখন গোমর ফাঁক করলেন নিউইয়র্কের লেখক সাংবাদিক ও গণমাধ্যম সমালোচক কেন অলেটা।



দ্য নিউইয়র্কার পত্রিকায় তার একটি লেখায় কেন অলেটা তুলে ধরেছেন বিষয়টির আদ্যপান্ত। তার ভাষ্যেই জানা যাক বিষয়টি। অলেটা লিখছেন-
গেলো সোমবার সিটি ইউনির্ভাসিটি জার্নালিজম স্কুল ডিনারে লক্ষ্য করলাম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রকাশক আর্থার সুলজবার্জারের টেবিলে পত্রিকাটির ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ডিন বাকেট একা বসে। তখন একটি বারের জন্যও প্রশ্ন জাগেনি, নির্বাহী সম্পাদক জিল অ্যাব্রামসন নেই কেনো? এর দুই দিন পর বুধবার বেলা ২টা ৩৬ মিনিটে ই-মেইলটি আমার ইনবক্সে হিট করে। ঘোষণা এলো- অ্যাব্রামসনের পরিবর্তে বাকেটকে নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের এই শীর্ষ পদটিতে প্রথম নারী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার তিন বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই এমন একটি সিদ্ধান্ত এলো। আর ডিন বাকেটও হলেন প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান যিনি এখন নিউইয়র্ক টাইমসকে নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন।

এমন ঘোষণায় সহকর্মীরা রীতিমতো হোঁচট খেয়েছেন। তাদের প্রশ্ন, কি এমন ঘটে গেলো যে জিলকে সরিয়ে দিতে হলো। আব্রামসনকে সরাসরি বরখাস্তই করলেন সুলজবার্জার, আর তা করতে একটুও রাখঢাকও করলেন না তিনি।

বুধবার বিকেলে বার্তাকক্ষে দেওয়া বক্তৃতায় প্রকাশক বললেন, “আমি বার্তাকক্ষের জন্য একজন নতুন নেতৃত্বকে পছন্দ করছি কারণ আমি বিশ্বাস করি নতুন নেতৃত্বে কিছু কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি আসবে। ”

ওই ঘোষণার সময়টিতে অ্যাব্রামসন বার্তাকক্ষে অনুপস্থিত ছিলেন। এবং তিনি নিজ থেকে পদত্যাগ করলেন এমন কোনো কথাও তিনি বলেননি।

এমন একটি বাজে অবস্থার পেছনের কাহিনীও জানা গেলো। সপ্তাহ কয়েক আগে জেনেছিলাম, আব্রামসন জেনে গেছেন তার বেতন ও অবসর ভাতা তার আগের পুরুষ নির্বাহী সম্পাদক বিল কেলারের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমানে কম। বিষয়টি এর আগেও হয়েছে যখন জিল অ্যাব্রামসন ম্যানেজিং এডিটর হিসেবে বিল কেলারের স্থলাভিষিক্ত হন।  

এক ঘনিষ্ট সহযোগীই জানান, বিষয়টিতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কিছুটা বাহাস হয় অ্যাব্রামসনের। চাকরিচ্যুত করার জন্য কর্তৃপক্ষ অ্যাব্রামসনের বিরুদ্ধে ‘চাপ প্রয়োগের’ যে অভিযোগ এনেছে সেটি এমন একটি লিঙ্গ-বৈষম্যের ঘটনাকে ঘিরেই।

এ নিয়ে সুলজবার্জারের বক্তব্য হচ্ছে- আব্রামসন তার ক্যারিয়ারের একটি বড় সময় পার করেছেন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সঙ্গে। আর কেলারের চেয়ে অনেক কম সময়ই তিনি রয়েছেন টাইমসের সঙ্গে আর এ কারণেই তাদের দুই জনের পেনশনের টাকার অংকে কিছুটা হেরফের ছিলো। টাইমসের মুখপাত্র এলিন মারফি বলেছেন, নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে জিল অ্যাব্রামসন মোট যা পাচ্ছেন তার বিল কেলারের পাওয়া অর্থের সঙ্গে সহজেই তুলনা চলে। তবে একেবারে যে সমান সমান তা আমরা বলছি না।

এদিকে অন্য এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছে খবর পেলাম, কেলারের সঙ্গে এই বৈষম্য কমিয়ে আনা হয়েছে অ্যাব্রামসন বিষয়টিতে প্রতিবাদ করার পরেই। তবে এই ঘটনা নিউইয়র্ক টাইমসের নারী কর্মীদের কাছে একটি খারাপ উদাহরণ হয়েই থাকবে। সঙ্গে সঙ্গে তাদের পুরোনো কিছু স্মৃতিও  মনে করিয়ে দেবে। কারণ কর্মীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে এর আগেও পত্রিকাটিকে নারী কর্মীদের করা মামলা সামলাতে হয়েছে।

অ্যাব্রামসনের এভাবে নিশ্চুপ সরে যাওয়া কতটা ঠিক হচ্ছে সে নিয়েও চলছে কর্মীদের মধ্যে কানাঘুষা। আরেকজন সহযোগীর কাছে জানা গেলো- জিল যখন ম্যানেজিং এডিটরের দায়িত্ব পালন করছিলেন তখন একজন পুরুষ ডেপুটি ম্যানেজিং এডিটরকেও তার চেয়ে বেশি বেতন ভাতা দেওয়া হতো। বিষয়টি একটি নিজস্ব তদন্তের মাধ্যমে জেনে নিয়েছিলেন জিল।  

এদিকে অ্যাব্রামসনের ব্যাপারেও সুলজবার্জার মোটেই খুশি ছিলেন না। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ এবং নিউজরুমের কাজে বাণিজ্যিক বিভাগের কিছু কিছু প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে কোম্পানির সিইও মার্ক থমসনের সঙ্গে জিল অ্যাব্রামসনের ঝগড়ায় ভীষণ অখুশি ছিলেন সুলজবার্জার। যদিও প্রকাশ্যে জিল ও থমসনের মধ্যে তেমন কোনো ঝামেলার প্রকাশ কেউ বুঝতে পারতো না।  

তৃতীয় আরেকটি বিষয় জানা গেলো। বেশ কিছুদিন ধরে জিল অ্যাব্রামসন কর্তৃপক্ষকে একজন ডেপুটি ম্যানেজিং এডিটর নিয়োগের জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন যিনি পত্রিকাটির ডিজিটাল পার্ট দেখাশোনা করবেন। তিনি ভেবেছিলেন বিষয়টিতে সুলজবার্জার ও থমসন দুজনেরই সমর্থন পাবেন। আর যিনি এই পদে নিযুক্ত হবেন তিনি থাকবেন বাকেটের অধীনে।

ডিন বাকেট বার্তাকক্ষে বেশ জনপ্রিয় ও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। সবসময়ই অ্যাব্রামসনের পাশে তাকে দেখা গেছে। (তবে শুনেছি- সাম্প্রতিক একটি ডিনারে নাকি বাকেট বলেছেন, অ্যাব্রামসনের সঙ্গে কাজ করা কঠিন। )

এর আগে সুলজবার্জার যখন অ্যাব্রামসনকে নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব দেন তখন বাকেটকে পাশ কাটিয়েই দেন। বিষয়টি তখন সহজভাবে নেননি বাকেট। অন্তত দুটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, সেসময় বিষয়টিতে সুলজবার্জারের কাছে উদ্বেগের কথাও জানিয়েছিলেন বাকেট। তখন এমনও শোনা গেছে ওই পরিস্থিতিতে ব্লুমবার্গ থেকে একটি চাকরির অফারও গিয়েছিলো ডিন বাকেটের কাছে।

তবে নতুন দায়িত্ব পাওয়ার পর বার্তাকক্ষে দেওয়া বক্তৃতায় বাকেট বেশ প্রশংসাই করেছেন জিল অ্যাব্রামসনের। বলেছেন, তিনি ছিলেন শিক্ষকের মতো। তিনিই শিখিয়েছেন, উচ্চাশার মূল্য কতটুকু। এসময় তিনি লস এঞ্জেলস টাইমসে তার এক সময়ের সহকর্মী জন ক্যারোলের একটি উক্তিও উদ্ধৃত করেন- ‘মহান সম্পাদকেরা মানবিক সম্পাদকও হতে পারেন’।

এই বিষয়টিতে সুলজবার্জার ও থমসনের ভাবনার সঙ্গেও মিল রয়েছে। অ্যাব্রামসনকে নির্বাহী সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সময় সুলজবার্জার যেটুকু দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ছিলেন তার কারণই ছিলো তিনি অ্যাব্রামসনের উগ্র মেজাজের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিলেন। অ্যাব্রামসনের ব্যক্তিগত প্রোফাইল লিখতে গিয়ে আমিও লিখেছিলাম, বার্তা কক্ষের অন্যদের বিশেষ করে কিছু নারী কর্মীরও অ্যাব্রামসনের সম্পর্কে একই ধরনের মনোভাব ছিলো। তবে অনুসন্ধানী রিপোর্টে জিল অ্যাব্রামসন যে সুনাম অর্জন করেছিলেন তার ভিত্তিতেই তিনি ওই পদে নিয়োগ পান।

জিল অ্যাব্রামসনের ধারনা ছিলো তিনি বেতন বৈষম্যের বিষয়টি খুব ভদ্রতার সঙ্গেই তুলে ধরেছিলেন, কোনো চাপ প্রয়োগ করেননি, আর পত্রিকার বাণিজ্যিক দিকটি নিয়েও তিনি বেশ শান্ত ছিলেন, আর বাকেটের জন্য তিনি একজন ডেপুটিই খুঁজছিলেন। এসবকিছুর বিনিময়ে তিনি পেলেন একটি বরখাস্ত পত্র।

অ্যাব্রামসনের সঙ্গে সুলজবার্জারের সবশেষ দেখা হয় গত শুক্রবারে। তখনই নাকি তিনি তাকে বলেছিলেন ‘পরিবর্তন’ আনার সময় হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ সময় ১৪৪২ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নিউইয়র্ক এর সর্বশেষ