ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

নববর্ষ সংখ্যা

শেষ দিয়ে শুরু ।। সাখাওয়াত টিপু

গদ্য / বাংলা নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৪
শেষ দিয়ে শুরু ।। সাখাওয়াত টিপু

‘প্রকৃতির মধ্যে নববর্ষের দিন বলে কোনো একটা বিশেষ দিন নেই। ’
— নববর্ষ: শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সময় অসীমের দিকে ধায়।

তার শেষ নাই। সেই অর্থে শুরুও নাই। কিন্তু বস্তু বিশ্বের শুরু আর শেষ দৃশ্যমান। ফলে দর্শনের সরল জগতে আমরা ‘সময়’ নামক ভাবকে বস্তু দিয়ে ধরি। অধরা ভাবকে ধরার নামই তো দর্শন। ‘বস্তু’ বলতে নিছক ইটের টুকরা নয়। ‘আকার’ ‘আয়তন’ আর ‘জায়গা’ দখল করা নয়। তাহলে কী? আমরা বস্তুকে প্রকৃতি জ্ঞান করছি। আমরা বলছি ভাব অভাব স্বভাবের কথা। আর ভাবের রূপককে বস্তু জ্ঞান করছি। ফলে বস্তুর অধরা ভাবকে ধরা তো সময়কে ধরা। কেন? প্রকৃতির কথা ধরলে বলা যায়, প্রকৃতি তার রূপ বদলায়। যাকে জনমানস আচরণ হিসেবে জানে এবং বোঝে। যাকে বলছি স্বভাব। প্রকৃতির আচরণের বদল সরল নয়। বলা চলে সহজ। গাণিতিক হিসাব কষলে একটা হিসেব হয়তো মিলবে। সেটা রেখা আনুপাতিক বদলায় না। তল উত্তল অধতল নানা পাটাতনে তার চক্র। প্রকৃতির পালা বদল এতে মূখ্য। ফলে মানুষ প্রকৃতির নিয়মেই তাকে সাজিয়ে নেয়। নানা কাল খণ্ডে ভাগ করে। সেটা কেমন?

শেষ দিয়েই শুরু। যদি প্রকৃতির কথা ধরি তাহলে অনন্ত আর অসীমের ধারণার জন্ম দেয়। কেননা ধরা আর অধরা দুই ধারণা জমজ বোন। ধারণা মানে ধার না। এটা ঋণাত্মক নহে, ধনাত্মকেরই অর্থ বহন করে। যার কারণে মানুষ প্রকৃতির কাছে ঋণী। প্রকৃতির যে রূপ মানুষ ধরতে পারে, সেটা বস্তুর নামান্তর মাত্র। যে অধরা মানুষের ধরার ভেতর নাই সেটাকে আমরা বলছি ভাব। অভাব এখানে প্রকৃতির অধরা রূপ। ফলে মানুষ কল্পনা প্রবণ হতে বাধ্য। এই প্রবণতাকে ধারণ করার নামই ধর্ম। বস্তুগত ধারণা থেকে বিশ্বাসের জন্ম। বস্তুতে আর ভাবের বিশ্বাস দুই একই মুদ্রার এপিট-ওপিট। ফারাক শুধু খাঁজ কাটা ক্ষমতার ব্যাসার্ধ। কারণ বস্তুকে পাশ কাটিয়ে ভাব অধরাই থাকে। কেননা অধরা ভাব বস্তুর ভাব নয়। এটা বস্তুর বেশি কিছু। এটা ভাব দর্শনের কথা। এটাকে পাশ কাটিয়ে মানুষের প্রকৃতিতে টিকে থাকা অসম্ভব ব্যাপার।

মানুষ ধারণাগতভাবে সীমাবদ্ধ প্রাণী। কথাটা পুরাতন মনে হতে পারে। তবে কথাটা আদৌ পুরাণ নয়। কেননা চিন্তার জগতে মানুষ প্রকৃতির মধ্যে বাস করে। ফলে প্রকৃতি চিন্তার জন্ম দেয়। আর চিন্তা দিয়ে মানুষ প্রকৃতিকে বদলাতে চায়। মানুষ যে বস্তুগত দখলের উপর বেঁচে আছে সেটা বস্তুর প্রতি অগাধ বিশ্বাসেরই ফল। কথা নতুন শোনাবে হয়তো। আদ্যকথা, প্রকৃতি ভাব দিয়ে চলে, বিশ্বাস দিয়ে নয়। প্রশ্ন হচ্ছে, বদলানো কি সম্ভব? প্রকৃতিকে পুরোপুরি বদলানো সম্ভব নয়। তবে বদলকে রূপান্তর অর্থে ধরলে ‘বদল’কে ‘বদল’ আকারে দেখা যাবে! আদতে সেটা বদল নয়, রূপান্তর মাত্র। এক অর্থে সংস্কারই বলা চলে। বদল মানে সংস্কার নয়, মূলসহ পাল্টিয়ে দেয়া। মানে বিপ্লব। দর্শনের এই সহজ সূত্রটি ধরলে আমরা ‘নব’ ওরফে ‘নতুন’ ভাবের অর্থ ধরতে পারবো।

নববর্ষ কী? সোজা কথা, কাল গণনার শুরু। শুরু নিয়ে নানা পথ আর নানা তর্ক জারি আছে দেশে-বিদেশে। তবে কথা স্পষ্ট, নববর্ষের ভিত্তিমূল ধর্ম বা ধরা। ধরা দুই অর্থে, অধরাকে ধরা আর বস্তুকে ধরা। ধরা তো আত্মীয়তার যোগান্তর মাত্র। আদি যুগে প্রকৃতির সাথে বস্তুর আত্মীয়তা নির্ণয়ের ধারণা হতে নববর্ষের জন্ম। আত্মীয়তা কী ধরনের? আত্মীয়তার ধরন দিন-রাত্রি, জোয়ার-ভাটা, অমাবশ্য-পূর্ণিমা, চন্দ্র-সূর্য, ঋতুর নানা রূপ-রূপান্তর ইতি আদি। এই আত্মীয়তা নির্ণয় করতেন জ্যোতির্বিদগণ। আদি সভ্যতার দিকে তাকালে দেখা যাবে, দিন গণনার বেলায় এক সূর্যোদয় হতে আরেক সূর্যোদয় নাগাদ ‘সৌরদিন’। মানে এক সূর্যোদয় হতে আরেক সূর্যোদয় নাগাদ ‘একদিন’। আর এক চন্দ্রোদয় হতে অপর চন্দ্রোদয়কে ‘চন্দ্রমাস’ হিসেবে ধরে নেয়া হতো। এক পূর্ণিমা হতে অপর পূর্ণিমা নাগাদ মানা হতো ‘চন্দ্রমাস’। এরই সূত্র ধরে জ্যোতির্বিদগণই আবিষ্কার করেন ‘কালের একক’। কালের একক হচ্ছে ক্ষণ, দিন, সপ্তাহ, পক্ষ, বছর।

আমরা খানিক পরকালের ইতিহাসের দিকে তাকাবো। মেসোপটেমিয়া, মিশর আর ব্যাবিলন প্রায় সমসময়ে কাল গণনা শুরু হয়। মেসোপটেমিয়ায় চন্দ্র দেবতা ‘নানার’, ব্যাবিলনে সূর্য দেবতা ‘শামাশ’ আর মিশরে নক্ষত্র দেবতা ‘সিরিয়াস’ নামক ধর্মদর্শনকে আমলে নিয়ে বর্ষ গণনা শুরু হয়। মজার দিক হলো, তখন পশু শিকার আর লালন-পালন সমাজে প্রথা। আর কৃষি সভ্যতা তখন বিকাশমান। মুশকিল হলো, প্রকৃতি আর মানুষ মধ্যে যে সম্পর্ক সেটা সমান্তরাল নয়। প্রকৃতি নিজেকে যে রূপে সাজায় মানুষকে তার ভেতরে বেঁচে থাকতে হয়। মানুষের বেঁচে থাকা জীবনের মূল প্রেরণা নয়। মূল প্রেরণা হলো জীবনকে অর্থবহ করে তোলা। ফলে মানুষকে সংগ্রাম করতে হয়। সেটা কেমন?

প্রকৃতির নিয়মানুসারে মানুষ শষ্য উৎপাদন করে। এটা আদি সমাজের চিরাচরিত প্রথা। কিন্তু, প্রকৃতি যেহেতু অসমান্তরাল রূপে চলে সেহেতু মানুষ কখনো কখনো বিরূপতার কাছে অসহায় হয়ে পড়ে। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, একদা মিশরকে নীলনদের দুঃখ বলা হতো। গ্রীষ্মের দাবদাহের পর দেখা দিত জলোচ্ছ্বাস। ভাসিয়ে নিত শষ্যাদি। কিন্তু জলোচ্ছ্বাস বছরে একইদিনে আসছে না। আদতে প্রকৃতির এই অসমান্তরাল রূপ ঋতুরই পালাবদল। জ্যোতির্বিদরাও প্রকৃতির এই আচরণে অসহায় হয়ে পড়ে। তারা দেখতো, প্লাবনের আগে একটি তারা আকাশে দেখা যায়। সে তারা জন্ম নিয়েছিল সূর্যের দেহ থেকে। নাম ‘সিরিয়াস’ ওর্ফে ‘ডগ স্টার’। ‘সথিক সাইকেল’ বা বর্ষগণনার এই কাহিনী অনেকের জানা হয়তো। কিন্তু ইসায়িপূর্ব ২৪০০ শতের আগে মিশরে বর্ষ গণনা শুরু হয়েছিল। সথিক সাইকেলে তাদের পৌঁছুতে সময় লেগেছিল ইসায়িপূর্ব ১৩২১ সাল নাগাদ। এত সময় কেন?

ধর্ম এখানে মূল প্রশ্ন আকারে দেখা দেয়। প্রকৃতির প্রতি ভাব আর বস্তুর প্রতি বিশ্বাস দুইই ধর্মীয় দর্শনের গোড়া। দেবতার দান বর্ষপঞ্জি আর বস্তুগত শষ্য প্রেম একসাথে গাঁথা। ফলে এটাকে সংস্কারের চিন্তা ছিল খানিক দুরূহ। শষ্য রোপণ আর তোলার মধ্যে নানা উৎসবে দেবতাকে তুষ্ট করার সংস্কৃতি এতে বিদ্যমান। এই সংস্কৃতি কালে কালে সংস্কার হয়ে মানুষ আজও দিনক্ষণে বর্তমান। তো বাংলায় বর্ষ কেমন?

দুনিয়ার অন্য দেশের মতো এতদ অঞ্চলে চন্দ্র আর সৌর বিশ্বাসকে কেন্দ্র করে বর্ষপঞ্জির শুরু। তবে সৌরমতবাদই বর্ষগণনার নিমায়ক আকারে আছে। চন্দ্র তিথির ‘অমাবশ্যা’ আর ‘পূর্ণিমা’ যার ভিত্তি। প্রাচীন জ্যোতির্বিদ আর্যভট্টের ‘সূর্যসিদ্ধান্ত’ মতে, বিশাখা নক্ষত্রের নামে ‘বৈশাখ’, জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের নামে ‘জ্যৈষ্ঠ’, আষাঢ়া নক্ষত্রের নামে ‘আষাঢ়’, শ্রবণা নক্ষত্রের নামে ‘শ্রাবণ’, ভাদ্রপাদ নক্ষত্রের নামে ‘ভাদ্র’, অশ্বিনা নক্ষত্রের নামে ‘আশ্বিন’, কৃত্তিকা নক্ষত্রের নামে ‘কার্তিক’, মৃগশিরা নক্ষত্রের নামে ‘অগ্রহায়ণ’, পূষ্যা নক্ষত্রের নামে ‘পৌষ’, মঘা নক্ষত্রের নামে ‘মাঘ’, ফাল্গুনী নক্ষত্রের নামে ‘ফাল্গুন’ আর চিত্রা নক্ষত্রের নামে ‘চৈত্র’। এখানে মজার ব্যাপার হলো, সকল নক্ষত্র নামের উচ্চারণের সহজ সংস্কার হয়ে ‘মাস ওরফে ‘মাহ’ ঠিক হয়। শুদ্ধ ব্যতিক্রম ‘অগ্রহায়ণ’ বা ‘মৃগশিরা’। বাংলার অগ্রহায়ণে ফসল তোলার সময়। ফসল বলতে ‘খাদ্য’ আর ‘বীজ’ অর্থই বিরাজিত। বীজের সাথে ‘মৃগশিরা’ ভাব বর্তমান আর ভবিষ্যত দুই কালই চিহ্নায়ক। খাদ্য মানে ‘বর্তমান’ আর বীজ মানে ‘ভবিষ্যত’। বাংলা পঞ্জিকায় ‘অগ্র’ বা ‘আগে’ বা শ্রেষ্ঠ অর্থে স্থান দখল করেছে। তবে প্রকৃতির পালাবদল মানে ঋতুর পালাবদল। ফলে নক্ষত্রের অবস্থান আর চন্দ্রের তিথি এই পালাবদলের ধারক। তবে এই অঞ্চলে কবে থেকে বর্ষ গণনা শুরু তা নিয়ে মতভেদ আছে। ‘বিক্রমাব্দ’, ‘শকাব্দ’, ‘বঙ্গাব্দ’ ইতি আদি ভাব সম্প্রদায় বর্ষপঞ্জির কেন্দ্র। কালের একক ‘বছর’ নির্ধারিত হত দিন ক্ষণ তিথি মাস হতে।

বাংলা ছয়ঋতুর দেশ। মানে প্রকৃতির পালাবদল ছয় রকমের। ছয়ঋতুকে সৌরমতবাদে বারো ভাগে ভাগ করা হয়। এক ভাগ এক মাস। চন্দ্রতিথির অমাবশ্যা আর পূর্ণিমা হিসেবের বাইরে অপর এক বস্তুগত দিকের কথা ভাবা যায়। যেদিক ‘ঋতুস্রাব’। নারীর ঋতুস্রাবের বিষয়ও এতে বিদ্যমান থাকতে পারে বলে ধারণা হয়। নৃতাত্ত্বিকভাবে দেখলে, এতদ অঞ্চল মাতৃশাসিত সমাজ। ফলে রজঃস্বলার সাথে মাস-তিথি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। ‘মাসিক’ শব্দ কি সেই অর্থ বহন করে না? সে ভিন্ন এক তর্ক! ভাষাশাস্ত্র বলে, ফার্সি ভাষার সন্তান সংস্কৃত। ‘মাস’ নামক সংস্কৃত শব্দের উদয় ‘মাহ’ ফার্সি ভাব হতে। ফার্সিতে ‘মাহ’ ভাবের অর্থ ‘চন্দ্র’ ও ‘মাস’। তবে সংস্কৃতে ‘মাহ’ মানে ‘মাস’, চন্দ্র নয়। প্রশ্ন হলো, বাংলা চলতি নববর্ষের অবিষ্কারক কে? এই নিয়ে তর্ক আছে নানা ধরনের। ভারতীয় লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়সহ কারো কারো মত, রাজা শশাঙ্ক বঙ্গাব্দ চালুর জনক! ইতিহাসের দিনক্ষণ আর শাসন কাঠামোর হদিস মেলালে সেটা অসার হয়ে যায়। ফলে এ তর্ক বৃথা। তবে কে কখন করেছিল তা এখনো অজানা পর্যায় আছে।

তবে চালু মত, সম্রাট আকবরের ‘তারিখ-ই-ইলাহি’ সনের সাথে বঙ্গাব্দের যোগ রয়েছে। সংস্কার অর্থে যোগ আছে। আকবর পারস্যের রাজা সুলতান জালাল উদ্দীনের মতানুসারি ছিলেন। সুলতানের ‘তারিখ-ই-জালালি’ মতের মত আকবর ‘তারিখ-ই-ইলাহি’ চালু করেন। সেটাও কালের ক্ষমতাকাঠামোর পালাবদলে সংস্কার হতে থাকে। শাসকশ্রেণীর দখলদারিত্ব প্রভাব এতে বিরাজিত। বাংলায় নানাসময়ে কখনো বঙ্গাব্দ, কখনো হিজরি সন, কখনো রোমান বর্ষ চালু হয়েছে। ঈদ উৎসব, পূজা পার্বণ, বড়দিন, প্রবারণা পূর্ণিমাসহ নানা ধর্মকর্ম এই তিন বর্ষ গণনার মধ্যে নিহিত আছে। তবে কৃষিনির্ভর অঞ্চলে প্রজাসাধারণ থেকে ‘খাজনা’ বা ‘টোল’ বা ‘কর’ আদায়ের সাথে কথিত ‘নববর্ষ’ সম্পৃক্ত। মানে হিসেবের ‘হালখাতা’র উদ্বোধন। পুরান খাতার কর্তন করে নতুন খাতার হিসাব চালু।

নির্মম হলে সত্য, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রে বাংলা সনের কার্যকারিতা নাই। বাংলাবর্ষ এতে অপাংক্তেয়। রাষ্ট্রের ক্ষমতা কাঠামোয় ‘ইউরোপিয় বর্ষ’ বা ‘রোমান বর্ষ’ চালু আছে। রাষ্ট্রীয় ‘অর্থ বছর’ ‘বাংলা বছর’ নয়। ‘বাংলা বছর’ টিকে আছে গাঁয়ের সংস্কৃতিতে। ঠিক ধর্ম অর্থে উৎসব। শষ্যের সাথে গাঁয়ের মানুষের যে রূপ বাঁচা-মরার সম্পর্ক, ধর্মও তার তদ্রূপ। ধর্মের ভাব বস্তুগত জীবনের অধরার সাথে বসবাস করে। ফলে অবসরে বস্তুগত জীবনকে ভাব দিয়েই প্রসারিত করতে চায়। যাকে আমরা বলছি ফসলের ভাষা। ভাষা বাংলা। ফসলের সংস্কৃতিতে ছয়ঋতুর গর্ভে বাংলাবর্ষ বেঁচে আছে। প্রকৃতির এই সম্বন্ধকে আমরা বলছি সংস্কৃতি। আর রাষ্ট্র হচ্ছে উপনিবেশের মৃগশিরা! কিন্তু উপনিবেশিক ক্ষমতা-কাঠামোর যুগে একটা প্রশ্ন জারি রাখতে চাই? নাগরিক জীবনে নববর্ষ কী জিনিস?

আমরা বললাম ‘বিচ্ছিন্নতা’র উৎসব। উৎসব কখনো উৎপাদন বিচ্ছিন্ন হতে পারে না। গাঁয়ের সংস্কৃতির সাথে নাগরিক দূরত্ব কম নয়। তবে নাগরিক নববর্ষ বস্তুগত জীবন হতে একাকিত্ব উৎযাপনের উৎসব। কেননা নিছক বস্তুগত জীবন ‘একাকিত্ব’ শব্দখানা নিলাম শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দরগা হতে। ঠাকুর ভাবখানাকে বলেছেন ভাব সম্পদ। ঠাকুর আরও বলেন, ‘প্রকৃতির মধ্যে নববর্ষের দিন বলে কোনো একটা বিশেষ দিন নেই। ’ এমন দিনে তিনি ব্রহ্মা সাধনা করতেন। গাজিপুরেও করেছেন। ঠাকুর ধার্মিক মানুষ। ধার্মিক বললাম কারণ তিনি ধর্মবিদ্যা হতে নিজেকে মুক্ত করতে পারেননি। হয়তো করতে চান নাই তিনি। কারণ ধর্মকে কেন্দ্রে রেখে তিনি চিন্তার ডালপালা বিস্তার করেছেন। ঠাকুরের চিন্তার কাঠামো ধর্মীয় সংস্কৃতির সংস্কার। বাড়তি কিছুই না। তবে আমরা শেষ দিয়ে গণনা শুরু করলাম। নবীন রাষ্ট্রে আমাদের ভয় এইখানে, শিকড় কেটে গাছকে রক্ষা করা যায় না। এই যা, নব আশা দাগিয়ে রাখলাম।  


তত্ত্বপারা
১. নববর্ষ ও সমাজমানস: নির্মল সেন; নববর্ষ (সংকলন), বাংলা একাডেমি, ঢাকা
২. বিশ্ব পটভূমিতে বাংলা মাস-তালিকা: সত্যেন সেন; নববর্ষ (সংকলন), বাংলা একাডেমি, ঢাকা
৩. নববর্ষ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর; নববর্ষ (সংকলন), বাংলা একাডেমি, ঢাকা
৪. http://www.rabindra-rachanabali.nltr.org/node/8998
৫. Carnival and Cannibal: Jean Baudrillard; Seagull, India

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নববর্ষ সংখ্যা এর সর্বশেষ

welcome-ad