ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

নববর্ষ সংখ্যা

স্মৃতির পহেলা বৈশাখ ।। হায়াৎ মামুদ

প্রবন্ধ / বাংলা নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা / শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৪
স্মৃতির পহেলা বৈশাখ ।। হায়াৎ মামুদ

আমার ছোটবেলায় দেখেছি চৈত্র-সংক্রান্তি খুব বড় করে পালন করা হতো। কেননা চৈত্র সংক্রান্তিতে হিন্দুদের কিছু পূজো-আচারের ব্যাপার ছিল।

তবে পহেলা বৈশাকেও উৎসব হতো। বাঙালির সার্বজনীন উৎসব হিসেবে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই পহেলা বৈশাখ অর্থাৎ বাংলা নববর্ষ উৎসবটি পালন করতো। আমাদের গ্রামেগঞ্জে বা শহরে যেভাবে নববর্ষ উৎসবটি পালিত হয়, এখনও পর্যন্ত কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এতো বিস্তৃতভাবে পালন হয় না। ফলে এটা আমাদের বহুধর্মভিত্তিক সমাজে একেবারেই একটি ধর্মনিরপেক্ষ বাষির্কী।

আমাদের সময় ছোটবেলায় দেখেছি পহেলা বৈশাখে মেলা হতো। মেলায় নানা জায়গা থেকে লোকজন আসতো। তারা দোকানপাট দিয়ে বসতো। আগের সন্ধ্যা অর্থাৎ চৈত্র-সংক্রান্তি থেকেই উৎসব শুরু হয়ে যেতো। চৈত্র-সংক্রান্তি আর পহেলা বৈশাখ এই দুটো আমাদের ছিল একেবারেই ছুটির দিন। স্কুল বন্ধ থাকতো, কেউ পড়াশোনার কথা বলতো না। সবাই নিজের বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে ঘুরতে যেতো। আর আমরা যারা ছোট বাচ্চাকাচ্চা ছিলাম, তাদের জন্য এ মহাউৎসব। কারণ কারো কোনোরকম পড়াশোনা নেই, কেউ তাগিদ দিচ্ছে না বা পড়তে বসতে বলছে না। সেজন্য এই দিনটি আমাদের খুব একটা আনন্দে কাটতো।

ছোট ছেলেমেয়েরা বাবার হাত ধরে মেলা যেতো। সেখানে তাদের নানা ধরনের খেলনা বা অন্যান্য জিনিস কিনে দেয়ার আবদার পূরণ করতে হতো। ফলে পহেলা বৈশাখ কবে আসবে, এ নিয়ে আমাদের ভেতর একধরনের আনন্দ-আশা ইত্যাদি কাজ করতো। পহেলা বৈশাখে আরেকটা ব্যাপার ছিল। বিভিন্ন পর্বে, যেমন— ঈদ, পহেলা বৈশাখ ইত্যাদি সময়ে আমরা জামাকাপড় পেতাম। ছোট বাচ্চাদের জন্য নতুন জামাকাপড় পাওয়ার চেয়ে বড় আনন্দের বিষয়টা কিছু ছিল না। তাছাড়া খাওয়া-দাওয়া যার বাড়িতে যেমন সঙ্গতি তেমন তো হতোই। এভাবে আমরা পহেলা বৈশাখে উৎসবে মেতে উঠতাম।

এখন বাংলাদেশে এটি একটি সার্বজনীন বার্ষিক উৎসব। এটাই একমাত্র বড় উৎসব, যা ধর্মকে কেন্দ্র করে নয়; আর তো সব ধর্মভিত্তিক উৎসব। এ উৎসবে সকলে অংশ নেয়, সকলেই চায় অংশ নিতে। গ্রামে এখনও এই দিনে মেলা হয় কী-না জানি না; তবে মনে হয় এই দিনটি ঘিরে এখনও গ্রামে মেলা হয়। আমাদের এখানে তো বটেই, পশ্চিমবঙ্গেও হয়। ব্যবসায়ীরা সারা বছর ধরে এই দিনটির অপেক্ষায় থাকে। গ্রামে তো ব্যবসায়ী বলতে দোকানদারই বোঝায়। তো তারা পহেলা বৈশাখে একটু বেশি উপার্জনের উপলক্ষ্য পেয়ে যায়। যে উপার্জন থেকে অনেকদিনের জীবিকার একটি সংস্থান হতো। ফলে তারা সারাবছর ধরে উন্মুখ হয়ে থাকতো এই দিনটির জন্য।

আরও একটি বিশেষ ব্যাপার ছিল। তখন গ্রামের মানুষ চিঠিপত্র লিখতে বাংলা সন তারিখ ব্যবহার করতেন। ইংরেজি মাস বা সনের ব্যবহার একদম ছিলোই না। ফলে সামাজিক আবহে এই ব্যাপারটি ছিল। কিন্তু এখন অনেককিছু নষ্ট হয়ে গেছে, আমরা নষ্ট করে ফেলছি। আমার স্পষ্ট মনে আছে—  ছোটবেলায় লেখা চিঠিপত্রে কেউ ইংরেজি তারিখ ব্যবহার করতেন না। যারা ডায়রি রাখতেন, তারাও বাংলা সন-তারিখ ব্যবহার করতেন। ইংরেজির চল তেমন ছিল না এবং এই নিয়ে কোন কমপ্লেক্সও ছিল না। এখন যেমন, ইংরেজি বলতে পারি না, কিন্তু বাংলার ভেতর কয়েকটি ইংজেরি শব্দ ঢুকিয়ে দিতে পারলে মনে হয় বেশ একটা ব্যাপার করা গেলো। নিরুষ্কুশ বাঙালির ব্যাপারটি তখন বিদ্যমান ছিল। ইংরেজি জানি না বলে কোন কমপ্লেক্স ছিল না, লজ্জা বা এই নিয়ে কোন অস্বস্তি বোধ ছিল না। সে কারণে বাংলা সনতারিখ ব্যাপকভাবে চল ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

নববর্ষ সংখ্যা এর সর্বশেষ