ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

রাতের ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ভয়ঙ্কর

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২২
রাতের ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ভয়ঙ্কর ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জ: দিন পেরোলেই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে নারায়ণগঞ্জের ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক। আছে নিয়মিত ছিনতাইয়ের অভিযোগ, চলে মাদক পরিবহন।

এসবের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক সময় ঘটে হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা। এ বিষয়গুলো নিয়ে সড়কের যাত্রী ও স্থানীয়রা আতঙ্কিত। কিন্তু সহজে অভিযোগ করতে চায় না কেউ। পুলিশ বলছে, সড়কটিতে অপরাধ দমনে তারা সচেষ্ট।  

জানা গেছে, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি মাদক ব্যবসায়ীদের জন্য বেশ নিরাপদ। খুব সহজে তারা এ পথে মাদক চোরাচালান ও পাচারের কাজ করে থাকে। ছিনতাইকারী-ডাকাতদের জন্যও সড়কটি ‘বর’ পাওয়ার মতো। রাত বাড়তে থাকলে সড়কে ছিনতাই করতে সুবিধা হয় তাদের। অনেক সময় ছিনতাই-ডাকাতির সময় খুনের ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, গত দুই সপ্তাহে এ মহাসড়কে ১৬/১৭টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। হাইওয়ে পুলিশ নিয়মিত এ সড়কে টহল দেয়। কিন্তু তাদের নাকের নিচ দিয়েই অপরাধীরা নিজেদের কর্মকাণ্ড ঘটায়।  

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের একটি অংশ রূপগঞ্জ উপজেলায় পড়েছে। এ অংশের স্থানীয়রা অনেকেই সড়কটিতে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। অনেকে জানালেন, দিনের আলো ফুরিয়ে যাওয়ার পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ছিনতাই হয়। এই সম্প্রতি বড় কিছু ডাকাতির ঘটনাও ঘটে। এখনও ডাকাতির কথা শোনা যায়। এ সমস্ত ঘটনায় ভুক্তভোগীরা প্রাণের ভয়ে থানায় অভিযোগ করতে চায় না।  

সর্বশেষ গত শনিবার (২৬ নভেম্বর) রাতে আনিস আহমেদ নামে এক ব্যক্তি ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে ছিনতাইয়ের শিকার হন। তার সঙ্গে থাকা সবকিছু দুর্বৃত্তরা নিয়ে গেছে। বন্দর উপজেলার এ বাসিন্দা ব্যক্তিগত কাজে রূপগঞ্জ গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ফেরার পথে সন্ধ্যার পর ছিনতাইয়ের শিকার হন।  

এ ঘটনার পর কেন পুলিশে জানালেন না আনিসের কাছে জানতে চায় বাংলানিউজ। তিনি উত্তর দেন, থানায় গেলে মামলা করতে হবে। এ জন্য সাক্ষী প্রয়োজন। এত ঝামেলা কে করবে। যে কারণে পুলিশে কোনো অভিযোগ করিনি।

ছিনতাই-ডাকাতি ছাড়াও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক বেশ ভয়ঙ্কর। অতীতে এ সড়কে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ডাকাতি-ছিনতাইয়ের সময় ভুক্তভোগী দুর্বৃত্তদের সঙ্গে বসচায় জড়ালে অনেক সময় হত্যার শিকার হয়েছেন। যে কারণে, স্থানীয়রা রাত হলে এ সড়কে কম চলাচল করেন।  

লং-রুটের যানবাহন চলাচলের সময়ও আগে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। যে কারণে যাত্রীরাও রাতের বেলা সতর্ক থাকার চেষ্টা করেন।  

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র মারফত জানা গেছে, রূপগঞ্জের ভুলতা, গোলাকান্দাইল, নতুন বাজার, বলাইকা, দহরগাও, সাওঘাট সড়ক ও ৩০০ ফিট সড়কের বিভিন্ন রাস্তায় ঘুরতে আসা মানুষ ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছিলেন। সড়ক নীরব হলেই দেশিয় অস্ত্র, ছুরি, চাকু দেখিয়ে তাদের ছিনতাই করা হয়।  

এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ চায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাসহ সাধারণ যাত্রীরা। এ ব্যাপারে তারা হাইওয়ে ও জেলা পুলিশের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।  

পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিনিয়ত এ মহাসড়কে টহল ও হাইওয়ে পুলিশের টহল পরিচালনা হয়। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ না করলে প্রতিকারে জটিলতা সৃষ্টি হয়। ভুক্তভোগীরা অন্তত জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল করতে পারে, যাতে দ্রুত সহায়তা পান।  

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে কাঁচপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম আবুল কাশেম আজাদ ছিনতাইয়ের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, গতকাল রোববার (২৭ নভেম্বর) রাতেও এ সড়ক থেকে ছিনতাইকারী আটক করেছি। এ ঘটনা বেড়েছে; কিন্তু আমরা সতর্ক। নিয়মিত টহল পরিচালনা করি।  

তিনি আরও বলেন, প্রতিনিয়ত ছিনতাইকারী ধরলেও এসব ঘটনায় ভিকটিম থানায় অভিযোগ দিতে চান না। অলিগলি এলাকায় এসব ঘটনা বেশি ঘটে। হাইওয়েতে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের প্রধান দায়িত্ব। তবে আশপাশের এলাকায় কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে আমরা সেটাও দেখছি।

বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২২
এমআরপি/এসআইএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।