ঢাকা, রবিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ফের ময়নাতদন্তের জন্য তোলা হলো শান্তার লাশ

জাহিদুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১০
ফের ময়নাতদন্তের জন্য তোলা হলো শান্তার লাশ

সাভার: ফের ময়না তদন্তের ইডেন কলেজ ছাত্রী সালমা আক্তার শান্তার লাশ সোমবার কবর থেকে তোলা হয়েছে।

ঢাকা জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জসিম উদ্দিনের উপস্থিতিতে দুপুরে লাশ তোলা হয়।


 
শান্তার খালাত ভাই ইকবাল হোসেন লাশের পুনঃময়না তদন্তের জন্য গত ৮ সেপ্টেম্বর জেলা জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আবেদন করলে পরদিন তা মঞ্জুর করেন আদালত।

আগের দফায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে শান্তার মৃত্যু অপমৃত্যুজনিত উল্লেখ করায় তা প্রত্যাখান করে শান্তার পরিবার।

শান্তা ঢাকার ইডেন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ছিলেন।

গত ২৮ আগস্ট দুপুরে পুলিশ আশুলিয়ার জামগড়ায় একটি বাড়ি থেকে কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো অবস্থায় শান্তার লাশ উদ্ধার করে।

যৌতুক না পেয়ে তাঁকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে এ ঘটনায় শান্তার মামা চাঁন মিয়া বাদী হয়ে তার স্বামী ফরিদুল আলম, তার ভাই ডা. শফিকুল ইসলামসহ অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে আশুলিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দয়ের করেন।

এদিকে কবর থেকে শান্তার লাশ সরিয়ে ফেলা হতে পারে এ আশংকায় পালাক্রমে এতদিন শান্তার কবর পাহারা দিচ্ছেলেন পরিবারের সদস্যরা।

পুলিশ জানায়, গত ৯ সেপ্টেম্বর আদালত শান্তার পরিবারের আবেদনটি মঞ্জুর করে পুনঃ ময়নাতদনেত্মর জন্য একজন ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। এরপর গত ২১ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের বিচার শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রহিমা খাতুন আশুলিয়া থানা পুলিশকে লাশ তোলার জন্য নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটসহ সব ধরনের সহযোগিতার জন্য একটি আদেশনামা পাঠান। শান্তার পরিবারের অভিযোগ, এ পর্যন্ত পুলিশ ওই হত্যা মামলার কোন আসামিকে গ্রেপ্তার না করে বরাবরই রহস্যজনক ভূমিকা পালন করছে।

মামলার বাদী শান্তার মামা চাঁন মিয়া বাংলানিউজকে জানান, পুনঃময়ণা তদন্তের বিষয়টি তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবিদ হোসেন আসামিদের জানিয়ে দেয়। আসামিরা জামগড়াস্থ দরগাহ কবরস্থান কমিটিসহ প্রভাবশালীদের সাথে গোপন বৈঠক করেন।

বৈঠকে উত্তোলনের আগেই কবর থেকে লাশ সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত হয় বলেও দাবি করেন চাঁন মিয়া।

তিনি জানান, আমরা এ খবর জানতে পেরে আশুলিয়া থানার ওসিকে জানাই। পরে পুলিশের পরামর্শেই পালাক্রমে কবর পাহারার ব্যবস্থা করা হয়।

আশুলিয়া থানার অফিসার্স ইন চার্জ (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, যাতে কবর থেকে কোনভাবেই লাশ সরিয়ে ফেলা সম্ভব না হয় সে লক্ষ্যে আমরা নিহতের পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা করেছি।
তবে শান্তার মা শাহানাজ পারভীন পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে বাংলানিউজকে বলেন, শান্তা হত্যাকান্ডের পর পুলিশ কোন আসামিকে গ্রেপ্তার  করেনি। আসামিরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ জানাতো তারা পলাতক।

তিনি জানান, মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আসামিরা হত্যার হুমকি দিচ্ছে। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর শান্তার পরিবারের প থেকে আশুলিয়া থানায় একটি সাধারণ ডাইরি (নং-৯৪৩) করা হয়।

তবে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবিদ হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ময়না তদন্তের রিপোর্টে শান্তার মৃত্যু আত্মহত্যাজনিত বলে উল্লেখ থাকায় কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।

তিনি জানান, আসামীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হত্যা মামলায় নিষ্পত্তি না করে এখন পুনঃময়না তদন্তের রিপোর্ট পর্যন্ত অপো করছি।

তিনি জানান ওই রিপোর্টে যদি হত্যা প্রমানিত হলে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।
 
প্রসঙ্গত, গত ৮ জুলাই আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের উত্তর জামগড়া এলাকার আব্দুল হালিম মাষ্টারের ছেলে প্রবাসী ফরিদুল আলমের সাথে ইডেন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান অর্নাস প্রথম বর্ষের ছাত্রী শান্তার বিয়ে হয়।

বিয়ের পর স্বামী ফরিদুল আলম শান্তার পরিবারের কাছে তিন লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে। এনিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ চলে আসছিল।
 
পরিবারে অভিযোগ, যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্বামী ফরিদুল আলম ও দেবর শফিকুল ইসলাম মিলে গত ২৮ আগস্ট দুপুরে শান্তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার পর ঘরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে প্রচার করে। ফরিদ আলম সৌদি প্রবাসী হলেও বিয়ের পর দেশেই থেকে যান। তার গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে।

বাংলাদেশ সময় ১২০৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।