ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

বরগুনায় আইনজীবীকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২২
বরগুনায় আইনজীবীকে জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা অ্যাডভোকেট মো. হুমায়ূন কবির বাচ্চু

বরগুনা: বরগুনা জেলা আইনজীবী সমিতির সহ সভাপতি ও পৌর শ্রমিক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. হুমায়ূন কবির বাচ্চুকে রোববার রাতে অপহরণ করে কৌশলে এক নারীর সঙ্গে অশ্লীল ছবি তুলে মুক্তিপণ দাবি করে দুর্বৃত্তরা।  

পরে এক ঘণ্টা পর বরগুনার গোয়েন্দা পুলিশ রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।

 

জানা যায়, ওই আইনজীবী প্রতিদিনের মতো রোববার রাত ৯টার দিকে বরগুনা তাঁর ল' চেম্বারে কাজ করে বাসায় ফিরছিলেন। পথে একজন এসে তাকে বলেন স্যার আমার বোন অসুস্থ। তিনি একটি মামলা করবেন। দয়া করে আমাদের বাসায় চলুন।

আইনজীবী রিকশায় চড়ে বরগুনা স্টেডিয়ামের দক্ষিণ পাশে চারতলা একটি ভবনের সিঁড়ি দিয়ে উপড়ে উঠতেই পেছন থেকে আরও দুইজন ছেলে আইনজীবীর পিছু নেয়। চারতলায় ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আরও একজন যুক্ত হয়। চারজন মিলে আইনজীবীকে একটি রুমে ঢুকিয়ে মারধর শুরু করে। কিলঘুষি মারে আর বলে তুই কট। একটু পরে এক তরুণী এসে রুমে ঢুকে আইনজীবীর সঙ্গে প্যান্ট খুলে অশ্লীল ছবি তুলে চলে যায়।

দুর্বৃত্তের মধ্যে শাহিন নামে একজন আইনজীবীকে বলে তোর বউকে ফোন করে ১০ লাখ টাকা দিতে বল। যদি না বলিস তাহলে তোকে খুন করব। আইনজীবী ভয়ে তাঁর স্ত্রীকে ফোন করে টাকা নিয়ে বরগুনা স্টেডিয়ামের পাশে আসতে বলে। কেন স্টেডিয়ামের পাশে আসতে বলেছে এ জন্য নির্যাতনের মাত্রা তারা আরও বাড়িয়ে দেয়।

আইনজীবীর স্ত্রী মিনারা নিশি বলেন, আমি ফোন পেয়ে বরগুনা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম শিকদারকে জানাই। তিনি পুলিশকে জানালে বরগুনা থানার পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশের কয়েকটি দল তাকে খুঁজতে শুরু করে। রাত ৯টা ৪৬ মিনিট পর্যন্ত আইনজীবীর মোবাইল ফোনের লোকেশন বরগুনা স্টেডিয়ামের আশপাশে দেখা যায় বলে নিশ্চিত করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম।

স্ত্রী মিনারা নিশি আরও বলেন, রাত ৯টার দিকে তার ননদকে ফোন করে আমার স্বামী এক লাখ টাকা নিয়ে আসতে বলেন। পরে আমি আমার স্বামীকে ফোন দিলে তিনি জানান, আমাকে বাঁচাতে চাইলে এখনি এক লাখ টাকা নিয়ে চলে আসবে। এরপর তার ফোন বন্ধ পাই।  

ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আইনজীবী নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি আমরা জানার পরে অভিযানের পাশাপাশি বিভিন্ন সড়কের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ অনুসন্ধান করতে থাকি। বরগুনা থেকে বের হওয়ার বিভিন্ন পথে বসানো হয় চেকপোস্ট। রাত সাড়ে ১০টার পরে আহত অবস্থায় অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবির বাচ্চু তাঁর বাসায় ফিরে আসেন।  

তিনি আহত অবস্থায় আমাকে বলেন, চেম্বার বন্ধ করার পরে একজন মুখচেনা লোক জানায় মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কথা আছে। পরে তাকে স্টেডিয়াম এলাকায় নিয়ে যায়। এরপর স্টেডিয়াম এলাকার শিশু পরিবার সংলগ্ন একটি ভবনের চার তলায় নিয়ে হঠাৎ একটি রুমে আটক করে এক নারীকেসহ তাকে বিবস্ত্র করে ছবি তুলে মারধর শুরু করে চার যুবক।

এ সময় তার কাছে প্রথমে ১০ লাখ টাকা পরে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।

তিনি তার স্ত্রীকে টাকা নিয়ে আসতে বললে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে তারা আইনজীবীকে ছেড়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। আমরা আইনজীবীকে সঙ্গে নিয়ে ওই বাসায় অভিযান চালাই। ব্যাংক কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের বাসার চার তলার ওই ফ্লাটে বাড়ির মালিকের ছেলে আরিফ একা থাকেন বলে জানা যায়। তবে আরিফ জানায় তার কাছ থেকে পাশের ফ্লাটের শাহিন নামে এক লোক চাবি নিয়েছিল। শাহিন ওই সময় থেকে পলাতক। আরিফকে রাতে গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়। রাতে চিকিৎসার জন্য বরগুনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় হুমায়ূন কবির বাচ্ছুকে।

গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম সোমবার সকালে জানান, বাড়ির মালিকের ছেলে আরিফকে আইনজীবী শনাক্ত করতে না পারায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তার পাশের ফ্লাটের শাহিনসহ অন্যরা পলাতক।  

বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আহম্মদ বলেন, এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেব।  

বরগুনা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিনা আক্তার বলেন, আইনজীবীর চিকিৎসা চলছে। সুস্থ হলে মামলা করব।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।