ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

আমলানির্ভর পর্ষদ নিয়ে যাত্রা শুরু পর্যটন বোর্ডের

ইশতিয়াক হুসাইন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১০
আমলানির্ভর পর্ষদ নিয়ে যাত্রা শুরু পর্যটন বোর্ডের

ঢাকা: 

 দেশের পর্যটন খাত নব রূপে, নতুন স্বপ্ন নিয়ে পথচলা শুরু করবে এমনটিই আশা ছিল সংশ্লিষ্ট সবার। কিন্তু সোমবার বিশ্ব পর্যটন দিবস সামনে রেখে আমলানির্ভর পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড।

১২ সদস্যের বোর্ডে ৭ জনই সরকারের আমলা।

এই বোর্ড নিয়ে তাই হতাশাই ঝরেছে তাদের কথায়। খোদ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানের কন্ঠেও তাই শোনা গেল না আশাবাদী মন্তব্য।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাশের দেশ নেপাল অনেক আগেই পর্যটন বোর্ড গঠন করে পাল্টে ফেলেছে তাদের পর্যটন শিল্পের চেহারা। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াও পর্যটন বোর্ড গঠন করে আমূল বদলে দিয়েছে এখাতের চিত্র। অথচ ব্যতিক্রম বাংলাধেশ।   পর্যটন কর্পোরেশনের মতো একটি ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশ এগিয়ে নিতে চেয়েছে পর্যটন শিল্প।

দেশের পর্যটন খাতের উন্নয়নে রুগ্ন পর্যটন কর্পোরেশন দিয়ে কার্যকর কিছু না হওয়ায় বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শুরু হয় পর্যটন বোর্ড গঠনের উদ্যোগ। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠনের পর নতুন করে কাজটি শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড আইন-২০১০ কার্যকর হয়।

এরপর গত ১৫ সেপ্টেম্বর বোর্ডের পরিচলনা পর্ষদ গঠিত হয়। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব শফিক আলম মেহেদীকে চেয়ারম্যান করে ১২ সদস্যের এই বোর্ডে সদস্য হিসেবে রয়েছেন অর্থ বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন করে প্রতিনিধি। সরকারের প্রতিনিধিরা যুগ্ম সচিব পদ মর্যাদার। পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানও এই পর্ষদের সদস্য হিসেবে রয়েছেন।

বোর্ডের বেসরকারি সদস্য হিসেবে রয়েছেন ট্রাভেল এজেন্টদের সংগঠন আটাব’র সভাপতি একেএম বারী, ট্যুর অপারেটরদের সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন এএসএম শামছুল আরেফিন, হোটেল, রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ ও সমপর্যায়ভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংগঠনগুলার প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন ড. এম জাকারিয়া হোসেন।

নারী প্রতিনিধি হিসেবে অধ্যাপক মুবিনা খোন্দকার গভর্নিং বডির সদস্য হয়েছেন। পর্যটন বিষয়ে অভিজ্ঞ হিসেবে প্রয়াত শিক্ষাবিদ, গবেষক ও চলচ্চিত্রকার বাদল রহমান এ বডির সদস্য ছিলেন। সম্প্রতি তিনি মারা গেছেন।

প্রত্যেক সদস্য তিন বছর সদস্য হিসেবে থাকবেন।

১২ সদস্যের বোর্ডে ৭ জনই সরকারের আমলা। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রথম এ সংক্রান্ত খসড়া তৈরি হয়। ওই সময় পর্যটন বিষয়ে অভিজ্ঞ কোনো ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান করে বেসরকারি খাতে পর্যটন বিশেষজ্ঞদের প্রাধান্য দিয়ে বোর্ড গঠনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়।

এ বিষয়ে পর্যটন বিশেষজ্ঞ ও পর্যটন বিষয়ক পাক্ষিক বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, নেপাল, সিঙ্গাপুর কিংবা মালয়েশিয়ায় আমাদের মতো আমলাদের দিয়ে কোনো পর্যটন বোর্ড গঠিত হয়নি। এসব দেশে সরকারের একজন বা দু’জন প্রতিনিধি রয়েছেন মাত্র। পদাধিকার বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী প্রধান থাকলেও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে পেশাদার লোক নিয়োগ দেওয়া হয়। আর বেসরকারিখাতে বিশেষজ্ঞদেরই প্রাধান্য থাকে বোর্ডে। কাজী ওয়াহিদুল আলমের আশঙ্কা, পাছে এই বোর্ড মিটিংসর্বস্ব কোনো বডিতে পরিণত হয়ে পড়ে !।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন টোয়াবের এক নেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, স্বাধীনতার পর আমলাদের দিয়ে এদেশে কখনোই ভালো কিছু হয়নি। এই বোর্ড দিয়েও হবে না।  

পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘পর্যটন বোর্ড গঠনকে এখাতের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। বোর্ডের সঙ্গে কর্পোরেশনের কোনো ধরনের দ্বন্দ্বের অবকাশ নেই। বরং পর্যটন খাতের উন্নয়নে সবাই একযোগে কাজ করবো। ’

পর্যটন বোর্ড এখাতের উন্নয়নে কতটুকু কাজ করতে পারবে এমন প্রশ্নের জবাবে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি হেমায়েত উদ্দিন তালুকদার।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।