ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সময় শিউলীর, কিন্তু দাম চড়া গোলাপ-জারবেরার

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২২
সময় শিউলীর, কিন্তু দাম চড়া গোলাপ-জারবেরার

ঢাকা: সকালের মিষ্টি রোদে শিউলি ফুল কুড়ানোর সময় এসে কড়া নাড়ছে দরজায়। গাছতলায় ঝরাপাতার মিছিল দীর্ঘ থেকে এখন দীর্ঘতর।

এর মাঝেও চমৎকার রঙের ফুলগুলো রিক্ততাকে ঢেকে দেয় পরম ভালোবাসায়। সেই ভালোবাসার ঘোড়ায় চেপে বাজারে আসে বাহারি রঙের ফুল। তারপর সেটি স্নিগ্ধ অনুরাগে স্থান পায় প্রিয়তমার খোপায়। সেই দৃশ্যে চোখ জুড়িয়ে প্রেমিক হাসে। সেই হাঁসি হৃদয়ে পুরে কোটি কোটি মানুষ ফুল ভালোবাসে।

ফুলের দোকানগুলোয় কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ফুল বিকিকিনির দৃশ্য দেখলে মনে আসবে এমন দৃশ্য। কিন্তু এ ভালোবাসার যেন কমতি লেগেছে কর্তমান অর্থনৈতিক মূল্য বিচারে। বাজারে বাহারি রঙের প্রচুর ফুল এখন; তারপরও দাম চড়া। তাই বেচা-বিক্রিও আগের তুলনায় কমেছে বলে জানিয়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ফুল ব্যবসায়ীরা।

শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) সারাদিন বিভিন্ন ফুলের বাজার ও দোকান ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারে প্রতিটি গোলাপ মান ভেদে ৮ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২৫ টাকায়। এছাড়া পাইকারি বাজারে জারবেরা ১২ থেকে ২৫ টাকা, গ্লাডিওলাস ৮ থেকে ২০ টাকা ও রজনীগন্ধা ৮ থেকে ১৫ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে। এছাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে এক হাজার গাঁদা ফুল। আর খুচরা বাজারে একই ফুল বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে।

খুচরা বাজারে প্রতিটি গোলাপ ২০ থেকে ৩০ টাকা, জারবেরা ২০ থেকে ৪০ টাকা, গ্লাডিওলাস ২০ থেকে ৩০ টাকা ও রজনীগন্ধা প্রতি স্টিক ১৫ টাকা দরে বেচাকেনা হচ্ছে। গাঁদা ফুলের মালা বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফুল দিয়ে সাজানো তোড়া বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে দুই হাজার টাকায়।

শুক্রবার সরেজমিন রাজধানীর শাহবাগের পাইকারি ও খুচরা ফুলের বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের ফুল দোকানে তুলেছেন। বিভিন্ন স্থানের স্থায়ী ও ভাসমান ফুল ব্যবসায়ীরা ভিড় করছেন শাহবাগের দোকানগুলোয়। ব্যবসায়ী ছাড়াও সাধারণ মানুষ আগে থেকে ফুল কিনতে এসেছেন। এর মধ্যে তরুণ-তরুণীদের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি।

শাহবাগের শাওন পুষ্পালয়ের ফুল বিক্রেতা মো. মহি বিল্লাহ বলেন, ফুলের দাম আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি। বিশেষ করে এক সপ্তাহ হলো একটু বেড়েছে দাম। অনেকেই আসছেন ফুল কিনতে, তবে দাম শুনে আবার অনেকেই চলে যান। তবে আনন্দের ব্যাপার হলো কয়েক বছর আগেও দেশে ফুলের বাজারে হাতেগোনা কয়েক ধরনের ফুল পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে দেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ বেশি হওয়ায় বাহারি রঙের ফুল পাওয়া যাচ্ছে। আর বিশেষ দিনগুলোয় ফুলের চাহিদা থাকে একটু বেশি।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন ধরেন ফুলের মধ্যে জারবেরা, গ্লাডিওলাস, অর্কিড, কসমস, ডালিয়া, টিউলিপ, ঝুমকা লতা, গাজানিয়া, প্লামেরিয়া, চন্দ্রমল্লিকা অন্যতম। এছাড়া বেলি, বকুল আর শিউলী ফুলও এখন পাওয়া যাচ্ছে ফুলের দোকানগুলোয়। কিন্তু ওই, দাম একটু বেশি।

ফুলের দাম নিয়ে শাহবাগ বটতলা ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি ও আনিকা পুষ্প বিতানের প্রোপ্রাইটার মো. আবুল কালাম বাংলানিউজকে বলেন, বাংলা কার্তিক মাস বা নভেম্বর হলো এমন একটা সময়, যখন গোলাপ ফুল গাছ ছেঁটে দেওয়া হয় আগামীতে ভালো ফুল পাওয়ার আশায়। অন্য অনেক ফুলের ক্ষেত্রেও এই কাজ করা হয়। ফলে এখন বাজারে ফুল একটু কম থাকায় দাম কিছুটা বেশি। আশা করছি এক মাস পর দাম আরও কমে আসবে।

এদিকে সারাদেশের ফুল চাষিদের কেন্দ্রীয় প্লাটফর্ম বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্য মতে, সারাদেশে প্রায় ১৬০০ কোটি টাকার ফুলের বাজার গড়ে উঠেছে। এখন সারাদেশেই কম-বেশি ফুলের চাষ হয়।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম বাংলানিউজকে বলেন, দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের ফুল দিয়েই সারা বছরের চাহিদা মেটে। সারা বছর ফুল বিক্রি ভালো হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সকল পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হলেও ফুলের দাম সেভাবে বাড়েনি। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষকরা। সারের দাম বেড়েছে, তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়ে সেচ খরচ বেড়েছে। পুরো বছরের তুলনায় ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন দিবসে ফুল বিক্রি বাড়ে। মূলত এ তিন দিবস ঘিরে ফুল বাণিজ্য চাঙা হয়ে ওঠে। আশা রাখি সরকার এই দিকগুলো দেখবে। আর দিবস ঘিরে ফুলের ভালো প্রস্তুতি রয়েছে আমাদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৮, ২০২২
এইচএমএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।