ঢাকা, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

কর কাঠামোর ত্রুটিতে ভোক্তার নাগালে তামাকজাত দ্রব্য

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২২
কর কাঠামোর ত্রুটিতে ভোক্তার নাগালে তামাকজাত দ্রব্য

ঢাকা: মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু আশানুরূপ করারোপ এবং প্রচলিত কর কাঠামোর ত্রুটির কারণে এসব দ্রব্য সাধারণ মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যেই রয়ে গেছে।

বুধবার (১৬ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত ‘তামাক কোম্পানির বহুল প্রচারিত রাজস্ব মিথ এবং তুলনামূলক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা।

তামাক বিরোধী সংগঠন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি ও ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের চিকিৎসক ডা. মাহবুব সোবহান। তিনি বলেন, বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত আইন ভঙ্গ করে তামাক ব্যবহার বৃদ্ধি, কর ফাঁকিসহ নানা অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু তামাকজাত দ্রব্যের সেভাবে মূল্যবৃদ্ধি হয়নি।  

তিনি আরও বলেন, প্রতি বছর খুব সামান্য পরিমাণে তামাকজাত দ্রব্যের কর বৃদ্ধি করা হলেও প্রচলিত কর কাঠামোর ত্রুটির কারণে এসব দ্রব্যের বিক্রয়মূল্য ভোক্তার নাগালের মধ্যেই থেকে যাচ্ছে। ক্ষতিকর তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এর কর ও মূল্যবৃদ্ধি সবচেয়ে ভালো উপায়।

ডা. মাহবুব বলেন, শুধুমাত্র কর বৃদ্ধির ফলেই ২০০৭-১০ এই তিন বছরে ইউরোপের ৪১টি দেশের ৩৫ লাখের বেশি মানুষকে তামাকজনিত রোগে মারা যাওয়া থেকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু তামাকজাত দ্রব্যের কর বৃদ্ধিতে আশানুরূপ কোনো পরিবর্তন আসেনি।

তিনি বলেন, সরকার ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছে। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলা প্রতিনিয়ত তাদের ব্যবসা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা বাড়াচ্ছে। মূলত দুইটি বিদেশি কোম্পানি দেশের তামাক ব্যবসার সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা শুধু এদেশ থেকে লভ্যাংশই নিয়ে যাচ্ছে না বরং দায়হীনভাবে রেখে যাচ্ছে তামাকের ফলে সৃষ্ট রোগ, রোগাক্রান্ত ব্যক্তি এবং অর্থনৈতিক ও প্রাকৃতিক ক্ষতি।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের অতি পরিচিত একটি মিথ হলো- তামাক কোম্পানিগুলো বিশেষ করে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি সরকারকে সর্বোচ্চ পরিমাণে ট্যাক্স দেয়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। তামাক খাত থেকে অর্জিত রাজস্বের সিংহভাগ ৯৪ শতাংশেরও বেশি আসে জনগণের ভ্যাট থেকে। অর্থাৎ তামাক কোম্পানিগুলো বহুদিন ধরে ভোক্তার দেওয়া ভ্যাটকে নিজেদের রাজস্ব বলে চালিয়ে আসছে।

বক্তারা আরও বলেন, উন্নত দেশ গড়তে হলে রোগ ও স্বাস্থ্য ক্ষতি কমানোর মাধ্যমে স্বাস্থ্যবান জাতি গঠন করা প্রয়োজন। এ জন্য তামাকের ব্যবহার কমানোর কোনো বিকল্প নেই।

তামাকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি সুপারিশও করেন বক্তারা। সেগুলো হলো- সুনির্দিষ্ট কর কাঠামো প্রণয়ন, তামাক নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ও শক্তিশালী করনীতি প্রণয়ন, তামাকের উপরে নির্ভরশীলতা কমিয়ে কর আদায়ে অন্যান্য শক্তিশালী মাধ্যম খুঁজে বের করা, ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সব তামাকজাত পণ্যের ভিত্তিমূল্য ও কর বৃদ্ধি করা, মূল্যস্তর এর সংখ্যা চারটি থেকে কমিয়ে দুটি করা, স্বাস্থ্য ক্ষতি ও স্বাস্থ্য ব্যয় বিবেচনায় রেখে কর কাঠামো পুনর্গঠন করা, খুচরা শলাকা বিক্রয় নিষিদ্ধ করা, অতিসত্বর তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি চূড়ান্ত করা, কর আদায় ব্যবস্থা আধুনিকায়ন করা ও সব ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্য ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে রেজিস্ট্রেশন ও করের আওতায় আনা।

বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুকের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন দ্য ইউনিয়নের কনসাল্ট্যান্ট ফাহিমুল ইসলাম, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিসের কান্ট্রি ম্যানেজার মো. নাসির উদ্দিন শেখ, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী ও কর্মসূচি প্রধান সৈয়দা অনন্যা রহমান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২২
এসসি/আরএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।