ঢাকা, সোমবার, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২০ মে ২০২৪, ১১ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

নিজস্ব সংস্কৃতিতে ফেরার প্রত্যয়ে নবান্ন উৎসব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২২
নিজস্ব সংস্কৃতিতে ফেরার প্রত্যয়ে নবান্ন উৎসব

ঢাকা: আবহমান গ্রামবাংলার লোক উৎসবের নাম নবান্ন। এ উৎসবটি নগরে আয়োজন করে সংস্কৃতিজনরা তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে যেতে চান গ্রামীণ সে পটভূমিতে।

যেখান থেকে বর্তমান প্রজন্ম জানবে বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য।

পিঠা-পুলি-পায়েসের সেই ঐতিহ্যকে নাগরিক জীবনে তুলে ধরতে ২৪তম বারের মতো ঢাকায় আয়োজন করা হয়েছে জাতীয় নবান্ন উৎসব। বরাবরে মতো এবারও এটি আয়োজন করছে জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদ।

বুধবার (১৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মাঠে উন্মুক্ত মঞ্চে বাঁশির মূর্ছনায় শুরু হয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।

উৎসব আয়োজন কমিটির অন্যতম সদস্য মানজারুল ইসলাম চৌধুরী জানান, নবান্ন উৎসবকে দুই পর্বে ভাগ করা হয়েছে। সকালের পর্বে রাখা হয়েছে গান, কবিতা ও নৃত্য। দিনের শেষভাগে একই মঞ্চে থাকছে সাংস্কৃতিক আয়োজন।

বুধবার সকালে নবান্ন উৎসব মঞ্চে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সালমা আকবর, মহাদেব ঘোষ, আবু বকর সিদ্দিক, নাসিমা শাহীন ফ্যান্সি, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি, অনিমা মুক্তি গোমেজ, সালমা আকবর। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস, বহ্নিশিখা, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী।

নৃত্য-গীত-বাদ্যের মাঝে উৎসব মঞ্চে ছিল নবান্ন কথন পর্ব। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শাহিদুর রাশিদ ভূঁইয়া, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। এ পর্বের সভাপতিত্ব করেন জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদের সহ-সভাপতি কাজী মদিনা। নবান্ন কথন পর্বটি সঞ্চালনা করেন পর্ষদের সহ-সভাপতি সঙ্গীতা ইমাম।

নবান্ন বার্তায় কে এম খালিদ বলেন, নবান্ন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্য উৎসব। এটি কৃষকের মুখে এনে দেয় অনাবিল হাসি আর আনন্দ। কৃষিভিত্তিক সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন নবান্ন। এ উৎসব বাঙালি জাতিকে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ করে। এটি বাঙালির জনজীবনে নিয়ে আসে অনাবিল সুখ, শান্তি আর সমৃদ্ধির বার্তা। কৃষিভিত্তিক দেশটিতে নবান্ন উৎসব হয়ে উঠেছে গ্রাম-বাংলার লোকায়ত উৎসব।

এসময় ড. মো. শহীদুর রশিদ ভুঁইয়া বলেন, এদেশে একসময় আমন ধানই সবচেয়ে বেশি আবাদ করা হতো। আর সে ধান ঘরে তোলা হতো হেমন্তে। ফলে এ ঋতু ছিল মানুষের আনন্দ উৎসবের ঋতু। নবান্ন উৎসবের মধ্য দিয়ে সে আনন্দ পরিপূর্ণ রূপ পেত। আজ মরা কার্তিক দূরীভূত হয়েছে। মঙ্গা আজ তিরোহিত হয়েছে। ফলে আজ প্রকৃত অর্থে আনন্দের সঙ্গে নবান্ন পালন করার সময় এসেছে।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, নগরে বসবাস করে আমরা ভুলে যাই যে আমাদের পূর্ব পুরুষদের কেউ না কেউ কৃষক ছিলেন। শহরের তরুণরা জানেন না গ্রামের বৈচিত্র্যময় পিঠা-পুলির কথা। আমরা সেই ঐতিহ্য ও শেকড়ের কথা বলতে চাই তরুণদের। তাদের নিয়ে যেতে চাই শেকড়ে। পাশাপাশি ঋতুভিত্তিক এ উৎসবের মাধ্যমে আমরা দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিকে আরও সুদৃঢ় ভিত্তি দিতে চাই।

জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদের সভাপতি লায়লা হাসান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। তার লিখিত বার্তা পাঠ করেন পর্ষদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম। লিখিত বক্তব্যে লায়লা হাসান বলেন, নাগরিকের যান্ত্রিক জীবনে কিছুটা মাটির গন্ধ ফিরিয়ে দিতে বাংলা ১৪০৬ থেকে ধারাবাহিকভাবে জাতীয় নবান্ন উৎসব উদযাপন পর্ষদের আয়োজনে উদযাপিত হচ্ছে নবান্ন উৎসব।

তিনি বলেন, পিঠা-পুলির সৌরভে নবান্ন কৃষকের কপালের চিন্তারেখা দূর করুক। সোনার বাংলার আবহমান ঐতিহ্য জনজীবনে সব উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনুক।

নবান্ন কথন শেষে উৎসবের মঞ্চে একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন- রূপা চক্রবর্তী, মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল, আহকামউল্লাহ। উৎসব মঞ্চে সকালের পর্বে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্য সংগঠন নৃত্যম, দিব্য, কথক নৃত্য সম্প্রদায়, স্পন্দন, নৃত্যজন ও সৃষ্টিশীল একাডেমি। এছাড়া শিশু সংগঠন শিল্পবৃত্তের পরিবেশনাও ছিল নবান্ন উৎসব মঞ্চে।

নবান্ন উৎসব উপলক্ষে উৎসব প্রাঙ্গণে ছিল বাহারি ধরনের পিঠার স্টল। উৎসবে আসা অতিথিদের জন্য খৈ, মুড়কি, মোয়া ও মুরালির ব্যবস্থাও ছিল।

বুধবার বিকেলে নবান্ন উৎসব উদযাপন মঞ্চে থাকবে শিশু সংগঠনের বৃন্দ আবৃত্তি, গান ও নাচ। দনিয়া সবুজ কুঁড়ি কচি কাঁচার মেলা, স্বপ্নবীনা শিল্পকলা বিদ্যালয়, তারার মেলা সঙ্গীত একাডেমি আবৃত্তি ও সংগীত পরিবেশন করবে। নৃত্য পরিবেশনে থাকবে স্বপ্নবিকাশ কলাকেন্দ্র ও নৃত্যমঞ্চ।

উৎসবের দ্বিতীয় পর্বে একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন শান্তা সরকার, দেলোয়ার বাউল, সময় বড়ুয়া, সুরাইয়া পারভীন, মাহজাবিন রহমান শাওলী, আবিদা রহমান সেতু, রাকিব খান লুবা, মোহাম্মদ মারুফ হোসেন, আতাউর রহমান,  শ্রাবণী গুহ রায়, ফারজানা ইভা, অবিনাশ বাউ, সঞ্জয় কবিরাজ, ফেরদৌসী কাকলি, বিশ্বজিৎ রায়, মনিরা ইসলাম গুরুপ্রিয়া, নবনীতা জায়ীদ চৌধুরী, মেহেদী ফরিদ, তামান্না নিগার তুলি।

দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করবে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, সুরসাগর ললিতকলা একাডেমি, পঞ্চায়েত, সমস্বর, বুলবুল একাডেমি অব ফাইন আর্টস-বাফা, ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী, দৃষ্টি, সুরনন্দন নজরুল চর্চা কেন্দ্র ও ভিন্নধারা।

একক আবৃত্তি পরিবেশন করবেন- রফিকুল ইসলাম, শাহাদাত হোসেন নিপু, ফয়জুল আলম পাপ্পু, বেলায়েত হোসেন, নায়লা তারান্নুম কাকলি, লাবনী পুতুল, আজিজুল বাসার মাসুম, আহসান উল্লাহ তমাল, তামান্না সারোয়ার নিপা, তামান্না তিথি ও ফয়সল আহমদ।

দলীয় নৃত্য পরিবেশনায় থাকবে- ধৃতি নর্তনালয়, ভাবনা, পরম্পরা নৃত্যালয়, কালারস্ অব হিলস, নূপুরের ছন্দ, সিনথিয়া ডান্স একাডেমি ও সুরনন্দন বিদ্যাপীঠ।

বাংলাদেশ সময়: ১২২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২২
এইচএমএস/এমএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।