ঢাকা, সোমবার, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ মে ২০২৪, ০৪ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ওয়াসার রিডিংম্যানের স্বেচ্ছাচারিতা, গ্রাহকদের হাতে ‘ভুতুড়ে বিল’!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৬, ২০২২
ওয়াসার রিডিংম্যানের স্বেচ্ছাচারিতা, গ্রাহকদের হাতে ‘ভুতুড়ে বিল’!

ঢাকা: রাজধানীর পল্লবী এলাকার কালশী ও মুসলিবাজার এলাকায় ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) গ্রাহকরা ‘ভুতুড়ে বিলের’ অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, সরকারি সংস্থাটির রিডিংম্যানের স্বেচ্ছাচারিতায় এমনটি হচ্ছে।

তারা নিজেদের ইচ্ছা ও সুবিধা মতো গ্রাহকদের হাতে পানির বিল ধরিয়ে দিচ্ছেন। কখনও বিল আসে অতিরিক্ত, আবার কখনও কম। ওয়াসার কর্মচারীদের করা এলোমেলো বিলের কারণে মাশুলও গুনতে হচ্ছে তাদের।

গত ১৫ দিনের অনুসন্ধানে রাজধানীর পল্লবী এলাকার এমন চিত্র পায় বাংলানিউজ। গ্রাহকদের কাছে আসা ওয়াসার বাড়তি ও কম বিলের কপিও আছে বাংলানিউজের হাতে।

সূত্র জানায়, পল্লবী এলাকায় ওয়াসার এক রিডিংম্যান গ্রাহকদের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করতে পানির মিটার থেকে নিজের ইচ্ছা মতো রিডিং লেখেন। দুটি কারণে মূলত তারা এ কাজ করেন। প্রথমটি, গ্রাহকদের পানির বিল যাতে কম আসে সেজন্য মিটারের রিডিং কম করা বা লেখা। এর মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের মাসোয়ারা নেন তারা। দ্বিতীয় কারণ, জমে থাকা বাড়তি রিডিংয়ে অজুহাতে বাড়ির মালিকদের কাছে অতিরিক্ত টাকা দাবি করা।

অনেক সময় মিটার রিডিং কমিয়ে লেখার কারণে বাড়তি রিডিং জমতে শুরু করে। কোনো সময় ওয়াসার রিডিংম্যান পরিবর্তন হলে নতুন জন এসে যখন মিটারের অতিরিক্ত রিডিং সমন্বয় করেন, বিল বাড়তে শুরু করে।

সূত্র আরও জানায়, পল্লবী এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে এমন দুই ধরনের ঘটনাই ঘটছে। কখনও দেখা যায়, ওয়াসার কর্মচারীরা বাড়িয়ে বিল করে ‘টু-পাইস’ কামানোর আসায়। অসাধু গ্রাহকরাও তাদের সঙ্গে আঁতাত করেন, বিল কমাতে। যার ফলেই প্রতি মাসেই মাসোয়ারার বিষয়টি চলমান থাকে।

কালশী রোডের সাংবাদিক আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মো. খুরশিদ আলম মিলন। গত অক্টোবরে ওয়াসা থেকে অস্বাভাবিক পানির বিল আসে তার। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার সাত তলা বাড়িতে পানি কিছুটা বেশি-ই দরকার হয়। কিন্তু তাই বলে এক মাসে ১৭ হাজার টাকা বিল আসার কথা নয়। আগের মাসগুলোয় কখনও ৭ হাজার, কখনও ৯ হাজার বিল আসে। কিন্তু ১৭ হাজার টাকা বিল- সরাসরি গলা কাটার সমান। ভুত এসে তো আর পানি খায় না।

তিনি আরও বলেন, একবার শুনলাম ওয়াসার আগের কর্মচারী নাকি মিটারের রিডিং কমিয়ে লিখেছিল। এটা সমন্বয় করতেই নাকি বর্তমান বিলের সঙ্গে আগের বিল সংযুক্ত করেছে। যে কারণে আমার এত বিল এসেছে। আমি তো মাসের বিল মাসেই দিয়ে দিতে চাই। যা বিল আসতো তাই দিতাম। ওই রিডিংম্যানকে আমি তো বলিনি আমার পানির বিল কমিয়ে দিতে! কেনই বা সে পানির রিডিং কমিয়ে দিল। আবার সেই রিডিং সমন্বয় করতে এখন আসছে বাড়তি বিল। বিলের টাকা দিব আমি। হয়রানি ও হবো আমি। এ কেমন সেবা ওয়াসার?

একই এলাকার আরেক ভুক্তভোগী রাজীয়া সুলতানা বলেন, আমার গত দুই মাস ধরে পানির বাড়তি বিল আসছে। আমার পাঁচতলা বাড়িতে আগে বিল আসতো সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকার মধ্যে। চলতি বছরের জুলাই মাসে বিল আসে পাঁচ হাজার টাকা। আগস্ট মাসের বিল আসে সাত হাজার টাকার বেশি। অতিরিক্ত বিল আসার কোনো কারণই খুঁজে পাচ্ছি না।

অভিযোগ করে তিনি বলেন, পাঁচতলা বাড়িতে ৩০-৩৫ জন লোকের বেশি বসবাস করে না। বাড়িতে নেই কোনো কারখানা। তবে কেন অতিরিক্ত বিল আসবে? অতিরিক্ত বিল এলেও যে অতিরিক্ত কোনো সুবিধা পাব-তাও তো হচ্ছে না। সঠিকভাবে পানির সরবরাহ পাচ্ছি না। ওয়াসার লাইন তাদের ইচ্ছেমতো পানি ছাড়ছে। গত বছরও রাত দশটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত সাপ্লাইয়ের পানি দেওয়া হতো। কিন্তু এখন রাতের বেলা ১১ টার পরে পানি ছাড়া হয়। আবার রাত দুইটার সময় বন্ধ করে দেওয়া হয়। আবার ছয়টার দিকে পানি ছেড়ে সকাল আটটা-নয়টার দিকে পানির সাপ্লাই বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওয়াসার লাইনম্যানদের বাড়ির মালিকরা কীভাবে নজরদারি করবে?

অভিযোগ করে মুসলিম বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. সামীম বলেন, আমাদের এলাকায় অতিরিক্ত পানির বিল আসে। সঠিকভাবে সাপ্লাই হয় না। কোনো কোনো সময় বাড়িওয়ালাদের বাইরে থেকে পানি কিনে এনে পানির চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে। আমাদের এলাকার বেশিরভাগ বাড়িওয়ালারা ভয়ে ওয়াসার লোকেদের কিছু বলে না। যদি লাইন কেটে দেয়; ঠিক মতো পানি না দেয় এই ভয়ে।

এসব ব্যাপারে কালশী ও মুসলিবাজার এলাকার ওয়াসার কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলতে খোঁজ করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। তবে, নাম না প্রকাশের শর্তে ওয়াসার এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, পল্লবীর এফ ব্লক এলাকার ওয়াসার রিডিংম্যানের নামে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাকে ওই এলাকা থেকে সরিয়ে অন্য এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গ্রাহকদের সাময়িক সমস্যা হচ্ছে। জমে থাকার রিডিংগুলো সমন্বয় করলে পরবর্তীতে আর সমস্যা হবে না।

তিনি আরও বলেন, ওয়াসার কোনো কর্মচারী কোনো অনিয়ম করলে গ্রাহকদের উচিৎ দ্রুততার সঙ্গে আমাদের জানানো। যারাই অনিয়ম করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাই এসব ব্যাপারে গ্রাহকদের ওয়াসাকে সহায়তা করতেও আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০২২
এমএমআই/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।