ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

২৮তম বিসিএস উত্তীর্ণরা যাবেন কোথায়?

তুহিন শুভ্র অধিকারী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১০
২৮তম বিসিএস উত্তীর্ণরা যাবেন কোথায়?

ঢাকা: গত সাত বছর ধরে পড়াশোনাই করেছি শুধু চাকরির জন্য। তিন বার মৌখিক পরীক্ষা দিলাম, হলো না।

শেষমেষ ২৮তম বিসিএস-এ হলো। সরকার ২৮তম বিসিএস উত্তীর্ণদের নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের ঘোষণা দেওয়ার পর ভেবেছিলাম, যাক চাকরি তো পাচ্ছি। হোক না সে নন-ক্যাডারে। ঘোড়া না হলেও তার লেজ ধরার মতো কিছু পেলাম বুঝি। এখন তো দেখছি লেজেও লাথি মারে।

কথাগুলো বলছিলেন ২৮তম বিসিএস’র চূড়ান্ত পর্বে উত্তীর্ণ রাজধানীর একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক ফরিদুর রহমান শেখ। তার মতো এ রকম অনিশ্চিয়তার মধ্যে রয়েছেন প্রায় ২ হাজার ৭ শ’, যারা ২৮তম বিসিএস’র চূড়ান্ত পর্ব পাশ করে বসে আছেন।

নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা-২০১০ অনুযায়ী ২৮তম বিসিএস উত্তীর্ণদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম শ্রেণীর নন-ক্যাডার পদে নিয়োগের ঘোষণা দেয় সরকার।

তবে গত ২০ সেপ্টেম্বর সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যানের বরাত দিয়ে কয়েকটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়, সব আবেদনকারীকে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। মন্ত্রণালয় থেকে চাহিদাপত্র না আসায় তাদের নিয়োগ সম্ভব হচ্ছে না।

এ কারণে সরকারের সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মন্ত্রণালয়ের এক শ্রেণীর কর্মকর্তার টালবাহানায় ২৮তম বিসিএস উত্তীর্ণদের ক্যারিয়ার ঝুঁকির মুখে পড়েছে। কারণ নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ (বিশেষ) বিধিমালা-২০১০ অনুযায়ী পরবর্তী অর্থাৎ ২৯তম বিসিএস’র ফলাফল প্রকাশ হওয়ার আগেই এসব নিয়োগ শেষ করতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে ২৮তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় এবং ২০১০ সালের ৩ জুন মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

ফরিদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘এমন তো না যে পদ নেই। পদও আছে, নিয়োগ দেওয়ার নিয়মও আছে। অথচ নিয়োগ হচ্ছে না, কারণ মন্ত্রণালয়ের চাহিদাপত্র নেই। এটি আসলে কিছু কর্মকর্তার খামখেয়ালি ছাড়া আর কিছু না। ’
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘মৌখিক পরীক্ষা পাশের পর পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজনরা ধরেই নিয়েছে চাকরি পেয়েছি। কিন্তু এখন যদি চাকরি না হয়, তবে এর ফল হবে মারাত্মক। ’

অনেকেই আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে নাও পারেন বলে আশঙ্কা করেন তিনি।

জানা গেছে, সরকারি চাকরি পাচ্ছেন-এটা নিশ্চিত হয়ে অনেকেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।

এ রকমই একজন মো. মোকসেদুর রহমান সুমন। দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটির চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি এখন বেকার।

তিনি বলেন, ‘সরকারি চাকরি হবে নিশ্চিত জেনে চাকরি ছাড়লাম। এখন তো দেখছি সব হারালাম। ’

প্রায় আত্মহত্যা করার মতো অবস্থায় পৌঁছে গেছেন জানিয়ে তিনি বাংলানিউজকে আরও বলেন, ‘পরিবারকে ভালো চাকরির কথা বলে চাকরি ছাড়লাম। এখন পরিবারের লোকজনও কথা শোনাচ্ছে। চাকরি পেলে চলে যাব বলে গৃহশিক্ষকতার কাজও ছুটে গেছে। ’

মেহেরপুরের প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে সুমন তার এলাকার একমাত্র বিসিএস উত্তীর্ণ ব্যক্তি। তাই পরিবার পরিজনের পাশাপাশি গ্রামের মানুষও প্রত্যাশায় দিন গুনছে। এসব প্রত্যাশার চাপ সামলাতে পারবেন না জেনেই বাড়ি যাওয়াও হচ্ছে না তার।

তিনি বলেন, ‘এলাকায় গেলে মানুষ শুধু চাকরির কথা জিজ্ঞেস করে। তাই চিন্তা করছি চাকনি না পেয়ে বাড়িতেই যাব না। ’

ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়ার অবস্থাও সুমনের মতো। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকার ও রাজনীতি বিভাগ থেকে স্নাতকত্তোর পাশ করা ইখতিয়ার সরকারি চাকরি পাচ্ছেন জেনে ছেড়েছেন একটি সংবাদপত্রের চাকরি।

তিনি বলেন, ‘নিজের খরচ মেটাতে পরিবার থেকে টাকা আনতে হচ্ছে। এতে নিজের মধ্যে এক ধরনের হীনমন্যতা কাজ করে। ’

 মিজানুর রহমান নামের আরেক বিসিএস উত্তীর্ণ রসিকতা করে বলেন, ‘গ্রামের মানুষের কাছে বিসিএস দেওয়ার পর থেকেই হয়ে গেলাম বিসিএস ক্যাডার, চূড়ান্ত ফলাফল দেওয়ার পর হলাম নন-ক্যাডার। আর সাম্প্রতিক ঘোষণায় হলাম জিরো ক্যাডার। ’

তিনি বলেন, ‘২৯তম বিসিএসর ফলাফলের আগে সরকার যদি চাকরি না দেয়, তবে ফলাফল ঘোষণার দিনই মতিঝিলের শাপলা চত্বরে গিয়ে আত্মহত্যা করব। ’

এদিকে, সম্প্রতি স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশের শুধুমাত্র প্রথম শ্রেণীর চাকরিতেই শূন্য পদের সংখ্যা ৩৫ হাজার ৪ শ’ ৬০টি।

বাংলাদেশ সময়: ১২২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।