ঢাকা, বুধবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ মে ২০২৪, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নড়াইল পৌরসভায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার ‘দুর্নীতি’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৩, ২০২২
নড়াইল পৌরসভায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার ‘দুর্নীতি’

নড়াইল: নড়াইল পৌরসভার মেয়র, সচিব, প্রধান সহকারীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে সাড়ে তিন কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন প্যানেল মেয়র কাজী জহিরুল হক।
 
ড্রেন ও জঙ্গল পরিষ্কার, পিআইসি, বৈদ্যুতিক মালপত্র, ওষুধ কেনা, আপ্যায়ন খরচ এমনকি কর্মচারীদের গ্রাইচুইটি, দরিদ্রদের শাড়ি কেনাসহ নানা খাতে মিথ্যা ভাউচারে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা তুলে আত্মসাতের বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন এ প্যানেল মেয়র।


 
বৃহস্পতিবার (০৩ নভেম্বর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পৌরসভায় এসে এসব বিষয় তদন্ত করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. ফখরুল হাসান।
 
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৫ এপ্রিল থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ৭৭টি চেকের মাধ্যমে তিন কোটি ৩৫ লাখ তিন হাজার ৬৭৭ টাকা তোলা হয়। পৌরসভার প্রধান সহকারী শিমুল কুমার ঘোষ, বদলি হওয়া প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. লালু সরদার, বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি রমিচুর রহমানসহ কয়েকজন কর্মচারী এ টাকা উত্তোলন করেন। উত্তোলনকৃত টাকা নানাভাবে আত্মসাৎ করে মিথ্যা বিল-ভাউচার করা হয়।
 
সাত পৃষ্ঠার এ অভিযোগ পত্রে উত্তোলনকৃত চেক এবং কবে কার মাধ্যমে টাকা তোলা হয়েছে, তা উল্লেখ করা হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, বর্তমান মেয়র আঞ্জুমান আরা ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি শপথ নেওয়ার পর থেকেই এসব দুর্নীতির নেতৃত্বে রয়েছেন। পৌর নাগরিকদের টাকা নিজেদের কাজে ব্যবহার করছেন। ইজিবাইকের লাইসেন্স বাবদ উত্তোলিত সাড়ে ১৭ লাখ টাকার ছয় লাখ টাকা জমা দিয়ে বাকি সাড়ে ১১ লাখ টাকা মেয়র নিজে আত্মসাৎ করেছেন। বর্তমান মেয়র গত দুই বছরে কোনো মাসিক সভা করে, তা রেজুলেশ করেননি। সব  উত্তোলন ও ব্যয় পৌর পরিষদের সিদ্ধান্ত ছাড়াই মেয়র এবং সচিব গ্রহণ করেছেন। ব্যয়ের অধিকাংশ খাতেই ক্যাশ বই নেই, বেশিরভাগ দুর্নীতির অর্থ তড়িঘড়ি ভাউচার তৈরি করে ধামাচাপা দেওয়া হয়।
 
দুর্নীতি বিষয়ে প্রধান সহকারী শিমুল কুমার ঘোষ বাংলানিউজকে বলেন, এ বিষয়ে কথা বলার নির্বাহী ক্ষমতা একমাত্র পৌরমেয়রের। তাছাড়া আমারসহ কয়েকজনের নাম এসেছে। সুতরাং আমি কিছু বলতে পারবো না।
 
এছাড়া অভিযোগ রয়েছে, পৌরসভার সচিব মো. ওহাবুল আলমের তত্ত্বাবধানে পৌরসভার সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংকের নড়াইল ও রূপগঞ্জ শাখা, ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক থেকে বিভিন্ন সময়ে অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
 
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সচিব মো. ওহাবুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত চলছে। উত্তোলনের ওইসব টাকা খরচের যথাযথ তথ্য প্রমাণ আমরা উপস্থাপন করছি।
 
অভিযোগকারী প্যানেল মেয়র কাজী জহিরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ওয়ার্ডে কবে জঙ্গল-ড্রেন পরিষ্কার হয়, তা আমিই জানি না। এসব খাতে প্রত্যেক ওয়ার্ডে পাঁচ-সাত লাখ টাকার হিসাব দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে স্পস্ট দুর্নীতির প্রমাণ রয়েছে। এ ধরনের দুর্নীতি নড়াইল পৌরসভায় আগে ঘটেনি।
 
২০২১ সালের নভেম্বরে ঢাকা থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদুক) অভিযোগ করা হলে নড়াইল পৌরসভায় তিন দফা অভিযান চালায় দুদুক। সে সময় হিসাবের বৈধ কোনো কাগজপত্র না পেয়ে ফিরে গেলেও বিষয়গুলো দুদকের অনুসন্ধানের মধ্যে রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা বাংলানিউজকে বলেন, পৌরসভার দুর্নীতি হলে তা নির্বাহী হিসেবে আমার ঘাড়েই বর্তায়। তবে আমি এটুকু বলতে পারি, আমি চলে গেলে যাদের সুবিধা হয়, তারাই আমার বিরুদ্ধে এসব সাজাচ্ছে। ইজিবাইকের টাকা কাউন্সিলররা যা নিয়েছেন, তা হিসাবে আসেনি।
 
বৃহস্পতিবার সারাদিন অভিযুক্তদের আলাদা আলাদাভাবে রুদ্ধদ্বার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. ফখরুল হাসান। এ বিষয়ে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। এখন এর বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০২২
এসআই


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।