ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

‘সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাই’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২২
‘সামুদ্রিক মৎস্য আহরণে যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চাই’ কথা বলছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। 

ঢাকা: সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ আহরণে যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।  

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মৎস্য খাতে যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা আমরা কাজে লাগাতে চাই।

আমরা পারস্পরিক অভিজ্ঞতা ও মতামত বিনিময় করতে চাই। যাতে আমরা একসঙ্গে উন্নয়ন করতে পারি।  

শনিবার (২৯ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশের চিংড়ি খাতের রুপান্তরে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের সহায়তায় উইনরক ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ কর্তৃক বাস্তবায়নকৃত সেইফ অ্যাকুয়া ফার্মিং ফর ইকনোমিক অ্যান্ড ট্রেড ইমপ্রুভমেন্ট (সেফটি) প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।  

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, যে সমুদ্র এলাকায় আমরা সার্বভৌমত্ব পেয়েছি সেখানে বিপুল সংখ্যক মাছ রয়েছে। আছে অপ্রচলিত মৎস্য সম্পদ। সেক্ষেত্রে আমাদের কর্মযজ্ঞ সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১শ বছর মেয়াদী ডেল্টা প্ল্যান করেছে। সে ডেল্টা প্ল্যানের বড় একটি অংশজুড়ে রয়েছে মৎস্য খাত, সমুদ্র ও জলাশয়। সে জায়গায়ও আমাদের কাজ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে এবং তাদের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ। সে অভিজ্ঞতা তারা যেন সম্প্রসারণ করে।  

তিনি বলেন, সেফটি প্রকল্পের কার্যক্রম বাংলাদেশের চিংড়ি খাতে ব্যাপক সহযোগিতা দিয়েছে। প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা কাজে লাগিয়ে মাঠ পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের উৎপাদন দ্বিগুণেরও বেশি হচ্ছে। সেফটি প্রকল্পের সহযোগিতার ওপর ভর করে আরও সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, বিশ্ব এখন গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। কাউকে পেছনে রেখে উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের পারস্পরিক সহযোগিতা একের পর এক সম্প্রসারণ হবে বলে প্রত্যাশা থাকবে। আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের কৃষি ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের সহযোগিতা অবশ্যই প্রশংসনীয়। এজন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সহযোগিতা সম্প্রসারণ আরও প্রয়োজন।  

প্রধান অতিথি আরও যোগ করেন, মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা মেটাতে মৎস্য খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে এ খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এ খাতে বড় সুযোগ রয়েছে। বিশ্বের ৫০টির অধিক দেশে বাংলাদেশের মাছ এখন রপ্তানি হচ্ছে। এসব দেশে বাংলাদেশের রপ্তানিকৃত মাছের স্বাদ ও গুণগতমান ভীষণ প্রশংসা অর্জন করছে। মৎস্য খাতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তা, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও গবেষক, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও বিভিন্ন সংগঠন একসঙ্গে কাজ করায় এ কৃতিত্ব অর্জন সম্ভব হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে আমাদের আন্তরিক ও সচেষ্ট হতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের অভীষ্ট ও লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। এজন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। পৃথিবীতে নানা দুর্যোগ আসছে। সাম্প্রতিক সময়ের প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমাদের মৎস্য খ্যাত বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনাকালেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় মৎস্য খাদ্য উৎপাদন-পরিবহন ও বিদেশে রপ্তানি নানা প্রতিকূলতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারপরও দেশের মানুষ অফুরান প্রাণশক্তি দিয়ে কাজ করেছে বিধায় এফএওর জরিপে করোনাকালে যে তিনটি রাষ্ট্র মৎস্য উৎপাদনে ভালো করতে পেরেছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। মৎস্য উৎপাদনের এ ধারা আমরা অব্যাহত রাখতে চাই।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মানীয় সচিব ড. নাহিদ রশীদ বলেন, বাগদা চিংড়ি বাংলাদেশের অহংকার। চিংড়ি চাষের সফলতা ধরে রাখতে ছোট খামারিদের উদ্ভাবিত চাষ পদ্ধতি বাস্তবায়নে এই খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত সব অংশীজনকে সর্বতোভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হ্যাস বলেন, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন করছে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার, সেক্ষেত্রে সেফটি প্রকল্প একটি অনন্য উদাহরণ যা দুই দেশের সম্পর্কের উষ্ণতা এবং যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক পরিবেশ বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল বিনির্মাণে ভূমিকা রাখছে তার নজির। সেফটি প্রকল্পের আওতায় মৎস্য অধিদপ্তরের ১২০ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। ফলে তারা চিংড়ি খাতে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে লব্ধ জ্ঞান মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণ করছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক বলেন, সেফটি উদ্ভাবিত উন্নত চাষ পদ্ধতি মাঠ পর্যায়ে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করে দেখেছি সেফটি চাষ পদ্ধতি সফল বলেই প্রমাণিত। আমরা মাঠ পর্যায়ে এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ সম্প্রসারণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।

ভিক্টোরিয়া বেকার ইন্টারন্যাশনাল প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট, ফুড ফর প্রগ্রেস, ইন্টারন্যাশনাল ফুড অ্যাসিসটেন্স ডিভিশন, ফরেন এগ্রিকালচারাল সার্ভিস, ইউএসডিএ ফুড ফর প্রগ্রেসের বরাত দিয়ে বলেন, ১৯৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ফুড ফর প্রগ্রেস উন্নয়নশীল দেশগুলোতে কৃষি উন্নয়ন ও আধুনিকায়ন সহ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে কাজ করে। এক্ষেত্রে ইউএসডিএ কৃষিখাতে সম্পৃক্ত শিল্প ও অংশীজনদের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সংযোগ স্থাপনকারী হিসেবে অনবদ্য ভূমিকা পালন করে, যা বাংলাদেশের চিংড়ি চাষের সঙ্গে জড়িত খামারীদের জীবন ও জীবিকা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

প্রকল্প সম্পর্কে সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এস এম শাহীন আনোয়ার চিফ অফ পার্টি, সেফটি প্রকল্প। সেফটি প্রকল্পের বেইসলাইন জড়িপ অনুসারে পূর্বে (২০১৭ সালে) চিংড়ির বার্ষিক গড় উৎপাদন ছিল ২৯৫ কেজি/হেক্টর, তা সেফটি প্রকল্প প্রস্তাবিত উন্নত চাষের ছয়টি পদক্ষেপ অনুসরণ করার পরে ২৫ হাজার চিংড়ি চাষীর গড় উৎপাদন ২০২১ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৬৬৪ কেজি/হেক্টর যায় ১২৫% বেশি। প্রকল্পটি চাষের জন্য নির্দিষ্ট প্যাথোজেন মুক্ত পোস্ট লারভা (এসপিএফ পিএল) বা বিশেষ রোগমুক্ত পোনা ব্যবহার, উন্নতমানের খাদ্য, জৈব নিরাপত্তা সহ অনান্য কয়েকটি বিষয় অনুসরণ করতে উৎসাহিত করে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, ইউএসডিএ এর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশে নিযুক্ত কর্মকর্তা, সেফটি প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও গবেষক, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি এবং চিংড়ি খাতের অংশীজনরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০২২
জিসিজি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।