ঢাকা, রবিবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

মিয়ানমারের সিমে যোগাযোগ, রোহিঙ্গাদের দিয়ে আনতেন ইয়াবা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২২
মিয়ানমারের সিমে যোগাযোগ, রোহিঙ্গাদের দিয়ে আনতেন ইয়াবা উখিয়ার ইয়াবা কারবারের গডফাদার এরশাদুলকে গ্রেফতার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর

ঢাকা: রোহিঙ্গা নাগরিকদের ব্যবহার করে মিয়ানমার থেকে আনাতেন ইয়াবা। ঢাকার ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেই ইয়াবা মাছের চালানের সঙ্গে কখনো পাঠাতেন ট্রাকে কখনো বাসে।

এরপর নিজে ফ্লাইট ধরে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আসতেন। ঢাকায় পৌঁছে ইয়াবার চালান রিসিভ করাসহ ডিলারদের সঙ্গে লেনদেন নিজেই করতেন কক্সবাজারের উখিয়ার ইয়াবা কারবারের গডফাদার এরশাদুল হক (৩২)।

এলাকায় ক্রিকেটার পরিচয়ের আড়ালে প্রায় তিন বছর ধরে ইয়াবা কারবার চালিয়ে আসা এরশাদুলের বিষয়ে সম্প্রতি জানতে পারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। মিয়ানমারের সিম ও এনক্রিপটেড অ্যাপস ব্যবহার করে ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ইয়াবার কারবার করতেন তিনি।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় এক কোটি টাকা মূল্যের ৩৩ হাজার পিস ইয়াবাসহ এরশাদুল হককে গ্রেফতার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা মেট্রো উত্তর।

বুধবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অধিদপ্তরের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএনসি ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) উপ-পরিচালক রাশেদুজ্জামান।

তিনি বলেন, আমরা প্রায় এক মাস আগে এরশাদুলের ইয়াবা সিন্ডিকেট সম্পর্কে জানতে পারি। এরশাদুলের সঙ্গে সখ্য তৈরির জন্য আমরা সোর্স নিয়োগ করি। গত ২৪ অক্টোবর রমনা সার্কেলের পরিদর্শক তমিজ উদ্দিন মৃধা ক্রেতা সেজে দুই হাজার পিস ইয়াবা কেনার দেন-দরবার করেন। এ সময় চক্রের সহযোগী সদস্য হুমায়নকে স্ত্রীসহ ঢাকার দক্ষিণখান এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে এরশাদুলের বিষয়ে জানা যায়।

রাশেদুজ্জামান বলেন, জানতে পারি উখিয়া ও টেকনাফ এলাকার ইয়াবার মূল গডফাদার এরশাদুল। তিনি ইয়াবার একটি বড় চালান নিয়ে দুই-একদিনের মধ্যে ঢাকায় অবস্থান করবেন। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্নেষণ করে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এরশাদুলকে ৩৩ হাজার পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়।

ডিএনসির এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতার এরশাদুল হক একটি সরকারি কলেজ থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেছেন। তিনি নিজেকে কক্সবাজার জেলা ক্রিকেট টিমের সাবেক ক্যাপ্টেন বলে দাবি করেছেন। উখিয়ায় পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া তার একাধিক মাছের প্রজেক্ট রয়েছে। এই মাছের প্রজেক্টের আড়ালে তিনি ইয়াবার ব্যবসা করতেন। মাছ পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ট্রাকের মধ্যে বিশেষ কায়দায় ম্যাগনেট ব্যবহার করে ঢাকায় ইয়াবার বড় চালান নিয়ে আসতেন।

এক প্রশ্নের জবাবে রাশেদুজ্জামান বলেন, এরশাদুল সরাসরি মিয়ানমারের ইয়াবার ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। নৌপথে অবৈধভাবে মিয়ানমারে যাতায়াত করা রোহিঙ্গা নাগরিকদের সহায়তায় ইয়াবার চালান আনতেন টেকনাফে।

এরপর তিনি নির্ভরযোগ্য সোর্স ও বাহকের মাধমে ঢাকায় ইয়াবা পাঠাতেন কখনো বাসে কখনো ট্রাকে। তবে তিনি নিজে কখনো ইয়াবা বহন করতেন না। ইয়াবার চালান ঢাকায় পাঠিয়ে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকতে নিজে প্লেনে ঢাকায় এসে লেনদেন করতেন।

ঢাকা ও মিয়ানমারের ইয়াবা ডিলারদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য বিভিন্ন এনক্রিপটেড অ্যাপস ব্যবহার করতেন এরশাদুল। তার মোবাইল ফোন বিশ্লেষণ করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। জব্দ চালানের পূর্বেও একাধিকবার ইয়াবার বড় চালান ঢাকার পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করেছেন তিনি।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, পাইকারিতে মিয়ানমার থেকে সরাসরি ইয়াবা সংগ্রহ করতেন এরশাদুল। তিনি পিস প্রতি ৮০ টাকায় কিনে ঢাকায় বিক্রি করতেন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। নৌপথে ইয়াবার চালান আনার ক্ষেত্রে তিনি একাধিক রোহিঙ্গাকে ব্যবহার করতেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২২
পিএম/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।