ঢাকা, শুক্রবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ভাঙল সাধুর মিলন মেলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২২
ভাঙল সাধুর মিলন মেলা

কুষ্টিয়া: বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের তিরোধান স্মরণোৎসবের শেষদিনে সাধুর সঙ্গ সাঙ্গ করে আপন ঠিকানায় ফিরেছেন দূর দূরান্ত থেকে ছেউড়িয়ার তীর্থধামে আসা বাউল, সাধু-ভক্ত, অনুসারীরা।

আগত ভক্ত অনুসারীরা মঙ্গলবার দুপুরে পূর্ণসেবা গ্রহণের মধ্য দিয়ে নিজস্ব ঘরানার আচার অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছেন।

বুধবার (১৯ অক্টোবর) সকাল থেকেই ৩দিনের সাধুসঙ্গের ইতি টানতে সঙ্গে আনা গাট্টি, বোঁচকা গুছিয়ে শেষবারের মতো ভক্তদের সাথে ভক্তি-কুশল বিনিময়ের মধ্য দিয়ে অশ্রুভরা চোখে বিদায় নিয়ে বাউলরা আখড়াবাড়ি ছেড়ে রওয়ানা হয়েছেন নিজ নিজ আশ্রমের উদ্দেশ্যে। তারা বলছেন, এই মহামিলনের শিক্ষা মানবপ্রেম ছড়িয়ে দেবেন দেশ থেকে দেশান্তরে।

আখড়া বাড়িতে অনুষ্ঠিত তিরোধান দিবসের ৩দিনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে উৎসবকে কেন্দ্র করে জমজমাট আখড়াবাড়ি আবার বছর জুড়ে রয়ে যাবে আপন রূপে। তাদের গুরু বাণী ও সবকিছুর মূলে পরম মমতায় শ্রদ্ধাভরে গুরুকে বারবার প্রণাম ও নানা রকম ভক্তি জানিয়ে বিদায় নেন শিষ্যরা। তাদের আবার দেখা হবে লালনের দোল অনুষ্ঠানে।

বাউল ফকির আর সাধুদের ছাড়াই নাম মাত্র অনুষ্ঠানিতায় বুধবারও সন্ধ্যায় লালন মঞ্চে আলোচনা সভা ও লালন সংগীত পরিবেশিত হবে রাতভর।

 

বিদায়বেলায় রাজশাহী থেকে আসা ফকির আমিরুল শাহ অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন, সাধুদের সব কিছুর মূলে গুরু ভক্তি। গুরুকে ভজেই সর্বদা তারা পরমত্মার সন্ধান করে ফেরে। সেই গুরুকে বারবার প্রণাম ও ভক্তি জানিয়ে শিষ্যরা বিদায় নিলেও আবারও তারা ঘুরে ঘুরে আসেন গুরুর এই তীর্থধামে। তাদের যে গুরুর চরণ স্পর্শ করা বড়ই দরকার। নইলে সে তো পাবে না আর দ্বীন-দরিয়ার পাড়।

ঢাকা সাভার থেকে আসা এনাম শাহ বলেন, সমাজের অসঙ্গতি, সাম্প্রদায়িকতা, মানুষে মানুষে অযথা হানাহানি দূর করে চিরন্তন মানবধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন লালন। সাঁইজি তার পদাবলী ও বাণীতে মানুষকে প্রকৃত শুদ্ধ মানুষ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন। তাই এই উৎসব কেবল উৎসব নয় এখান থেকে লালনের এমন শিক্ষা ও মানবপ্রেম ছড়িয়ে দেবেন দেশব্যাপী।

লালন অনুসারী হৃদয় শাহ জানালেন, সারা বছরের বহুল প্রতিক্ষীত এই মহামিলনে ঘটে যাওয়া সাধু সঙ্গ প্রতিটা ভক্ত অনুসারীদের মধ্যে উৎসারিত। তারা এই সঙ্গকে আত্মধারণ করে ফিরে যাবেন আপন আলোয়। বাউল শিরোমনি লালন শাহর ওফাত দিবসে অনুসারীদের মাঝে এক নিবির আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সাঁইজির যে দর্শন আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্বের অনেক দেশের মানুষকে আকৃষ্ট করেছে, সেটা নিছক উৎসব পালনের কারণে নয়। এটা আত্মস্বপ্ন থেকে আত্মশুদ্ধির পথে নিয়ে যায়। যখন জ্ঞান সাধনার আত্মতৃষ্ণা ক্রমে বৃদ্ধি পায়। সে কারণে সাঁইজির ভাবাদর্শে একে অন্যের সান্নিধ্যে এসে গানে গানে প্রবেশ করেন মায়ার জগতে।

 

বুধবার দুপুরে আখড়াবাড়ী ঘুরে দেখা যায়, ১৬ অক্টোবর থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত ৩দিনের এই আয়োজনে এবার উৎসুক দর্শনাথীদের ভীড়ে তিল ধারনের ঠাঁই ছিল না। তবে এসময় খেলাফতধারী সাধুদের চোখে পড়েনি খুব একটা। ঘুরে ফিরে স্থানীয় বাউলদেরই চোখে পড়ে। খেলাফতধারী সাধু না থাকলেও থেমে নেই অনুষ্ঠান। দর্শনার্থীদের সমাগম থাকায় মেলার স্টলগুলোতে সারাক্ষণই ভিড় ছিল।  নাগরদোলা ঘুরছে তার আপন গতিতে। মেলায় আসা দোকানীরা জানালেন বিকিকিনিও বেশ ভালো।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় লালন একাডেমির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলামের সভাপতিত্বে বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় সমাপনী দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী এবং প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড: সরোয়ার মুর্শেদ। আলোচনা সভা শেষে রাতভর চলবে লালন একাডেমীর শিল্পীবৃন্দ ও দেশের খ্যাতনামা শিল্পীদের পরিবেশনায় লালন সংগীতানুষ্ঠান।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০২২
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।