ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গল্প-আড্ডায় সাংবাদিক পীর হাবিবকে স্মরণ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২২
গল্প-আড্ডায় সাংবাদিক পীর হাবিবকে স্মরণ সাংবাদিক পীর হাবিবুর রহমানের স্মরণসভায় বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম | ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: স্মৃতিচারণা, গল্প ও আড্ডায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রয়াত নির্বাহী সম্পাদক পীর হাবিবুর রহমানের স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের কার্যালয়ে ‘স্মরণে-আড্ডায় পীর হাবিবুর রহমান’ শীর্ষক এই স্মরণসভা আয়োজিত হয়।

এতে পীর হাবিবুর রহমানকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের পরিচালক ও বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, কালের কণ্ঠের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী, ডেইলি সান সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের সম্পাদক জুয়েল মাজহার, ঢাকা প্রকাশের সম্পাদক মোস্তাফা কামাল, কবি মোহন রায়হান, পীর হাবিবুর রহমানের ছোট ভাই ও সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, পীর হাবিবুর রহমানের ছেলে আহনাফ ফাহমিন অন্তর প্রমুখ।



বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, পীর হাবিবুর রহমান সম্পর্কে যেন আমার ভাই ছিলেন, বন্ধু ছিলেন, সহকর্মী ছিলেন। ও খুব আড্ডাপ্রিয় ছিল। খুব আড্ডা দিতে পছন্দ করতো। পীর হাবিবুর রহমানের সত্যবাদিতা আমাকে বিমোহিত করেছে। সমকালীন রাজনৈতিক বিষয়ে তার ক্ষুরধার লেখনি দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দিতো। তার লেখায় সমাজের কালো শক্তি সব সময়ই ক্ষুব্ধ হতো। তিনি তাদের চোখ রাঙানিকে ভয় পেতেন না। তিনি যে দল ভালোবাসতেন, সেই দলকে নিয়েও সমালোচনা করেছেন প্রচুর।

কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, আমাদের আঙিনায় একটা বড় বৃক্ষ ছিল। সেই বৃক্ষটি যেন এখন কাটা পড়ে গেছে আর জায়গাটা ফাঁকা হয়ে আছে। কোনো কোনো মানুষ এমন বড় বৃক্ষের মতো হয়। পীর হাবিব তেমন মানুষ ছিলেন।



কালের কণ্ঠের সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী বলেন, তিনি কেমন লোক ছিলেন সেটি তার লেখায় প্রকাশ পায়। তিনি সরাসরি কথা বলেন, সত্যি কথা বলেন, এবং মনের কথা বলেন। এমন লেখকের অভাব বড্ড বেশি এবং তা আরও কমে যাচ্ছে। আমরা তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

ডেইলি সান সম্পাদক এনামুল হক চৌধুরী বলেন, আজকের দিনে তো আমরা রেফারেন্স খুঁজতে গুগল ব্যবহার করি, যা খুব সহজেই পেয়ে যাই। কিন্তু যখন এভাবে গুগল ছিল না, তখন রাজনীতির কিছু জানার জন্য আমরা পীর হাবিবকে স্মরণ করতাম। আমার মতে তিনি ছিলেন একটি পলিটিক্যাল এনসাইক্লোপিডিয়া।



বাংলানিউজের সম্পাদক জুয়েল মাজহার বলেন, প্রচণ্ড রসিক মানুষ ছিলেন পীর হাবিবুর রহমান। একদিকে যেমন রিপোর্টার ছিলেন, তেমনি ছিলেন রাজনীতির ধারাভাষ্যকার। তিনি যে কলামগুলো লিখতেন, তাতে তার নিজস্ব পাঠক শ্রেণি গড়ে ওঠে। তিনি শুধু পেশাজীবী সাংবাদিক ছিলেন না, ছিলেন বহুমুখী মানুষ। এমন মানুষ খুব বিরল। আপনারা দেখেছেন, তিনি টকশোতে গেলে টকশো প্রাণ পেতো। তার প্রকাশনাগুলো এখন গ্রন্থ আকারে করা যেতে পারে।

ঢাকা প্রকাশের সম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, মানুষ আজ যেখানে ভীষণ স্বার্থপর, যেখানে কথা বলা মানুষ পাওয়া যায় না, সেই জায়গা থেকে আজকের জায়গায় বন্ধু হিসেবে পীর হাবিব একটা উদাহরণ। ভীষণ আড্ডাবাজ মানুষ ছিলেন তিনি। একটা জটিল সময়কেও হালকা করে দিতেন আড্ডার মাধ্যমে। তাঁর রাজনৈতিক বিশ্লেষণ ছিল অসামান্য। তিনি যে কঠিন ভাষায় শক্ত কথা বলতেন, তা অনন্য। পীর হাবিবের এই অভাব প্রকৃতভাবে কখনোই পূরণ হবে না।



পীর হাবিবুর রহমানের ছোট ভাই সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ বলেন, ভাই-বোনের মধ্যে আমাদের পারিবারিকভাবে অসম্ভব ভালোবাসা জড়ানো ছিল। আমরা ভাই হলেও বন্ধু ছিলাম। বাইরে ভাই ডাকলেও বাসায় নাম ধরে ডাকতাম। এতটা স্নেহ করতো যে, তাকে নিয়ে আমি আর এখন কথা বলতে পারি না। রাতের বেলা ঘুমাতে গেলে ভাইয়ের কোনো একটা কথা মনে হয়, তারপর একে একে বিভিন্ন কথা ভাবনায় এসে সারা রাত আর ঘুমাতে পারি না। সুনামগঞ্জের ইতিহাসে তাকে নিয়ে যে শোকসভা, এর মতো এত বড় জমায়েত এর আগে হয়নি কখনো।

ছেলে আহনাফ ফাহমিন অন্তর বলেন, বাবা সব সময় বলতেন আমার ভোগ-বিলাসিতার কোনো দরকার নেই। আমি মানুষের জন্য লেখালেখি করে যেতে চাই। ক্যানসারের সময়ও বাবা লেখা ছাড়েননি। বাবা সব সময় মাথা উঁচু করে বেঁচে যেতে চেয়েছিলেন। মাথা উঁচু করেই তিনি বেঁচে ছিলেন।



সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, পীর হাবিবুর রহমান একজন সাহসী কলম সৈনিক ছিলেন। সাহসী কলমযোদ্ধাকে হারিয়ে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তবে আমাদের সবাইকে তার সাহসিকতা থেকে সাহস নিতে হবে।

সভায় বাংলাদেশ প্রতিদিন, কালের কণ্ঠ, ডেইলি সান, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের সংবাদিক এবং পীর হাবিবুর রহমানের পরিবারের সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২২
এইচএমএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।