ঢাকা, শনিবার, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ মে ২০২৪, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমরজিৎ রায় চৌধুরীকে শেষ শ্রদ্ধা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২২
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমরজিৎ রায় চৌধুরীকে শেষ শ্রদ্ধা

ঢাকা: শ্রদ্ধার ফুলে 'দেশপ্রেমিক, নিভৃতচারী' শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরীকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা।

সোমবার (১০ অক্টোবর) রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট এই আয়োজন করে।

সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরীর মরদেহ নিয়ে আসা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এরপর তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ চারুশিল্প সংসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) চারুকলা অনুষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, ঢাকার স্থাপত্য বিষয়ক গ্রন্থ প্রণয়ন কমিটি, ঢাকা আর্ট কলেজ, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর। শেষে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ৷

সমরজিৎ রায় চৌধুরীর ছেলে সুরজিৎ রায় চৌধুরী ও মেয়ে শর্বরী রায় চৌধুরীও এসেছিলেন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।
সু
রজিৎ রায় চৌধুরী বলেন, বাবা ছিলেন আমাদের বন্ধু। এমন কোনো বিষয় নেই যা বাবার সঙ্গে আমি আলোচনা করিনি৷ বাবার কাছে আমি নানা সমস্যার সমাধান খুঁজতাম। বাবা তার শেষ মুহূর্তে আমাকে প্রাণভরে আশির্বাদ করে গেছেন।

বরেণ্য চিত্রশিল্পী হাশেম খান বলেন, সমরজিৎ রায় চৌধুরীর নামের সঙ্গে এক আভিজাত্য জড়িয়ে রয়েছে। এ আভিজাত্য তার অহংবোধের নয়, এ ছিল কেবল তার নিষ্ঠা ও ছাত্রদের প্রতি মমত্ববোধ ও দায়িত্ববোধের। এভাবেই তিনি যুগে যুগে তার নিকটজনের বড় প্রিয় পাত্র হয়ে উঠেছিলেন।

হাশেম খান শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরীর শিল্পীসত্তা নিয়ে বলেন, তিনি কত বড় মাপের শিল্পী ছিলেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি রঙ ও রেখায় বাস্তববাদিতা বা কল্পনার যে দৃশ্যকল্প এঁকেছেন, তাতে তিনি নিজস্ব এক শিল্পভাষা তৈরি করেছেন।

নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার মরদেহে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, সমরজিৎ রায় চৌধুরী নিভৃতচারী শিল্পী ছিলেন৷ তার শিল্পকর্মে রঙ ও রেখার এক অপূর্ব সমন্বয় দেখি। আমরা যখন মেলা বা অসাম্প্রদায়িক কোনো চরিত্রের ছবি আঁকতে বলেছি, তখন তিনি ঠিক যুৎসই চিত্রকর্মটিই এঁকেছেন। তাকে যখন যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তখন তিনি সে দায়িত্ব ঠিকমত পালন করেছেন।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, আমাদের মহান স্বাধীনতার যে অর্জন, বাহাত্তরের সংবিধান তা অলঙ্কৃত করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে কজনের ওপর আস্থা রেখেছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সমরজিৎ রায় চৌধুরী। তিনি আজীবন বাংলা সংস্কৃতিকে লালন করেছেন, অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ধারণ করেছেন। দেশপ্রেমিক মানুষটিকে হারালাম আমরা।

এর আগে সোমবার সকাল ১০ টার দিকে সমরজিৎ রায় চৌধুরীর মরদেহ ল্যাব এইড হাসপাতালের হিমঘর থেকে নিয়ে আসা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে। সেখানে তার মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান।   আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।

চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনসহ চারুকলা অনুষদের শিক্ষকরা এ সময় শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরীর মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
সত্তর দশকের পরবর্তী সময়ে চিত্রকলায় নিরীক্ষাধর্মী কাজে যার নামটি উচ্চারিত হয়েছে বারবার, সেই প্রথিতযশা শিল্পী সমরজিৎ রায় চৌধুরী মারা যান গত রোববার (৯ অক্টোবর) বিকেলে।

তিনি বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি আক্রান্ত হয়েছিলেন নিউমোনিয়ায়।

সমরজিৎ রায়ের জন্ম  ১৯৩৭ সালে৷ তিনি গ্রাফিক ডিজাইনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করলেও প্রথম থেকেই সৃজনশীল সুকুমার শিল্পচর্চা করেছেন এবং নিরীক্ষাধর্মী শিল্পচর্চার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
চিত্রকলায় বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০১৪ সালে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে, পেয়েছিলেন শিল্পকলা পদকও।

সমরজিৎ রায় ১৯৬০ সালে তৎকালীন সরকারি আর্ট ইনস্টিটিউট (বর্তমান ঢাবির চারুকলা অনুষদ) গ্রাফিক ডিজাইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ১৯৬০ ঢাবির চারুকলা অনুষদে যোগ দেন এবং সেখানে ৪৩ বছর চাকরিজীবন শেষে অধ্যাপক হিসেবে ২০০৩ সালে অবসর নেন। পরবর্তীতে তিনি শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজির চারুকলা এবং প্রদর্শন কলা বিভাগের ডিন হিসেবে ২০১০ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি ঢাবিতে সুপারনিউমারেরি অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।

কমার্শিয়াল আর্ট বা গ্রাফিক ডিজাইনে স্নাতক অর্জন করলেও দ্রুত তিনি সৃজনশীল চিত্রশিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ১৯৮৩ সালে অনুষ্ঠিত তার প্রথম একক চিত্র-প্রদর্শনী হয়।

প্রথমদিকে তিনি প্রাকৃতিক নিসর্গ, গ্রামীণ জীবন ও নাগরিক বিষয় নির্ভর তেলরঙ ছবি আঁকতে উদ্যোগী ছিলেন। পরের তিন দশকে তিনি নিজেকে ক্রমাগত বিবর্তিত করেছেন বিষয় নির্বাচনে, রঙ-ব্যবহারে এবং উপস্থাপনার আঙ্গিকে।

সাদৃশ্যমূলক দৃশ্য-বর্ণনার চাইতে সাংকেতিক আকার বা প্রতীকের দিকে ঝুঁকেছেন বেশি। নানা রকম জ্যামিতিক আকার, ছোট ছোট ত্রিভুজই ছিল তার বেশি পছন্দের, বা চতুষ্কোণ আকারও ব্যবহার করেছেন। তার রঙ নির্বাচন ছিল হালকা ও মিশ্র। বর্তমান শতাব্দীর শুরু থেকেই সমরজিৎ অধিকতর মানব-মানবী ও পাখিনির্ভর ছবি এঁকেছেন। এক্ষেত্রে উপস্থাপনায় ভারী কালো রেখা ও উজ্জ্বল রঙ ব্যবহার করেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১০, ২০২২
এইচএমএস/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।