ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

কলেজ অধ্যক্ষকে অবৈধভাবে বরখাস্ত করেছেন সভাপতি!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০২২
কলেজ অধ্যক্ষকে অবৈধভাবে বরখাস্ত করেছেন সভাপতি!

রাজশাহী: গভর্নিং বডির সভাপতির শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় কলেজ অধ্যক্ষকে বরখাস্ত করা হয়েছে! কেবল তাই নয়- করা হয়েছে মারপিটও। আজ সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগই করেছেন ওই কলেজের ভুক্তভোগী অধ্যক্ষ।

ঘটনাটি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরের শহীদ নাদের আলী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের। ওই কলেজের ভুক্তভোগী অধ্যক্ষ রুহুল আমিন তাকে মারপিট, অবৈধভাবে বরখাস্ত করা ও সভাপতির দুর্নীতির প্রতিবাদে বুধবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন- কলেজ অধ্যক্ষ রুহুল আমিন। এতে অধ্যক্ষ অভিযোগ করে বলেন, ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির কার্যক্রম চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি শুরু হয়। সেই সময়ে এই কমিটির সভাপতি মাহাবুব আলম বাবুর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সভাপতি অষ্টম শ্রেণি পাস হওয়ায় তিনিই তার নিয়োগ নিয়ে প্রথম প্রতিবাদ করেছিলেন। এই বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকেই সভাপতি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় কমিটির সভাপতি গত ১২ মে দুইজন শিক্ষক প্রতিনিধির সামনে জোরপূর্বক অফিস থেকে ১০নং রেজুলেশন খাতা নিয়ে যান। এরপর তিনি এই ঘটনায় পুঠিয়া থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

তিনি বলেন, ২৩ মে তিনি রেজুলেশন বইয়ের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার মামলা করলে ২৫ মে তারিখ বিবাদী পক্ষের বরাবর নোটিশ জারি হয়। কিন্তু কোর্টের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও সভাপতি আইন অমান্য করে ৮ জুলাই তাকে বরখাস্তের রেজুলশন করেন। এই রেজুলেশন করার জন্য সদস্যদের কাছ থেকে ফাঁকা খাতায় স্বাক্ষর নেন। পরবর্তীতে সভাপতি তার নিজের ইচ্ছামত মনগড়া আলোচ্যসূচী সংযোগ করে বরখাস্তের রেজুলশন তৈরি করেন। বরখাস্তের এই রেজুলেশন সম্পর্কে সদস্যরা অবহিত নন বলেও জানান তিনি।  

এরপর এই অবহিত না থাকার বিষয়টি পরিচালনা পর্ষদের নয় জন সদস্য লিখিতভাবে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানকে জানান। কিন্তু বোর্ড চেয়ারম্যান এখন পর্যন্ত কোনো প্রকার পদক্ষেপ না নেওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। এছাড়া সভাপতির নানাবিধ অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রতি অতিষ্ট হয়ে পরিচালনা পর্ষদের নয় জন সদস্য নিজ নিজ পদ থেকে গত ৬ থেকে ৮ আগস্ট তারিখের মধ্যে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন এবং পদত্যাগপত্র ডাকযোগে সভাপতির কাছে এবং হাতে হাতে শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও অধ্যক্ষকেও জমা দেন।

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যক্ষ আরও বলেন, এরপর সভাপতি প্যাড ও স্বারক নম্বর ছাড়াই একটি সাদা কাগজে বরখাস্তের চিঠি লিখে পিয়নের হাত দিয়ে তার বাসায় পাঠিয়ে দেন, যা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। একজন অধ্যক্ষকে বরখাস্ত করতে হলে পর পর তিনবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে হয়। কিন্তু তিনি কোনো নোটিশ আজও পাননি।

অধ্যক্ষ বলেন, গত ১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানের কাজ শেষ করে দুপুর ১টার দিকে তিনি জরুরি কাজে বাসায় গেলে এই সুযোগে সভাপতি অবৈধভাবে তার মনোনীত ১৪তম শিক্ষককে অধ্যক্ষের চেয়ারে বসান। পরে অফিসের নির্ধারিত তালা না দিয়ে একটি নতুন তালা লাগিয়ে দেন। পরে তিনি বিকেলে গিয়ে অফিসের নির্ধারিত তালা লাগিয়ে আসেন। পরদিন ২ অক্টোবর সকাল আনুমানিক ৭টার দিকে সকলের সামনে তার লাগানো তালা ভেঙ্গে ফেলেন সভাপতি। এরপর তার বাসায় গিয়ে সভাপতি তার গেঞ্জির কলার ধরে মারতে শুরু করেন। এ সময় তার স্ত্রী গিয়ে প্রতিহত করেন। পরে স্থানীয়রা গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন।

এদিকে, অধ্যক্ষের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি মাহবুবুল আলম বাবু বলেন, অধ্যক্ষ রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে নানাবিধ দুর্নীতি রয়েছে। তিনি বিভিন্ন সময়ে মনগড়া রেজুলেশন করেছেন যা তিনি জানেন না। এছাড়াও শিক্ষকদের সঙ্গে অধ্যক্ষের সম্পর্ক ভালো নেই। আর তিনি অধ্যক্ষকে মারেননি। উপরোন্ত তাকেই অধ্যক্ষ ও স্ত্রী মিলে মারপিট করেছেন বলে জানান সভাপতি। তবে তিনি শেষ পর্যন্ত প্রশাসনিকভাবে লড়বেন বলেও জানান।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০২২
এসএস/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।