ঢাকা, মঙ্গলবার, ৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

ইফতেখারের ১১ উটপাখি আর ডিম খাওয়ার গল্প

মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২
ইফতেখারের ১১ উটপাখি আর ডিম খাওয়ার গল্প

দিনাজপুর: একটি কথা প্রচলিত আছে, শখের তোলা আশি টাকা। মানুষ তার শখ পূরণ করতে অনেক কিছুই করে থাকে।

সেই শখের বশে উটপাখি পালন করছেন দিনাজপুর জেলার সদর উপজেলার সুলতান ইফতেখার চৌধুরী। ২০১৬ সালে ১৩টি উটপাখি নিয়ে আসেন তিনি।

বাংলাদেশের আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে প্রথমে দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে রাখা হয় পাখিগুলোকে। এরপর ২০১৯ সালের শুরুর দিকে উটপাখিগুলো ইফতি আহমেদ তার খামারে নিয়ে আসেন।

সদর উপজেলার ১ নম্বর চেহেলগাজী ইউনিয়নের গোপালগঞ্জ এলাকার কাছে সৈয়দা এলমিস অটো রাইস মিলের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, চারদিক বেড়া দেওয়া গাছপালা ঘেরা একটি খামারে রাখা হয়েছে উটপাখিগুলোকে। কাছে যেতেই ছুটে আসে উটপাখিগুলো। খামারের পাশে থাকা নেপিয়ার ঘাস খামারের একজন কর্মী কেটে পাখিগুলোর সামনে ধরতেই লম্বা ঠোঁট দিয়ে খেতে শুরু করে। বর্তমানে পাখিগুলোর উচ্চতা ছয় ফুটের বেশি।

কথা হলে খামারের মালিক সুলতান ইফতেখার চৌধুরী বলেন, ২০১৬  সালে শখের বশেই উটপাখিগুলো নিয়ে আসি। দু’টি পাখি মারা গেছে। তবে বর্তমানে এগুলো আমাদের দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে। খামারে এখন সাতটি পুরুষ ও চারটি মেয়ে উটপাখি রয়েছে। এগুলো ডিম দিতে শুরু করেছে। একেকটি উটপাখি মাসে চার থেকে পাঁচটি ডিম দিচ্ছে। প্রতিটি ডিমের ওজন এক থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত। আমরা এখনো ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে পারিনি। তবে আশা করছি, সংশ্লিষ্টদের কাছে পরামর্শ নিয়ে খুব শিগগিরই ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে সক্ষম হবো।

তিনি আরও বলেন, উটপাখিগুলোকে দিনে চার থেকে পাঁচবার খাবার দেওয়া হয়। এগুলো নেপিয়ার ঘাস ও আমাদের দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন রকমের ঘাস খায়। এছাড়া এগুলোকে বিভিন্ন দানাদার খাদ্যের পাশাপাশি ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার দেওয়া হয়। আর উটপাখিগুলোর অসুখ-বিসুখ অন্যান্য পাখির চেয়ে অনেক কম হয়ে থাকে।

উটপাখি দেখতে আসা কয়েকজন জানান, আমরা টিভিতে উটপাখি দেখেছি, কিন্তু আজ এখানে এসে খুব  কাছ থেকেই উটপাখি দেখলাম। এত বড় পাখি দেখে আমাদের ভালো লাগছে।

এ বিষয়ে জেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালের কর্মকর্তা আশিকা আকবর তৃষা বলেন, উটপাখি মূলত তৃণভোজী একটি প্রাণী। এরা অনেক কষ্টসহিষ্ণু পাখি। উটপাখির ডিম ফোটাতে অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে তুলানামূলক অনেক কম আর্দ্রতার প্রয়োজন হয়ে থাকে। অনেক সময় এ আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা সঠিকভাবে না হলে ডিম থেকে বাচ্চা ফোটে না। সে ক্ষেত্রে ইনকিউবেটর ব্যবহার করে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে উটপাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানো সম্ভব।

তবে কত টাকা আর কোন দেশ থেকে উটপাখিগুলো কেনা হয়েছে, তা জানা যায়নি।  

পাখিগুলো পর্যবেক্ষণ পর্যায়ে রয়েছে। তাই সবার জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি। তবে তার এ অটোরাইস মিলে গরুর ও উটপাখির খামার রয়েছে। তাই কেউ রাইস মিলে এলে বা গরুর খামারে এলে বিনামূল্যে উটপাখিও দেখতে পারেন।

উটপাখির ডিমগুলো বর্তমানে বাচ্চা উৎপাদনের জন্য হাবিপ্রবির প্রাণী অনুষদের গবেষণা কেন্দ্রে দেওয়া হয়। আর কিছু ডিম তারা  (খামার মালিক ও তার পরিবার) খাচ্ছেন।  
ইফতেখার বলেন, এ পাখির ডিম ভেজে খেয়েছেন। স্বাদ অনেকটা দেশি মুরগির ডিমের মতোই, পার্থক্য শুধু উটপাখির ডিম আকারে বড়।

এখনো তারা উটপাখি থেকে আয় করতে সক্ষম হননি। তবে বাচ্চা উৎপাদন হলে আয় হবে বলে আশা করছেন খামার সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।