ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জমি হাতিয়ে নিয়ে বাবা-মাকে ভিক্ষা করতে বললেন মেয়ে!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২
জমি হাতিয়ে নিয়ে বাবা-মাকে ভিক্ষা করতে বললেন মেয়ে!

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব বটতলী গ্রামের বৃদ্ধ আবদুল মান্নান ও আম্বিয়া খাতুন দম্পতির সাত মেয়ে। কোনো ছেলে না থাকায় মেয়েদের নামে জমি লিখে দিয়েছেন তারা।

 

বৃদ্ধ এ দম্পতির পঞ্চম মেয়ে অন্য বোনদের চেয়ে বাবা-মার কাছ থেকে বেশি জমি লিখে নিয়েছেন। বিনিময়ে আমৃত্যু তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানান। কিন্তু জমি লিখে দেওয়ার পর 'পল্টি' দিলেন মেয়ে নাজমা আক্তার এবং জামাতা মো. সেলিম।

নিজেদের করা বসতঘর এবং লিখে দেওয়া বসতভিটায় আর জায়গা হচ্ছে না আব্দুল মান্নান ও তার স্ত্রীর।  

ভরণপোষণ তো দূরের কথা উল্টো মা-বাবাকে ভিক্ষা করে খেতে বলছেন পাষণ্ড মেয়ে নাজমা আক্তার। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে মায়ের ওপর নির্যাতনও করেছেন তার মেয়ে। ঘর খালি করে অন্যত্র চলেও যেতে বলছেন মেয়ে এবং জামাতা।  

এর প্রতিকার চেয়ে বৃদ্ধ এ দম্পতি রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মেয়ে এবং জামাতার বিরুদ্ধে জেলা পুলিশ সুপার বরাবর লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।  

এর আগে শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নির্যাতনের শিকার হয়ে উপয়ান্তর না দেখে তারা পুলিশের জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এ কল দেন। পরে চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে যায়। রাতে পুলিশকেও লিখিতভাবে জানান আম্বিয়া খাতুন।

৮০ বছর বয়সী আব্দুল মান্নান ও ৭০ বছর বয়সী আম্বিয়া খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাংলানিউজকে এসব কথা জানান।  

বলেন, আমাদের সম্পত্তি, আমাদের ঘর। এখন সে ঘরেই আমাদের জায়গা হবে না। এ কেমন মেয়ে?

তারা জানান, তাদের কোনো ছেলে সন্তান নেই। সাত মেয়ে, সবাইকে বিয়ে দিয়েছেন। সব মেয়েকে সাড়ে সাত শতাংশ করে জমি ভাগ করে লিখে দিয়েছেন। তবে পঞ্চম মেয়ে নাজমা অন্যদের থেকেও নয় শতাংশ জমি বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন। বিনিময়ে বাবা-মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নাজমা।  

কিন্তু গত কয়েক মাস আগে জমি লিখে দেওয়ার পর থেকেই তাদের কোনো খোঁজ নিচ্ছেন না নাজমা ও তার স্বামী সেলিম। ফলে গত কয়েক মাস বাধ্য হয়ে অন্য মেয়েদের বাড়ি বাড়ি থাকতে হয়েছে তাদের। শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এক মেয়ের বাড়ি থেকে তারা নিজেদের বসত ঘরে ওঠেন। কিন্তু নাজমা তাদের ঘরে উঠতে বাধা দেন। বাকি জীবনটা অন্য মেয়েদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে থাকতে বলেন। প্রয়োজনে রাস্তায় রাস্তায় ভিক্ষা করে খেতে বলেন বৃদ্ধ মা-বাবাকে।  

মেয়ের এমন আচরণে এলাকার লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।  

বৃদ্ধা আম্বিয়া খাতুন বলেন, আমাদের মেয়ে নাজমাকে সেলিমের কাছে বিয়ে দিয়ে তাকে ঘরজামাই হিসেবে রেখে দিই। প্রায় ২০ বছর আগে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই আমাদের সঙ্গে আছে। এতো বছর তাদের ভরণপোষণ আমরা চালাতাম। জামাতা সেলিমকে টাকা খরচ করে বিদেশেও পাঠিয়েছিলাম। আমরা এখন বৃদ্ধ হয়ে গেছি। তাই আমাদের দু’জনের নামের সম্পত্তি সাত মেয়েকে সমান ভাগ করে লিখে দিই।

তবে মেয়ে নাজমা বিভিন্ন কৌশলে আমাদের কাছ থেকে আরও নয় শতাংশ জমি বেশি লিখে নিয়েছে। জমি লিখে দেওয়ার পর থেকে তারা এখন আর আমাদের খোঁজ খবর নিচ্ছে না। আমার অন্য মেয়েরা আমাদের বাড়িতে এলেও তাদের খোঁজ নেয় না নাজমা। উল্টো আমার সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ করে। শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ঝগড়ার একপর্যায়ে সে আমার ডান হাতে আঘাত করে। আমার এক মেয়ের জামাতাকে মারধর করেছে নাজমার স্বামী সেলিম। পরে আমাদের ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলে। নিজের ঘরে এখন আমরা পর হয়ে গেছি।  

অভিযুক্ত নাজমা ও সেলিমকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। সেলিমের ফোন নম্বরে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।  

স্থানীয় ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বৃদ্ধ দম্পতির কাছ থেকে তাদের মেয়ের নাজমা জমি লিখে নেওয়ার পর থেকে এখন আর তাদের খোঁজ নেন না। বিষয়টি অমানবিক।  

চন্দ্রগঞ্জ থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সুলাইমান বলেন, ৯৯৯ এ কল পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে যাই। তবে অভিযুক্ত মেয়ে এবং তার স্বামীকে পাওয়া যায়নি। ভুক্তভোগী বৃদ্ধা লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।