ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

প্রতিবেশীর খামখেয়ালিতে কৃষক পরিবারের বন্দিদশা

এসএস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২
প্রতিবেশীর খামখেয়ালিতে কৃষক পরিবারের বন্দিদশা

বাগেরহাট: বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার রাজনগর এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে মিকাইল হোসেন নামে এক কৃষকের বাড়িতে প্রবেশের পথ বন্ধ করে দিয়েছে তার প্রতিবেশী তহিদুল হাজরা।  

তহিদুলের খামখেয়ালিপনায় প্রায় পাঁচ বছর ধরে এক ধরনের বন্দিদশায় রয়েছে পরিবারটি।

ফলে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে এক কিলোমিটার বেশি ঘুরে বের হতে হয় পরিবারটিকে। অনেক ক্ষেত্রে খাল ও মৎস্য ঘের সাঁতরিয়ে রাস্তায় উঠতে হয় তাদের। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য লোকদের ধর্না দিয়েও কোনো সমাধান পাননি হতদরিদ্র মিকাইল হোসেন। লিখিত আবেদন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রামপাল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিবুল আলম।

অসহায় কৃষক মিকাইল হোসেন বলেন, রাজনগর মৌজায় ৭৫ শতাংশ জমি কিনে ৩০ বছর ধরে বসবাস করছি। বছর পাঁচেক আগে আমার প্রতিবেশী বালুর ব্যবসায়ী তহিদুল হাজরার সঙ্গে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। এরপর তহিদুল হাজরা লোকজন নিয়ে আমাদের পথ আটকে বেড়া দিয়ে দেন। আমরা ভাবছিলাম রাগের মাথায় বেড়া দিয়েছেন, কিছুদিন গেলে হয়তো খুলে দেবেন। কিন্তু অনেকদিন পরেও যখন পথের বেড়া খোলেননি তখন স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে যাই। তারা একাধিকবার সালিশ মীমাংসার মাধ্যমে আমাকে পথ দিতে বলেছেন, কিন্তু তহিদুল পথ দেয়নি। আমরা এক ধরনের বন্দি জীবনযাপন করছি। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার জন্য এই পথের জমি ফেরত চাই।
মিকাইল আরও বলেন, যে জমির ওপর দিয়ে আমরা যাতায়াত করতাম, ওই জমি তহিদুলের নয়। তিনি জোরপূর্বক ওখানে বেড়া দিয়েছেন।

মিকাইলের মেয়ে লাবনী খাতুন বলেন, শুকনো মৌসুমে মানুষের ঘের, ধানের জমিসহ সুবিধা মতো স্থান দিয়ে যাতায়াত করি। কিন্তু বৃষ্টির মৌসুমেপানির ভেতর দিয়ে সাঁতরে বাড়ির বাইরে যেতে হয়। কিভাবে এখানে বসবাস করবো। তহিদুল কাকা শুধু রাগের মাথায় আমাদের ওপর এই অবিচার করছেন। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না- বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই তরুণী।

মিকাইলের স্ত্রী আফিরুন বেগম বলেন, এমন অবস্থায় আছি যে বাড়িতে কেউ অসুস্থ হলেও হাসপাতালে নেওয়ার সুযোগ নেই। মাঝে আমার একটি গরু অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। রাস্তা বন্ধ থাকায় গরুটিকে চিকিৎসকের কাছেও নিতে পারিনি। আবার চিকিৎসক বাড়িতে আনব সে ব্যবস্থাও আমার ছিল না রাস্তার কারণে। যাতায়াতের পথ আটকে দেওয়ায় এমন বিপদে পড়েছি যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

আনোয়ার হোসেন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, মিকাইলের যাতায়াতের রাস্তাটি ছিল প্রভাষ ও সুভাষ ঘোষের মালিকানাধীন জমি। দীর্ঘদিন মিকাইল যাতায়াত করার কারণে, প্রভাষ এবং সুভাষ যখন তাদের জমি তহিদুল হাজরার বাবা খলিল হাজরার কাছে বিক্রি করেছিলেন, তখন ৪ শতাংশ জমি কম বিক্রি করেছিলেন। যাতে মিকাইলের হাঁটার পথে কোনো সমস্যা না হয়। তারপরও মিকাইলের হাঁটার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে তহিদুল। আমরা অনেক অনুরোধ করেছি, কিন্তু তহিদুল শোনেননি।
মুরাদ শেখ নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, এটা এক ধরনের অত্যাচার। তহিদুল যা করেছে তা খুবই অন্যায়। যেভাবে হোক মিকাইলকে যাতায়াতের সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মঞ্জুর রহমান ফরাজী বলেন, মিকাইল ও তহিদুলের বিবাদের বিষয়টি নিয়ে একাধিবার সালিশ করেছি। মিকাইল ও তহিদুলের জমি পরিমাপও করা হয়েছে। তহিদুল যে জমিতে বেড়া দিয়েছে ওখানে পূর্বের মালিক প্রভাষ ও সুভাষ ঘোষের কিছু জমি রয়েছে। ওই জমি ছেড়ে দিলে মিকাইল সুষ্ঠুভাবে তার বাড়ি থেকে বের হতে পারতেন। কিন্তু তহিদুল কোনোভাবেই মিকাইলকে সুষ্ঠুভাবে হাঁটতে দিতে রাজি নয়।
এ বিষয়ে তহিদুল হাজরা বলেন, কে কোন জায়গা দিয়ে হাঁটবে এটা আমার বিষয় না। মিকাইল যেখান থেকে পারুক সেখান দিয়ে হাঁটুক। আমি কখনও এই পথ ছাড়ব না।

রামপাল উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিবুল আলম বলেন, কারও চলাচলের পথ আটকে রাখা সঠিক কাজ নয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটির কাছ থেকে লিখিত আবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।