ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ফেসবুকে স্ট্যাটাস, বাবা-ছেলেকে পেটালেন উপজেলা চেয়ারম্যান

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২
ফেসবুকে স্ট্যাটাস, বাবা-ছেলেকে পেটালেন উপজেলা চেয়ারম্যান

নাটোর: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধে বাবা-ছেলেকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান আসাদ। তিনি তার প্রতিবেশী চাচা ফরহাদ হোসেন (৫৩) ও তার ছেলে জামিউল আলীম জীবনকে (২০) মারধর করে আহত করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে আহত জীবনের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ, তার ছোট দুই ভাই ও অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনের নামে নলডাঙ্গা থানায় একটি মামলাটি দায়ের করেন। এর আগে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার রামশার কাজীপুর আমতলী বাজার সংলগ্ন চারমাথা মোড়ে মারধরের এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় আহত বাবা-ছেলেকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত জামিউল আলীম আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে আছেন বলে জানা গেছে।

আহত ফরহাদ হোসেন ওই গ্রামের মৃত ফয়েজ উদ্দিন শাহের ছেলে আর জামিউল আলীম জীবন ফরহাদ হোসেনের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রামশার কাজীপুর আমতলী বাজারের জামে মসজিদের ভেতর থেকে মাগরিব নামাজের পর মাইকের যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নলডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ ওই গ্রামের কয়েকজনকে চুরিতে জড়িত বলে সন্দেহ করেন। এ নিয়ে চেয়ারম্যান শালিশী বৈঠক বসিয়ে সন্দেহ ভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং ভয়ভীতি দেখান।

এক পর্যায়ে উপজেলা চেয়ারম্যান তার প্রতিবেশী চাচাতো ভাই জামিউল আলিম জীবনকে জোরপূর্বক দোষী সাব্যস্ত করেন। পরে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জামিউল নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসাদকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকে স্ট্যটাস দেন। তার স্ট্যটাস দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আসাদ।

পরে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমতলী বাজার সংলগ্ন চারমাথা মোড়ে আসাদসহ তার লোকজন জামিউলের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে স্ট্যটাস দেওয়া নিয়ে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। তারা জীবনকে কিলঘুষিসহ মারধর করতে থাকেন। খবর পেয়ে তার বাবা ফরহাদ হোসেন ছেলেকে ছাড়াতে এগিয়ে আসলে তাকেও মারধর করা হয়। এর মধ্যে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ একটি বাঁশের লাঠি দিয়ে তার মাথায় আঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

এ সময় স্থানীয়রাসহ স্বজনরা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাদের রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় এবং আহত জামিউলকে সেখানের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে তিনি লাইফ সাপোর্টে রয়েছেন।

আহত ফরহাদ হোসেনের ছোট ভাই স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম ফকরুদ্দিন ফুটু জানান, তার ভাই ফরহাদ হোসেন মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছেন আর ভাতিজা জামিউলকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। ফরহাদ হোসেনকেও সেখানে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ অন্যায়ভাবে আমার ভাই ও ভাতিজাকে মারধর করেছেন। এ ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এখন আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

এদিকে অভিযুক্ত আসাদুজ্জামান আসাদ বাংলানিউজকে বলেন, জীবন ও তার বাবা নেশাখোর। জীবন তার বিরুদ্ধে ফেসবুক লাইভে খারাপ কথা বলেছে। এ জন্য তাকে ডেকে এনে বিষটি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময় জীবনের বাবা পেছন থেকে আমাকে বাঁশ দিয়ে আঘাত করেন। এমন সময় আত্মরক্ষা করতে পালটা মার দেওয়া স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু এটি নিয়ে তারা বেশি অসুস্থ্যতার নাটক করছেন।

নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, খবর পাওয়া মাত্র ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আর এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে আহত জামিউলের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদ, তার ছোট দুই ভাইসহ অজ্ঞাত আরও ৪-৫ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।