ঢাকা, বুধবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ মে ২০২৪, ০৬ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

উচ্ছেদ অভিযানে বাঁধা, পিছু হটলেন এসিল্যান্ড!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২২
উচ্ছেদ অভিযানে বাঁধা, পিছু হটলেন এসিল্যান্ড!

খুলনা: খুলনার ডুমুরিয়ায় দুটি খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে গিয়ে বাঁধার মুখে পিছু হটেছেন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদ। শাসকদলের কয়েকজন নেতার বাঁধায় তিনি অভিযান সম্পন্ন না করে ফিরে যেতে বাধ্য হন।

যদিও মামুনুর রশিদের দাবি, এলাকাবাসীর বিশেষ অনুরোধে অভিযান থেকে ফিরে এসেছেন এবং তাদের নির্ধারিত সময় বেঁধে দিয়েছেন।

শনিবার (১০সেপ্টেম্বর) ওড়াবুনিয়া বিলের মধুমারী ও বিষের খালে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা  করতে যেয়ে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, উপজেলার আটলিয়া ও মাগুরাঘোনা ইউনিয়নভুক্ত ওড়াবুনিয়া বিলের মধুমারী ও বিষের খাল নামক দু'টি খালে শনিবার ছিল অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের পূর্ব নির্ধারিত দিন। এ লক্ষ্যে গত ৫ সেপ্টেম্বর এসিল্যান্ড সরেজমিনে যেয়ে এবং এলাকায় মাইকিংয়ের মাধ্যমে অবৈধভাবে দখলদারদের খাল উন্মুক্ত করে দিতে নির্দেশনা দেন। এতে ব্যাপক সাড়া দিয়ে এলাকার ৩ শতাধিক কৃষক স্বেচ্ছায় উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেওয়ার জন্যে ঝুড়ি, কোদাল নিয়ে মাগুরাঘোনা করিম বকসের মোড়ে অবস্থান নেন।

শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলা প্রশাসনের অভিযানিক দলটি সেখানে পৌঁছায়। অভিযানের শুরুতেই আওয়ামী লীগ নেতা গোবিন্দ ঘোষ, জি এম ফারুক হোসেন, সুরঞ্জন ঘোষ, নাজমুল ইসলাম বাবুসহ স্হানীয় মাগুরাঘোনা  ইউপি চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম হেলাল ও আটলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ হেলাল উদ্দীনসহ আরও কয়েক ব্যক্তি ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষের পক্ষ না নিয়ে নানা অজুহাতে তারা হাতে গোনা কয়েকজন অবৈধ দখলদারের পক্ষ নেন। এতে বাঁধার মুখে পড়েন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এ বিষয়ে  নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মামুনুর রশীদ বলেন, পূর্ব নির্ধারিত দিন মোতাবেক মধুমারী ও বিষের খালের অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযানে যাই। কিন্তু দখলদারা আজ অভিযান পরিচালনা না করতে অনুরোধ করেন। তারা ঘেরের মাছ উঠানোর জন্য সময় চেয়েছেন। সে কারণে তাদেরকে তিন সপ্তাহ অর্থাৎ আগামী অক্টোবর মাসের ১ তারিখ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সার্ভেয়ার দ্বারা খালের সীমানা নির্ধারণ করা হবে এবং অবৈধ দখলদাররা তাদের নিজ দায়িত্বে খাল উন্মুক্ত করে দেবেন। নির্ধারিত সময় পার হলে অভিযান পরিচালনাসহ নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্হা নেওয়া হবে। বাঁধার কারণে অভিযান থেকে পিছু হটেছে এমনটি নয়।

এ সময় সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু বকরসিদ্দিক, সার্ভেয়ার মিরাজ হোসেনসহ থানা পুলিশের একটি প্রতিনিধি দল সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ওড়াবুনিয়া বিলের মধুমারী ও বিষের খাল দু'টিতে দীর্ঘদিন ধরে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি অবৈধভাবে বেড়িবাঁধ ও নেট-পাটা দিয়ে মাছ চাষ করছেন। যার কারণে বিলের পানি নিষ্কাশনে বাঁধার সৃষ্টি হচ্ছে। ওই বিলে অন্তত ২ হাজার একর ফসলি জমি রয়েছে।   বিলের ভিতর দিয়ে বর্ষা মৌসুমে এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্হা ও শুষ্ক মৌসুমে ধান ও মাছ চাষাবাদের জন্য খাল দু'টির গুরুত্ব অপরিসীম।

কিন্ত গত কয়েক বছর ধরে মাগুরাঘোনার ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান সরদার, দক্ষিণ চুকনগর গ্রামের আলতাপ হোসেন সরদার, চাকুন্দিয়া গ্রামের আলমগীর শেখ, নরনিয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম শেখ, মালতিয়া গ্রামের জব্বার মল্লিক ও আব্দুল হালিম মোড়লসহ কয়েক ব্যক্তি তাদের জমির পাশ দিয়ে প্রবাহিত খাল দু'টির বিভিন্ন অংশে অবৈধ ভাবে বেড়িবাঁধ, পাটা দিয়ে ঘের তৈরি করে মাছ চাষ করছেন। এসব কারণে খাল দিয়ে পানি সরবরাহে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে বিলের মাছের ঘের তলিয়ে যাওয়াসহ ধান চাষ ব্যাহত হচ্ছে।

অপরদিকে মাগুরাঘোনা ইউনিয়ের বেতাগ্রাম, ঘোষড়া, কাঞ্চনপুর, হোগলাডাঙ্গা, মাগুরাঘোনা গ্রামসহ পার্শ্ববর্তী তালা উপজেলার কয়েকটি গ্রামের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ খাল দু'টিতে বাঁধ থাকায় পানি বের হতে না পেরে এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এ কারণে গত এপ্রিল মাস থেকে এলাকার অন্তত ২০০ শতাধিক ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ লিখিতভাবে একাধিকবার উপজেলা প্রশাসনের কাছে খাল দু'টির অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে পানি প্রবাহ সুগমের ব্যবস্হার দাবি জানিয়ে আসছেন।

এ প্রসঙ্গে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ আন্দোলনকারী বিলের জমি মালিকদের অন্যতম রবিউল ইসলাম মিঠু, আনিছুর রহমান, কৃষ্ণ পদ ঘোষসহ আরও অনেকে অভিযোগ করেন, হাতেগোনা কয়েক  ব্যক্তি যারা অবৈধ দখলদারদের পক্ষ অবলম্বন করে উচ্ছেদ অভিযান বাধাগ্রস্ত করতে চাইছে। তারা মূলত এসব অবৈধ দখলদারে সহযোগী ও সুফল ভোগী। ইতোমধ্যে আমরা আন্দোলনকারীরা নানা হুমকি-ধামকির সম্মুখীন হচ্ছি। আমরা বিলের ভুক্তভোগী জমি মালিকরা বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তুলে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে যা যা করণীয় তার সবই করব।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০ , ২০২২
এমআরএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।