ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ভোলায় ডেঙ্গু-নিউমোনিয়ার প্রকোপ

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২
ভোলায় ডেঙ্গু-নিউমোনিয়ার প্রকোপ

ভোলা: ভোলায় বেড়েই চলেছে ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ। প্রতিদিনই এসব রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা।

তাদের মধ্যে ডেঙ্গুর তুলনায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা থাকছে কয়েকগুন বেশি।

স্বাস্থ্যবিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে জেলায় ৩৮৫ জন শিশু নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহে আক্রান্ত হয়েছে ১৪৩ জন। আর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ২৩ জন। তাদের মধ্যে চলকি সপ্তাহেই আক্রান্ত হয়েছেন ৯ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী এসেছেন দুইজন এবং নিউমোনিয়া আক্রান্ত এসেছেন ১৮ জন।  

হঠাৎ করেই ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় অনেকটা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

এদিকে হঠাৎ করে রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ব্যবস্থা করা হয়নি আলাদা কোনো ইউনিট। ফলে সাধারণ রোগীদের সঙ্গেই থাকতে হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের। এতে অন্য রোগীদের মধ্যেও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে।

তবে চিকিৎসকদের দাবি, তারা রোগীদের পর্যাপ্ত সেবা দিচ্ছেন। অন্য রোগীদের মধ্যে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি নেই। সবাই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাচ্ছেন।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, আক্রান্তের হার খুব বেশি না হলেও গত কয়েকদিনে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এরই মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ২৩ জন এবং বর্তমানে চিকিৎসাধী আছেন দুইজন।

অন্যদিকে গত কয়েকদিনের টানা বর্ষন এবং গরমের প্রভাবে বেড়েছে শিশুদের নিউমোনিয়া। হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়েছে কয়েকগুন। হাসপাতালে শয্যা সংকট থাকায় একটি বেডে গড়ে দুই থেকে তিনজন রোগীকে গাদাগাদি করে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। তবে ডেঙ্গু নিয়ে অনেকটা চিন্তিত রোগীর স্বজনরা। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ইউনিট ও উন্নত চিকিৎসা সেবার দাবি করছেন তারা।

রোগীর স্বজন জিয়া উদ্দিন বলেন, এ সময় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। যদিও হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। তবে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আলাদা ইউনিট রাখার নিয়ম থাকলেও তা রাখা হয়নি। এতে রোগীর সঙ্গে আসা স্বজন ও অন্যান্য রোগীদের মধ্যে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ছে। আশা করি কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নজরে রাখবেন।

আরেক রোগীর বোন মরিয়ম বলেন, প্রথমে রোগীর জ্বর হয়েছে। এরপর ডাক্তারের পরামর্শে পরীক্ষা করলে তার ডেঙ্গু সনাক্ত হয়। এটি নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত।

ভোলা সদর হাসপাতালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে,  মহিলা ও পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডেই ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের জন্য আলাদা ইউনিট রাখা হয়নি। এতে অন্য রোগীরাও ঝুঁকিতে।

কয়েকজন রোগী জানান, ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ায় আমরা অনেকটা চিন্তিত। কার মধ্যে রোগীদের জন্য আলাদা রুম রাখা হয়নি। এতে আমরাও ভয়ের মধ্যে আছি।

ভোলা সদর হাসপাতালের পরিবেশ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেক রোগীর স্বজনরা। একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ, ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়লেও হাসপাতালের ভেতর এবং বাইরের চারপাশের পরিবেশ অস্বাস্থকর ও নোংরা। এতে রোগীদের ভয়াবহ ঝুঁকি রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে জানতে ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এবং আবাসিক মেডিক্যাল অফিসারকে (আরএমও) একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীদের চাপ বেড়েই চলছে। একটি বেডে গড়ে দুই থেকে তিনজন করে রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। রোগীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় তাদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।

রোগীর স্বজন সালাউদ্দিন ও সেলিম বলেন, হঠাৎ করে শিশুরা ঠাণ্ডা, সর্দি, জ্বর, স্বাশকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আমরা তাদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।

শিশু ওয়ার্ডের দায়িত্বরত একজন নার্স জানান, হাসপেতালে প্রতিদিন যেসব রোগী ভর্তি হচ্ছে, তাদের বেশিরভাগই নিউমোনিয়া আক্রান্ত। তাদের প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া হচ্ছে।

ভোলা সদর হাসপেতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রাসেল আহমেদ ভূইয়া বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকার সঙ্গে ভোলার নৌ-পথে যোগাযোগ থাকায় যাতায়াতের সময় লঞ্চের পরিবেশ বা অন্য কোনো কারণে ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। এছাড়া বাসায় জমে থাকা পানি, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ বা অসচেতনতা থেকেও  ছড়াতে পারে। তবে আমরা রোগীদের প্রয়োজনীয় সেবা দিচ্ছি।

অন্যদিকে আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে শিশুদের নিউমোনিয়া বেশি হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রান পেতে অভিভাবকদের আরও যত্নবান হতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২২
এফআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।