ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ মে ২০২৪, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

‘শয়তানের শ্বাসের কারণে’ সোনা-গয়না খোয়া!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২
‘শয়তানের শ্বাসের কারণে’ সোনা-গয়না খোয়া!

ফরিদপুর: ‘ডেভিলস ব্রেথ’ বা ‘শয়তানের শ্বাস’ নামে এক ভয়ঙ্কর মাদকের কারণে সোনা-গয়না খুইয়েছেন ফরিদপুরের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীরা থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) করেছেন।

মূলত স্কোপোলামিন নামে একটি ওষুধকে বলা হয় ডেভিলস ব্রেথ বা শয়তানের শ্বাস। এটি সাধারণত প্রাকৃতিক বা কৃত্রিমভাবে তৈরি ট্রোপেন অ্যালকালয়েড এবং অ্যান্টিকোলিনার্জিক ওষুধ। যা গতিজনিত অসুস্থতা বা বমির চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। কখনও কখনও এটি মুখের লালা কমাতে অস্ত্রোপচারের আগে ব্যবহার করা হয়। ওষুধটির কারণে মানুষ অনেকটাই তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। ফলে যে ব্যক্তির শরীরে এটি ব্যবহার করা হয়, তাকে যা বলা হয়, তিনি সেটই করেন। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার পর ওই ব্যক্তির আর কিছুই মনে থাকে না।

এটিকে হেলুসিনেটিক ড্রাগও বলা হয়। এর প্রভাবে মানুষের মস্তিষ্ক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ভয়ঙ্কর অপরাধে এ ওষুধটি ব্যবহার করে থাকে দুর্বৃত্তরা। ড্রাগটি দেখতে হুবহু কোকেন পাউডারের মতো। সাদা বর্ণের এ ওষুধের ক্ষতির মাত্রা কোকেনের চেয়েও বেশি।

রাজধানী ঢাকায় সন্ত্রাসী বা ছিনতাইকারীরা এক সময় এ স্কোপোলামিন ব্যবহার করতো। বহুদিন পর আবার ওষুধটির ব্যবহারের দেখা মিলল ফরিদপুরে।

ধারণা করা হচ্ছে, শহরের তিন ব্যক্তি এ ওষুধের মাধ্যমে সাধারণ যাত্রী বা পথচারীদের সর্বস্ব লুটে নিচ্ছেন। অথচ তাদের নির্দিষ্ট করা যাচ্ছে না।

যেভাবে জানা গেল শয়তানের শ্বাস ব্যবহার করে লুটের ঘটনা-
গতকাল মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুরে গোয়ালচামট গৌর গোপাল আঙিনা এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য মো. ইদ্রিস তালুকদার (৭৫) ও তার স্ত্রী আলেয়া বেগম (৬২) ব্যাংক থেকে পেনশনের টাকা তোলেন। বাড়ি ফিরতে শহরের ইমাম স্কয়ার থেকে একটি অটোরিকশায় ওঠেন তারা। বাহনটিতে চালক ছাড়া আরও দুজন যাত্রী ছিল।

অটোরিকশায় উঠে ইদ্রিস বসেন চালকের পাশে। আলেয়া বেগম বসেন পেছনের সিটে। কিছুক্ষণ পর পেছনের সিটের যাত্রীরা আলেয়া বেগমকে অটোরিকশায় পড়ে থাকা একটি কাগজ দেখান। জিজ্ঞেস করেন কাগজটি তার কিনা। আলেয়া চোখ কম দেখেন বলে জানালে ওই দুই যাত্রীদের একজন কাগজটি তার মুখের সামনে ধরেন। তারপরই আলেয়া ওই দুজনের কথা মতো তার গলার চেন, কানের দুল ও হাতের আংটি খুলে তাদের দিয়ে দেন।

তারা ইদ্রিসকেও বিমোহিত করে তাদের সঙ্গে থাকা প্রয়োজনীয় সবকিছু লুট করে মিয়া পাড়া সড়কের কাছে নামিয়ে দেন। এ সময় তাদের হাতে একটি ভাঁজ করা কাগজ ধরিয়ে দেন তারা। পরে দেখা যায় সেটিতে সোনালী রংয়ের প্লাস্টিক জাতীয় কিছু রয়েছে। বাড়ি ফেরার পরও বেশ খানিকক্ষণ তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন আলেয়া বেগম। বেশ কিছু সময় তার ছেলে তাদের সেবা করে পূর্বাবস্থায় নিয়ে আসেন। পরে বাবা-মায়ের কথা শুনে তিনি বুঝতে পারেন, প্রতারক চক্রের চক্করে পড়েছিলেন তারা। তাদের কাছ থেকে সবকিছু লুট করে নেওয়া হয়েছে।

এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় মঙ্গলবার একটি জিডি করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে থেকেই একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী তার নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন তুলে দিয়েছেন অপরাধীদের হাতে।

কয়েকজন ভুক্তভোগী জানিয়েছে, অপরাধীদের খপ্পরে পরে টাকা-পয়সা সোনা-দানা, মোবাইল হারানো ছাড়াও অনেক নারী সম্ভ্রমহানির শিকার হয়েছেন। এসব কিছুর প্রতিকার চান তারা।

এ ব্যাপারে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, অভিযোগগুলো গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে অপরাধীদের শনাক্ত ও আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।