ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দুর্ঘটনা এড়াতে যে সব সুপারিশ করলো তদন্ত কমিটি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৪, ২০২২
দুর্ঘটনা এড়াতে যে সব সুপারিশ করলো তদন্ত কমিটি গত ১৫ আগস্ট উত্তরায় গার্ডারচাপা পড়ে ৫ জনের মৃত্যু হয়

ঢাকা: রাজধানী ঢাকায় জনবসতিপূর্ণ এলাকায় দুর্ঘটনা এড়াতে বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি)-এর মতো প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে বেশ কিছু সুপারিশ করেছে উত্তরায় গার্ডার দুর্ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী রোববার (০৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সভাকক্ষে বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার দুর্ঘটনার তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় সুপারিশগুলো তুলে ধরেন।

তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো হলো—
=> চুক্তি অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নেওয়া।
=> ভারী কাজের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পূর্বানুমতি নিতে হবে।

=> দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষণীয় এই যে, পরামর্শক প্রতিষ্ঠান থেকে পরিদর্শনের অনুমোদন না করানো এই দুর্ঘটনায় একটি প্রধান অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। রাস্তায় এ ধরনের যে কোনো ভারী কাজ যা যানবাহন চলাচলের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্টতা থাকবে তা অবশ্যই পরিদর্শন করে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান থেকে যথাযথভাবে অনুমোদন করে তারপর কাজ সম্পাদন করা যেতে পারে।

=> সড়ক সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের সময় ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান তৈরি করে প্রকৌশলী বা পরামর্শক, সিটি করপোরেশন এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সাথে সমন্বয় করা প্রয়োজন।

=> গার্ডার স্থানান্তরসহ যে কোনো ভারী কাজ রাতের বেলায় রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত সঠিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে সম্পাদন করতে হবে। প্রয়োজনে, ট্রাফিক পুলিশের সহায়তায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক লেনের ব্যবস্থা করতে হবে। সেক্ষেত্রে ট্রাফিক ডাইভারশন এবং প্রয়োজনীয়তা থাকলে তা নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকার বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সড়কের ওপর যে কোন অবৈধ পার্কিং বিশেষ করে এ ধরনের নির্মাণ প্রকল্প এলাকায় বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশের সাথে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।

=> এ ধরনের নির্মাণ কাজের স্থান পুরোপুরি যথাযথ নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সাথে সাথে বেষ্টনীকে সঠিকভাবে দৃশ্যমান করার জন্য সাইন, সিগন্যাল, মার্কিং, লাইটিং, রিপ্লেকটর ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে চলমান এমআরটি প্রকল্পের নিরাপত্তা বেষ্টনীকে উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

=> যে কোন আকস্মিক দুর্ঘটনায় সম্ভাব্য ক্ষতি ও প্রাণহানি এড়াতে এবং তাৎক্ষণিক উদ্ধার তৎপরতার জন্য ইমার্জেন্সি ইনসিডেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান বাধ্যতামূলক। জরুরি সাড়াদানের জন্য প্রকল্পের পুরো এলাকায় যথেষ্ট স্ট্যান্ডবাই ক্যাপাসিটি সম্পন্ন ক্রেন, ওয়াকার, অ্যাম্বুলেন্স, ফাস্ট এইড, জরুরি চিকিৎসক রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে।

=> চুক্তি অনুযায়ী দুর্ঘটনায় হতাহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করা যেতে পারে।
=> ক্রেনের রেজিস্ট্রেশন করা বাধ্যতামূলক। ক্রেন চালানোর অপারেটরের লাইসেন্স থাকতে হবে। প্রতিবছর ক্রেনের ফিটনেস নবায়ন করাতে হবে। কনস্ট্রাকশন কাজে ব্যবহৃত ভারী যন্ত্রপাতি যেমন- ক্রেন, এক্সাভেটর, টেইলর ইত্যাদি নিবন্ধন আছে কিনা এবং ওই সমস্ত যন্ত্রপাতি/যানবাহন চালকের উপযুক্ত লাইসেন্স আছে কিনা সে ব্যাপারে বিআরটিএ তদারকি করতে পারে।

=> দুর্ঘটনায় আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে চুক্তি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যয়ভার বহন করতে হবে।

=> দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে চুক্তির শর্তসমূহ যথাযথ প্রতিপালনের পাশাপাশি প্রকল্প কর্তৃপক্ষ, ঢাকা বিআরটি কোম্পানি লি., সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের মনিটরিং জোরদার করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন অগ্রগতি তদারকিতে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর এবং সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের মনিটরিং টিমসমূহের দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করা যেতে পারে।

=> ইক্যুপমেন্ট সরবরাহ প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের স্ব স্ব ইক্যুপমেন্টের রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস এবং চুক্তিজনিত বাধ্যবাধকতার প্রতিপালনের বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

=> ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার বিষয়টি বারবার লঙ্ঘিত হওয়া এবং বাংলাদেশি নাগরিকের প্রাণহানি ঘটায় সংশ্লিষ্ট দূতাবাসকে বিষয়টি অবহিত করা যেতে পারে।

সচিব জানান, তদন্ত কমিটির কাজকে অত্যন্ত সুচারু ও কারিগরি দিক হতে গ্রহণযোগ্য হওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক্সিডেন্ট রিসার্স ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক ড. মো. আসিফ রায়হানকে নিযুক্ত করায় ক্রেন সংক্রান্ত বিষয়ে কারিগরি জ্ঞান থাকায় তদন্ত প্রতিবেদনকে আরও সমৃদ্ধশী বলে মনে করি।

তিনি আরও জানান, বিআরটি প্রকল্পের মতো বড় ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে যে নিবিড় নিরাপত্তা পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন তা নিশ্চিত করতে হলে নিয়মিত কাজের বাহিরেও সংশ্লিষ্ট সকলকে উদ্যোগী হয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। দুর্ঘটনা পৃথিবীর কারও কাম্য নয়। আমরা চাই আমাদের প্রতিটি উন্নয়ন কার্যক্রম হোক নিরাপদ।

আরও পড়ুন: গার্ডার দুর্ঘটনায় ১২ কারণ চিহ্নিত করেছে তদন্ত কমিটি

বাংলাদেশ সময়: ১৮২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৪, ২০২২
এমআইএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।