ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

নারায়ণগঞ্জে সুজনের মৃত্যু নিয়ে ‘শোনা কথায়’ বিভ্রান্তি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০২২
নারায়ণগঞ্জে সুজনের মৃত্যু নিয়ে ‘শোনা কথায়’ বিভ্রান্তি

নারায়ণগঞ্জ: প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনকালে বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় সরকারি তোলারাম কলেজের যুগ্ম আহ্বায়ক সুজন খান ফারুকের নিহতের খবর ঠিক নয় বলে নিশ্চিত করেছে মহানগর ছাত্রদল। বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন সংগঠনটির সভাপতি শাহেদ আহমেদ।

এর আগে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপু সুজন খান ফারুকের নিহতের খবর গণমাধ্যমে দেন। কিন্তু সন্ধ্যায় জানা যায় সুজন মারা যাননি। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মহানগর ছাত্রদল বলছে, শোনা কথায় মিডিয়ায় ভুল তথ্য দেন বিএনপির নেতারা।

বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে বাংলানিউজ যোগাযোগ করে মহানগর বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের সঙ্গে। তিনিও সুজনের মৃত্যুর খবর সঠিক নয় বলে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, এটা তথ্য বিভ্রাট। আসলে সবাই তো আহত। খোঁজ নিয়ে নিশ্চিত করতে দেরি হয়েছে।

মূলত মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবু আল ইউসুফ খান টিপুর কারণে সংবাদমাধ্যমে সুজনের মৃত্যুর ভুয়া তথ্য ছড়ায়। প্রথমে তিনি বলেছিলেন, সুজন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। বিকেলে বিষয়টি নিয়ে তার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমার কাছে মৃত্যুর তথ্য ছিল। বাকিটা জানা নেই।

সুজনের মৃত্যুর বিষয়টি সঠিক নয় নিশ্চিত হওয়ার পর টিপুর সঙ্গে ফের কথা হয় বাংলানিউজের। রাতে তিনি বলেন, আমাদের সাথে যোগাযোগ ছিল না তার। আমরা তার মৃত্যুর ছবি পাই; আর সেটাই শুনি।

এমন তথ্য পেয়েও কেন সুজন বা তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি, বাংলানিউজের এমন প্রশ্নের উত্তরে মহানগর বিএনপির এ সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, আমরা তো সবাই আহত। আমরা ধীরে ধীরে খোঁজ নিচ্ছি। এখন জানলাম সে (সুজন) গুরুতর আহত।

সুজন গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কোন হাসপাতাল সেটি জানাননি মহানগর ছাত্রদলের সভাপতি শাহেদ আহমেদ। তবে বলেছেন, সুজনের অবস্থা আশংকাজনক। মহানগর বিএনপি ও আমাদের কাছে তার মৃত্যুর তথ্য ছিল। তিনি জীবিত।

এদিকে মহানগর ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সুমন অভিযোগ করেছেন, ছাত্রদলের সঙ্গে যোগাযোগ নেই দলীয় নেতাকর্মীদের। তারা খোঁজ রাখেন না কর্মীদের। একজন মানুষ নিহত হয়েছেন, এটা তারা কীভাবে জানবেন? হতাহতদের কারও খোঁজ করছেন না তারা।

এর আগে বিকেলেও হতাহতদের পরিবারের সদস্যরা এ অভিযোগ করেন। তারা বলেন, ঘটনার পর থেকে দলীয় নেতাকর্মীরা আহতদের খোঁজ নেননি। নিহতদেরও না। কিন্তু তাদের আসা উচিৎ, হতাহতদের খোঁজ নেওয়া উচিত।

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমানের কাছে সুজনের মৃত্যুর ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এ নামে কারও মৃত্যুর খবর আমাদের কাছে নেই।

বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় শাওন নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিএনপি, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। পুলিশের কাছ থেকেও এ তথ্য পাওয়া গেছে। শাওন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলীর চাচাতো ভাইয়ের ছেলে বলে জানা গেছে।

শওকত আলী এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, শাওন আমার চাচাতো ভাইয়ের ছেলে। সে রাজনীতিতে সক্রিয় না। ভেতরে কোনো সমর্থন ছিল না কি না সেটা জানা নেই।

সকালে নারায়ণগঞ্জ শহরের দুই নং রেল গেট এলাকায় ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেখানে শাওন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। সকাল থেকেই তাকে বিএনপির মিছিলের সামনের সারিতে দেখা যায়। যুবদল নেতা সাদেকুর রহমানের সঙ্গেই ছিলেন তিনি।

বিএনপির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে পূর্বাঘোষিত কর্মসূচিতে যোগ দিতে সকাল থেকে বঙ্গবন্ধু সড়কের ২ নম্বর রেলগেট এলাকায় জড়ো হতে থাকেন বিএনপিসহ এর অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। সকাল ১০টার দিকে মিছিল বের করতে গেলে বাধার মুখে পড়েন তারা। বেলা পৌনে ১১টার দিকে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পরে নেতা-কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এই সংঘর্ষের মধ্যেই শাওন নিহত হন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০২২
এমআরপি/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad