ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মিয়ানমারের ওপর আস্থা নেই রোহিঙ্গাদের

‘৫ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো যায়নি’

সুনীল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২২
‘৫ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো যায়নি’

কক্সবাজার: রোহিঙ্গা সংকটের পাঁচ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। কিন্তু পাঁচ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার।

এছাড়াও প্রত্যাবাসনকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের নানা ছলচাতুরীর কারণে হতাশ রোহিঙ্গারাও। যে কারণে দিন দিন চরম হুমকির মুখে পড়েছে স্থানীয় জনগোষ্ঠী।  

নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার অজুহাতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর দমন নিপীড়ন শুরু করে সে দেশটির সেনাবাহিনী ও মগেরা। যে কারণে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে।

সেই থেকে এখন ১২ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার বোঝা টানতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এসব রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনে না উদ্যোগ নেওয়া হলেও মিয়ানমারের অসযোগিতার কারণে পাঁচ বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।

স্থানীয়দের উদ্বেগ বাড়ছে: এরই মধ্যে রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে হত্যাসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগের শেষ নেই স্থানীয় জনগোষ্ঠীর। তাদের দাবি, দ্রুত প্রত্যাবাসন।  

উখিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রতন দে বাংলানিউজকে জানান, পাঁচ বছর পূর্ণ হলেও এখনো পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। ভবিষ্যতে যাবে কিনা তাও আমরা সন্দিহান।  কিন্তু এই পাঁচ কছরেই রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন এখন চরম হুমকির মুখে। নিজ দেশে স্থানীয়রাই এখন পরবাসী। এছাড়াও রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে একের পর এক খুনোখুনি আমাদের জীবনকে আতঙ্কিত করে তুলেছে।  

সরকারের কাছে দাবি জানাই, যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর।

অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে পরিকল্পিত পরিকল্পনার দাবি জানান, সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজনের সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিকদার।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, রোহিঙ্গা বিষয়ে অনেক কাজ পরিকল্পিতভাবে হচ্ছে না। এমনকি পরিকল্পনাও। যে কারণে স্থানীয়দের দুর্ভোগ আরও বাড়ছে। আমরা এখন রীতিমতো আতঙ্কের মধ্যে আছি। রোহিঙ্গারা একের পর এক নানা অপরাধ সংঘঠিত করছে।

বর্তমানে এমন কোনো অপরাধ নেই যা ক্যাম্পে হয় না। এমন পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু না হলে একদিন স্থানীয়রাই এখানে রোহিঙ্গা হয়ে যাবে বলেন নূর মোহাম্মদ।  

মিয়ানমারের ওপর আস্থা নেই রোহিঙ্গাদে

প্রত্যাবাসন নিয়ে মোটেও আস্থা নেই রোহিঙ্গাদের। তাদের বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে এটা ওটা বলে সময় ক্ষেপণ করছে মিয়ানমার। বাস্তবে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে আন্তরিক নন দেশটি।  

‌‘প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হলেই মিয়ানমারে কথিত যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। কোনো কোনো সমস্যাকে সামনে এনে প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত করা হয়। মিয়ানমারের এমন ছলচাতুরীর কারণে প্রত্যাবাসন আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন রোহিঙ্গা নেতা ডা. জুবায়ের।  

তিনি বলেন, বাংলাদেশ আমাদের দেশ নয়। আমরা আমাদের সব অধিকার নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই। কিন্তু মিয়ানমারের নানা নাটকীয়তার কারণে টেকসই প্রত্যাবাসন হচ্ছে না।

অন্যদিকে সাধারণ রোহিঙ্গারা বলছেন, প্রত্যাবাসনের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ। কিন্তু তাকে হত্যার পর প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও থমকে গেছে।

বালুখালীর ৯ নম্বর ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মো. আলম বাংলানিউজকে বলেন, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য, নাগরিকত্বসহ বিভিন্ন অধিকার আদায়ে সোচ্চার ছিলেন মুহিব উল্লাহ। কিন্তু তাকে হত্যার পর সবকিছুতেই স্থবিরতা চলে এসেছে।  

মুহিব উল্লাহর মত নেতা আর রোহিঙ্গাদের মধ্যে হবে না এ কথা জানিয়ে একই ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মো.আনাছ বাংলানিউজকে বলেন, রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলাসহ রোহিঙ্গাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সবকিছুতে মুহিব উল্লাহর সোচ্চার ভূমিকা ছিল। কিন্তু কী হতে কী হয়ে গেল। এখন রোহিঙ্গাদের পক্ষে জোরালোভাবে কথা বলার লোকও নেই। এমন পরিস্থিতিতে প্রত্যাবাসন আদৌ শুরু করা যাবে কিনা সন্দেহ আছে।  

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বাংলানিউজকে জানান, হত্যা, চাঁদাবাজি, অপহরণ, চুরি, ডাকাতি, রোহিঙ্গারা করছে না এমন কোনো অপরাধ বাকি নেই। এ অবস্থায় দিন দিন স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মাঝে শঙ্কা বাড়ছে।  

স্থানীয়দের এমন দুর্বিষহ জীবন থেকে মুক্তি দিতে দ্রুত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর দাবি জানাচ্ছি।  

তবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শামছুদ্দৌজা।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য ইতোমধ্যে প্রায় ৮ লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের কাছে পাঠানো হয়েছে। সেগুলো তারা যাচাই-বাছাই করছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০২২
এসবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।