ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা

রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে ধীর গতি

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২২
রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে ধীর গতি

ঢাকা: বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের ৫ বছর হয়ে গেলেও তাদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে ধীর গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

একশনএইড বাংলাদেশ, সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিস এবং সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ-এর যৌথ উদ্যোগে এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা একথা বলেন।

 

বুধবার (২৪ আগস্ট) অ্যাকশনএইড এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।

'রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ: আশায় অনিশ্চয়তা' শীর্ষক এ গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে কূটনীতিক, সুশীল সমাজ, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, একাডেমিয়া, থিঙ্ক ট্যাঙ্ক, মিডিয়া এবং গবেষকদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।  

গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে একশনএইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সোসাইটির চেয়ারপারসন ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিসের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মনজুর হাসান ওবিই বলেন, গত কয়েক বছর ধরে আইসিজে এবং আইসিসির কিছু বড় সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও ৫ বছর পরে তাদের ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে সামান্যই অগ্রগতি হয়েছে। জাতিসংঘের সংস্থা এবং আসিয়ানের ভূমিকা আরও শক্তিশালী হতে পারত।  
মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান এবং বর্তমান পরিস্থিতি দেশটির সেনাবাহিনীর দায়মুক্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে তিনি যুক্ত করেন।


একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির বলেন, রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন ও পুনরেকত্রীকরণের জন্য জাতীয় ও বৈশ্বিক নেতৃত্বের কোনো সক্রিয় ও শক্তিশালী পদক্ষেপ আমরা দেখতে পাইনি। তাই মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের পুনরেকত্রীকরণ এখন সুদূর পরাহত বিষয়। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বর্তমান প্রয়োজনে সহায়তা করার জন্য আমরা সবাই ক্যাম্পে কাজ করছি, কিন্তু তাদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা থেকে মনোযোগ সরানো যাবে না। আমাদের সর্বদা মনে রাখতে হবে যে কেউ শরণার্থী হতে চায় না।

গোলটেবিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়র আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ তার অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ৫ বছর হয়ে যাওয়া এবং ভাগ্যের কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন না হওয়ার ফলে তারা অধৈর্য হয়ে পড়েছেন। কিন্তু শরণার্থীদের ক্ষেত্রে দুই থেকে তিন প্রজন্ম ধরে আটকে থাকার নজির রয়েছে অনেক। এই সঙ্কট সমাধানে তিনি রোহিঙ্গা কেন্দ্রিক কণ্ঠস্বর শোনারও আহ্বান জানান এবং সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা সংকট সম্পর্কিত ইতিবাচক অগ্রগতি, যেমন আইসিজের ঘোষণার পর রোহিঙ্গাদের নিজস্ব পরিচয়ে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রশংসা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহনাজ হুদা বলেন, কোনো ইসলামিক রাষ্ট্রকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে এখন পর্যন্ত এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।

রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস, বাংলাদেশ (আরআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক মেঘনা গুহঠাকুরতা বলেন, সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের মতো নাগরিক নয় এমন যেকোনো ব্যক্তির সুরক্ষার অধিকার রয়েছে। এটি বাস্তবতা যে প্রত্যাবাসনে কিছুটা সময় লাগবে। সুতরাং, তারা এখানে থাকাকালীন আমাদের সৃজনশীল সমাধান এবং মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশের নাগরিক সমাজ ও সংস্থাগুলোর মধ্যে যোগাযোগের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে।

বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিনিধি জোহানেস ভ্যান ডের ক্লাউ বলেন, আমাদের প্রত্যাবাসনের আশা বাঁচিয়ে রাখতে হবে। ক্যাম্পে যেসব কার্যক্রম চলছে সবই রোহিঙ্গাদের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে করা হচ্ছে। তরুণ জনগোষ্ঠী, শিক্ষা, পরিবার পরিকল্পনা এবং দক্ষতা উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কোনোভাবেই রোহিঙ্গা সঙ্কটকে বৈশ্বিক নেতাদের অগ্রাধিকারের এজেন্ডা থেকে সরানো যাবে না।

তিনি রোহিঙ্গা স্বেচ্ছাসেবকদের জন্য উপবৃত্তি এবং শিশুদের জন্য মিয়ানমারের পাঠ্যক্রমে শিক্ষার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সাম্প্রতিক দুটি বড় চুক্তির কথাও উল্লেখ করেন।

সেভ দ্য চিলড্রেন-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর অনো ভ্যান ম্যানেন গোলটেবিল বৈঠকে বলেন, অনেক শিশু আছে যারা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। আমাদের সেই শিশুদের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে এবং মনে রাখতে হবে তারা এখানে স্বেচ্ছায় আসেনি। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে শিশুদের সুরক্ষা আবশ্যক। তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য কর্তৃপক্ষকে চাপ দেওয়া চালিয়ে যেতে হবে, যতই সময় লাগুক না কেন।

ঢাকা ট্রিবিউন পত্রিকার সম্পাদক জাফর সোবহান বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন মানে শুধু তাদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়াই নয়, এটি হতে হবে মর্যাদার সঙ্গে। প্রত্যাবাসন বাস্তবায়িত করার জন্য আমাদের অবশ্যই গুরুত্ব সহকারে কাজ করতে হবে। আমরা এটাকে শূন্য-সমষ্টির খেলা ভাবতে পারি না। তারা এখানে থাকাকালীন সময়ে তাদের শিক্ষা, কর্মসংস্থান, প্রশিক্ষণ এবং অধিকার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় এটি ভবিষ্যতে তাদের এবং আমাদের উভয়কেই প্রভাবিত করবে।

একশনএইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সোসাইটি-এর বোর্ড সদস্য আনোয়ারা আন্না আমান, আইএলও-এর স্কিল প্রজেক্ট প্রগ্রেসের চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার পেড্রো জুনিয়র বেলেন, সুইডেন দূতাবাসের হিউমেনিট্যারিয়ান অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসটেন্টের সমন্বয়ক মাটলিডা সেনসন, আইএলও-এর স্কিল অ্যান্ড এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্টের চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার পিটার বেলেন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, সুইডেন দূতাবাসের হেড অব ভিএম তাকিয়াহিনো উতসুমি, অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনের হিউমেনিটারিয়ান প্রোগামের প্রতিনিধি সবেত আহমেদ প্রমুখ এ গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন।

এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের ডিরেক্টর ড. ইমতিয়াজ আহমেদ রচিত ‘রোহিঙ্গাস ইন মিয়ানমার অ্যান্ড বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০২২
টিআর/এসএ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।