ঢাকা, রবিবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ মে ২০২৪, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

ছাত্রীকে ‘মৌলবাদী জঙ্গি’ বলে বির্তকে কুবি শিক্ষক

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২২
ছাত্রীকে ‘মৌলবাদী জঙ্গি’ বলে বির্তকে কুবি শিক্ষক কুবি ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. জসিম উদ্দিন

কুমিল্লা : দুই বছর আগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে ক্লাস নিয়ে বির্তকে জড়িয়েছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. জসিম উদ্দিন। এবার এক ছাত্রীকে ‘মৌলবাদী জঙ্গি’ বলে নতুন করে শিরোনামে উঠে এলেন তিনি।

শিক্ষকের এমন বিতর্কিত মন্তব্যে ফুঁসে উঠেছেন কুবি শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া ওই ছাত্রীর বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা, মেয়েরা এত সুন্দর হয় কীভাবে, তাদের কোন ধরনের ছেলে পছন্দসহ স্পর্শকাতর কিছু প্রশ্ন করার অভিযোগও উঠেছে জসিমের বিরুদ্ধে। এসব ব্যাপারে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা না বলতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন তিনি।

জানা গেছে, গত রোববার (২১ আগস্ট) কুবির ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের চতুর্থ সেমিস্টারের বিজনেস স্ট্যাটাস্টিকস-২ (ফিন-২২২) কোর্সের ভাইভা অনুষ্ঠিত হয়। বিভাগের এক ছাত্রী ভাইভাতে বসেন হিজাব পরিহিত অবস্থায়। তাকে দেখে মৌলবাদী জঙ্গি বলে মন্তব্য করেন সহকারী অধ্যাপক জসিম। তা ছাড়া ওই ছাত্রী ভাইভার ম্যানার (শিষ্টাচার) জানেন না বলে হেনস্তা করেন। পরে বিষয়টি নিজ বিভাগের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের জানান ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।

এতে ফুঁসে ওঠেন কুবির ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তারা শিক্ষকের ব্যাপারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখালেখি শুরু করেন। মাজহারুল ইসলাম হানিফ নামে এক শিক্ষার্থী ভুক্তভোগী ছাত্রীর বরাত দিয়ে ফেসবুকে দীর্ঘ একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করেন।

ফেসবুকের কুমিল্লা ইউনিভার্সিটি নাম গ্রুপে তিনি লেখেন- ‘ভাইবাতে প্রথমে স্যার বলেন, আপনি কি ভাইবা দেওয়ার ম্যানার শিখেন নাই? ভাইবা দেওয়ার ম্যানার হলো মুখ খুলে আসতে হবে। এতো পড়াশোনা করে কি করবেন আগে ম্যানারস শিখেন। আপনি এইভাবে ভাইবা দিতে আসছেন জঙ্গি মৌলবাদীদের মতো।

নিকাব খুলেও তো ভাইবা দেওয়া যায়। আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়; ভার্সিটি অ্যাডমিশন দিসেন কেমনে? বলসি, তখন পর্দার বুঝ ছিল না। জানতাম না পর্দা যে ফরজ, বুঝ আসার পর থেকে পর্দা করা শুরু করেছি। বলে, মুখ খোলা রেখেও তো পর্দা করা যায়। আর তখন আপনি অ্যাডাল্ট ছিলেন, আর একটা অ্যাডাল্ট মেয়ে তো সব বুঝে। আমি বলেছি, স্যার সবাই তো আর পর্দার বুঝটা আগে থেকে পায় না। আমি নাকি তর্ক করেছি তাই আমাকে বের করে দিয়েছে।

সংবিধানেও যার যার ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সেখানে আমার পর্দা নিয়ে পারসোনাল অ্যাটাক করার চেষ্টা। অ্যাকাডেমিক টপিকের চেয়ে বেশি আমার মুখ খুলা নিয়েই প্রশ্ন ছিল। ’

একই ব্যাচের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নারী শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলার অভিযোগ রয়েছে। রোববার ভাইবা দিতে গিয়ে ছাত্রীদের বিভিন্ন ধরনের কথা বলে হেনস্তা করেন। বয়ফ্রেন্ড আছে কি না, মেয়েরা এত সুন্দরী হয় কীভাবে, কি ধরণের ছেলে পছন্দ ইত্যাদি জানতে চায়। মেয়েদের প্রতি স্যারের একটু দুর্বলতা আছে। ব্যক্তিগত ব্যাপারে কথা বলে। একজন মেয়েকে জিজ্ঞেস করে বয়ফ্রেন্ড নাই তবু এত সুন্দর কেন। মেয়েদের অ্যাকাডেমিক খুবই কম প্রশ্ন করে। ছেলেদের সাথে পারসোনাল কথা বলে না, অ্যাকাডেমিকই বলেন। পর্দা করা মেয়েদেরকে বিভিন্ন সময়ে হেনস্তা করেন বিভিন্ন কথা বলে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক বিষয়টি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে বলেন, এ বিষয়গুলা নিয়ে কথাই হয়নি। এটি একটি মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র। কর্পোরেট ভাইবাতে পর্দা ব্যবহার করবেন কিন্তু স্মার্টলি যাবেন নমনীয়ভাবে যাবেন। ওই শিক্ষার্থীকে জাস্ট এতটুকু বলেছি, তাও বলেছি ভাইবার পরে।

ভুক্তভোগী ছাত্রীকে সাংবাদিকদের যোগাযোগ না করতে নিষেধ করার বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো কথাই হয়নি। সে আসছিল, তখন আমি বলেছি আমি হয়তো বুঝাতে পারিনি। সে বলছে স্যার বুঝতে পারছি।

এ বিষয়ে বিভাগটির সভাপতি এমদাদুল হক বলেন, একজন শিক্ষক কীভাবে ভাইবা নিবেন এটি সম্পূর্ণ ওনার ব্যাপার। ছাত্রছাত্রী যদি অভিযোগ দেয় তাহলে আমরা বিষয়টি দেখব।

এ বিষয়ে জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ও কুবি যৌন হয়রানি প্রতিরোধ সেলের সদস্য দিল নাসি মহসিন বলেন, এমন ঘটনা অবশ্যই নির্যাতন। এজন্য ছাত্রীর ব্যক্তিগত বিষয়ে শিক্ষক কথা বলতে পারেন না। এটি কোনো সাধারণ শিষ্টাচারে পড়ে না। আমাদের দেশে আমরা অনেক কিছু দেখেও না দেখার মতো করে চলি। আমরা কোনো রেজাল্ট পাই না। শিক্ষক যদি ওই দৃষ্টি নিয়ে বলে থাকে তাহলে অবশ্যই অন্যায় কাজ। ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে বলতে পারে, যেখানে ওইরকম চাহিদা নাই।

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত করবে। এর ফলাফলের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নেবে।

উল্লেখ্য, এর আগে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীতে ক্লাস নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশ সময় : ১৪৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০২২
এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।