ঢাকা, শুক্রবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ মে ২০২৪, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

ভালো কাজে বিনে পয়সার শ্রমিক ডিবিজি গ্রুপ

শামসুল ইসলাম সনেট, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১১ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২২
ভালো কাজে বিনে পয়সার শ্রমিক ডিবিজি গ্রুপ

কেরানীগঞ্জ: তারা পেশায় কেউ ছাত্র, কেউ ছোট ব্যাবসায়ী, কেউ চাকরিজীবী, কেউবা বেকার। তবে শুক্রবার এলেই তারা সবাই পরিচ্ছন্নতা কর্মী।

ছুটির এ দিনটিতে সবাই যেখানে ব্যস্ত নিজেদের মত করে দিনটি উপভোগ করতে, সেখানে তারা নিজেদের উদ্যোগে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেই লেগে যান পরিচিত-অপরিচিত কোনো কবরস্থান পরিষ্কারের কাজে। জীবনের শেষ গন্তব্য কবরস্থানের কথা মনে হলেই ভয়ে যেখানে মনটা ছোট হয়ে আসে, সেখানে দিপু, সাজু, রিয়াজুল, আশিক, জামাল, ফজলুরা ঝোপঝাড়, শিয়াল-কুকুর আর সাপ-বিচ্ছুর ভয়কে উপেক্ষা করে একের পর এক কবরস্থান পরিষ্কার করে যাচ্ছেন।

শুরুর দিকে নিজেদের এলাকা অর্থাৎ ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার কলাতিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কবরস্থান, পরে পাশের ইউনিয়ন, সর্বপরি পুরো উপজেলায় শুরু হয়েছে তাদের এ পরিচ্ছন্নতা অভিযান।  

কবরস্থান পরিষ্কার করা ছাড়াও তারা কবর খোঁড়া, এতিমদের খাওয়ানো, জরুরি রক্তদান, গরীর-অসহায়দের চিকিৎসা, তাদের মেয়েদের বিয়ের খরচ বহন করা ছাড়াও নানা সামাজিক ও মানবিক কাজ করে থাকেন।

এ ব্যাপারে সংগঠনটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মো. ইয়ার হোসাইন জানান, আমরা মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংগঠিত হই। কথায় কথায় আমার মাথায় চিন্তা আসে এমন কিছু করা যায় কিনা যা সাধারণত মানুষ করে না। আর আমরা কয়েকজন আগে থেকেই কবর খোঁড়া ও পরিষ্কারের কাজ করতাম। আমরা সংগঠিত হয়ে ‘দারিদ্র বিমোচন গ্রুপ’ বা ডিবিজি গ্রুপ নামে একটি সংগঠন করে আরো ব্যাপকভাবে কাজ শুরু করেছি।

তিনি আরও জানান, সাধারণত আমরা অনেকেই অনেক ভালো কাজ করি, কিন্তু কবরস্থান পরিষ্কার করার উদ্যোগ কেউ নেই না। আমাদের আসল ঘরটা দিনের পর দিন অপরিষ্কার থাকে কেউ খবর নিই না। সেখান থেকে আমরা পরিকল্পনা করি এবং সিদ্ধান্ত নিই আমরা কেরানীগঞ্জের প্রতিটি কবরস্থান পরিষ্কার করবো।  

কিছু প্রবাসী ভাই, বন্ধু ও কাছের আত্মীয় স্বজন ছাড়াও কেরানীগঞ্জের পরিচিত মুখ মানবতার ফেরিওয়ালা হিসেবে পরিচিত ডা. হাবিবুর রহমান হাবিব স্যারের কাছ থেকে আমরা নানা বিষয়ে পরামর্শ ও সাহায্য পেয়ে থাকি। যে কোনো কবরস্থান পরিষ্কার করাতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা সেটি পরিষ্কার করে দেব।

ডিবিজি গ্রুপের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হাওলাদার বলেন, আমরা শুধু কবরস্থান নয়, সমাজের অবহেলিত মানুষের জন্য কাজ করছি। এলাকার যে কোনো সমস্যা সমাধানে বা সামাজিক কোনো কাজে আমাদের স্বেচ্ছাসেবীরা সব সময় প্রথম সারিতে থাকে। আমরা এতিম শিশুদের খাবারের ব্যবস্থা করি।  

তাদের এ কার্যক্রম নিয়ে কথা হয় সদস্যদের কয়েকজন অবিভাবকের সাথে, তারা জনান, প্রথম দিকে আমরা ভয়ে বাচ্চাদের কবরস্থান পরিষ্কার করতে নিষেধ করতাম কিন্তু তারা শোনেনি। পরে ভাবি যাক ভালো কাজইতো করছে।  

কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান জানান, এমন মানবিক কাজের জন্য তাদের সাধুবাদ জানাই। তাদের মতো যুবকরা আছে বলেই আমাদের সমাজ, আমাদের দেশটা এতো সুন্দর। তাদের এমন ভালো কাজের অংশ হতে পারলে খুশি হবো। যে কোনো প্রয়োজনে তাদের পাশো থাকবো ইনশাআল্লাহ।  

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২২
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।