ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

হিজড়া ও লিঙ্গবৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর চিত্র 

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২২
হিজড়া ও লিঙ্গবৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর চিত্র 

হিজড়া কোনো গালি নয়, নয় কোনো লৈঙ্গিক পরিচয়, এটি মূলত একটি সংস্কৃতি। সমাজের ধরে বেঁধে দেওয়া নারী বা পুরুষ পরিচয়ের বাইরেও রয়েছে, রূপান্তরিত বা ট্রান্সজেন্ডার নারী-পুরুষ, জৈবিক দিক থেকে বৈচিত্র্যময় নারী-পুরুষ, ইন্টারসেক্স বা আন্তঃলিঙ্গের ব্যক্তিসহ আরো কিছু লৈঙ্গিক পরিচয়ের মানুষ।

 

একজন পুরুষ যখন লৈঙ্গিক অতৃপ্তি বা অস্বস্তির  কারণে একজন নারীর জেন্ডার ভূমিকায় স্বস্তিবোধ করেন, তখন তারপরিচয় হয় ট্রান্সজেন্ডার নারী।

একইভাবে একজন নারী যখন পুরুষের জেন্ডার ভূমিকায় স্বস্তিবোধ করেন এবং সেই মোতাবেক নিজেকে পরিবর্তন করেন, তখন তিনি হয়ে ওঠেন ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ।  

আমাদের অধিকাংশের ধারণা, হিজড়া সংস্কৃতি মাত্রই শারীরিকভাবে অর্ধ নারী বা পুরুষ। কিন্তু বিষয়টি এমন নয়, হিজড়া সংস্কৃতিতে এমন অনেকে আছেন যারা শারীরিকভাবে পুরুষ হলেও মানসিকভাবে নারী  অথবা শারীরিকভাবে নারী হলেও মানসিকভাবে পুরুষ।  
পরিবার ও সমাজের বঞ্চনা, অত্যাচার, বুলিং-এ জর্জরিত জীবন থেকে মুক্তি পেতে এবং নিজের প্রকৃত জেন্ডার ভূমিকায় নিজেকে সাবলীলভাবে পরিচিত করতে হিজড়া দলে নাম লেখান বৈচিত্র্যময় নারী-পুরুষেরা। হিজড়াগুরুদের ডেরায় শুরু হয় তাদের এক নতুন জীবন, যেখানে বুলিং-এর কারণ তাদের আচরণ, পোশাক, সাজ অথবা যৌন চাহিদার ভিন্নতা নয়।

তবে এমন অনেক বৈচিত্র্যময় নারী-পুরুষ আছেন যারা হিজড়া দলের অন্তর্ভুক্ত হননি,  একা বা পরিবারের সঙ্গেই জীবন-যাপন করছেন। কিন্তু বিভ্রান্তিকর হলেও সত্যি যে,  জেন্ডার বা হিজড়া জনগোষ্ঠী সম্পর্কে অসচেতনতা এবং বুলিং বা বডি সেমিং সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে প্রতিমুহূর্তে একদম কৈশোর থেকেই এই বৈচিত্র্যময় ব্যক্তিরা পরিবার-পরিজনের কাছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ গোটা সমাজের মুখেই হিজড়া, মাইগ্যা, হাফলেডিস ইত্যাদি নানা রকম কটুবাক্য শুনে শুনে ভয়ংকর সব অভিজ্ঞতা নিয়ে বড় হন।  

ফরিদপুরের হিজড়া জনগোষ্ঠীর অবস্থা  
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার যেমন ঢাকা, রাজশাহী,  জামালপুর, যশোরের হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্যদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি হলেও ফরিদপুরের চিত্র বেশ ভিন্ন। ফরিদপুর জেলার ৯টি উপজেলায় প্রায় শতাধিক হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্য থাকা সত্ত্বেও তারা নিজেদের অধিকার আদায়ের থেকে শুরু করে তাদের জন্য দেওয়া সরকারি, বেসরকারি সেবাগুলো সম্পর্কেও জানেন না।  
তবে এদের মাঝে কয়েকজন হিজড়া পরিচয় নিয়েই ব্যবসা ও চাকরি করছেন।

মিলেছে কয়েকজন এসএসসি ও এইসএসসি পাশ এমনকি অনার্স পড়ুয়া বৈচিত্র্যময় নারীর তথ্য। তাদের স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষে করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবেন কিন্তু শারীরিক বৈচিত্র্য নিয়ে যুদ্ধ করতে করতে এখন নিজেদের শারীরিক বিকলাঙ্গ ভেবে সকল স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে নেমেছেন পথে। কিছু অদ্ভুত তথ্যও উঠে এসেছে তালিকায়,  যেমন একই পরিবারের আপন দুই বোন হিজড়া পেশায় আছেন, একই গুরু মায়ের ডেরায় (হিজড়াদের বাসস্থান)। আছেন আপন চাচা-ভাস্তেও। হিজড়া জনগোষ্ঠীর যেসকল সদস্যরা তুলনামূলক অনুন্নত এলাকাগুলোতে বসবাস করেন তারা নানা রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকেন। ব্লাস্ট, বন্ধু, লাইট হাউস, এফপিএবিসহ যে সকল প্রতিষ্ঠান হিজড়া ও লিঙ্গ বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীকে বিনামূল্যে বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকে সে বিষয়ে অনেকের মধ্যে সাধারণ ধারণাও নেই। অসচেতনতা ও না জানাগুলো থেকেই যতটুকু সেবা বা গ্রহণযোগ্যতা আছে সেটা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।    

ফরিদপুর সদর উপজেলার শাপলা হিজড়া বলেন, আমাদের জন্য খামার করা, বাগান করা এমন কাজ করা সহজ, সারা জীবন রাস্তায় রাস্তায় কালেকশন করে (টাকা তুলে) কাটিয়েছি। এখন সেলাই মেশিনে বসার মতো মন মানসিকতা নেই।  

অন্যদিকে, কুমকুম (ছদ্মনাম) হিজড়া বলেন, আমাদের জন্য বিউটি পার্লারের প্রশিক্ষণের সুযোগ আসে, কিন্তু আমরা পার্লার খুলে বসলে কতজন ক্রেতা আমাদের কাছে আসবেন সেটা কেউ ভেবে দেখেন না। রাস্তা ঘাটে হিজড়া দেখেই সবাই ভয় পায় সেখানে টাকা দিয়ে আমাদের সেবা গ্রহণ স্বপ্নের মতো। তবে যদি আমরা সুন্দর আচরণ ও বেস্ট লেভেলের কাজ করতে পারি তখন ক্রেতারা আসবেন কিন্তু সেই দিন এখনো অনেক দূরে।  

সত্যিকার অর্থেই হিজড়া সদস্যদের দিনের পর দিন যেরকম মানসিক বিপর্যয়ের মধ্য  দিয়ে যেতে হয়, সেখানে তাদের মধ্যে জীবনকে নতুন করে সাজানোর স্বপ্ন দেখা বেশ কঠিন।  

নিজেদেরকে এক রকম অস্পৃশ্য ভেবে নিয়ে তারা মূল স্রোতে আসতে সংকোচ বোধ করেন। যদিও দিন দিন এই বরফ গলতে শুরু করেছে।  

লেখা: তাহিয়াতুল জান্নাত রেমি
সভাপতি, নন্দিতা সুরক্ষা  
 

 

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২২ 
এসআইএস                       


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।