ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কাপ্তাই হ্রদ: দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

মঈন উদ্দীন বাপ্পী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২২
কাপ্তাই হ্রদ: দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

রাঙামাটি: কাপ্তাই হ্রদ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ মিঠাপানির কৃত্রিম হ্রদ। হ্রদের চারপাশে সবুজে ঘেরা পাহাড়, হ্রদের বিস্তৃতি নীলাভ জল, পাখিদের কিচিরমিচির, নৌকার শব্দ, জেলেদের মাছ ধরা, হ্রদের ব্যতি-ব্যস্ততা এবং হ্রদের মধ্যখানে জেগে থাকা ছোট ছোট সবুজে ভরা দ্বীপ হ্রদের সৌন্দর্যকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

হ্রদের অথৈ জলে একদিকে মাছের ভাণ্ডার অন্যদিকে অফুরন্ত জীব বৈচিত্র্য এবং জলকেন্দ্রীক মানুষের জীবনযাত্রা দেখে যে কেউ মুগ্ধ নয়নে থাকিয়ে থাকবে। তাই মনুষ্যসৃষ্ট কৃত্রিম হ্রদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতি বছর লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম ঘটে পাহাড়ি জেলা রাঙামাটিতে।  

তৎকালীন সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে ১৯৫৬ সালে কর্ণফুলী নদীর ওপর কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণ করে। বাঁধের ফলে সৃষ্টি হয় কৃত্রিম হ্রদের। এটি বিশ্বের মানুষের কাছে কাপ্তাই হ্রদ নামে বেশ পরিচিতি।  

৭২৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের হ্রদটি বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, যোগাযোগ, মৎস্য সম্পদ উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এমনকি হ্রদের পারে বসবাসরত অধিকাংশ মানুষের খাবার পানির যোগান দেয়।

এই হ্রদটি দিয়ে জেলা সদরের সঙ্গে ছয়টি উপজেলার সরাসরি নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু আছে। হ্রদে রয়েছে বিশাল মৎস্য সম্পদ। এই মৎস্য সম্পদের ওপর জেলে সম্প্রদায় যেমন মাছ ধরে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে তেমনি সরকারও প্রতি বছরে কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় করে।

এছাড়াও হ্রদের চারপাশে জলেভাসা জমিতে কৃষকরা শস্যদানা থেকে শুরু করে নানা ধরনের সবজি চাষ করে। উৎপাদিত এসব ফসল জেলার অধিকাংশ মানুষের খাদ্যের যোগান দেয়।

বর্তমানে হ্রদটির সৌন্দর্যকে উপজীব্য করে কয়েকজন উদীয়মান তরুণ হ্রদের চারপাশে স্ব-স্ব উদ্যোগে পর্যটন স্পট গড়ে তুলেছে। পর্যটকরা হ্রদে ভ্রমণের পাশাপাশি গড়ে ওঠা এসব স্পটগুলোতে মন খুলে বেড়াচ্ছে এবং ভুঁড়িভোজনের কাজও শেষ করছে। ফলে এসব পর্যটন স্পটগুলোর মালিকরা তাদের ব্যবসা চালিয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করছে তেমনি স্পটগুলোতে অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. পিয়ারুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, কাপ্তাই হ্রদের সৌন্দর্য যে একবার অবলোকন করেছে তাকে বারবার ফিরে আসতে হবে মায়াবী হ্রদের টানে। তবে এত সুন্দর হ্রদটি রক্ষার্থে সরকারের পাশাপাশি আমাদেরও কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমি সরকারকে অনুরোধ করবো হ্রদের উন্নয়নে আরও এগিয়ে আসতে এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে তাহলে এ হ্রদ থেকে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায় করতে পারবে।

স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতা রোটারেক্ট মোহাম্মদ আলী বাংলানিউজনিউজকে বলেন, কাপ্তাই হ্রদ শুধু রাঙামাটিবাসীর জন্য নয়, পুরো দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এ সম্পদ রক্ষা করতে হলে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয়দেরও সহযোগিতা দরকার। তবেই কাপ্তাই হ্রদের অস্তিত্ব সংকট দূর হবে এবং দেশের জন্য একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক খাত হিসেবে পরিগণিত হবে।

রাঙামাটি প্রেসক্লাবের সভাপতি এবং কাপ্তাই হ্রদ রক্ষার্থে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করা সাখাওয়াত হোসেন রুবেল বলেন, কাপ্তাই হ্রদে সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সরকার অনেকাংশে লাভবান হচ্ছে না। হ্রদটিকে সুরক্ষা করতে হলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি। যেমন অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, হ্রদের নব্যতা বৃদ্ধি করা এসব। পাশাপাশি হ্রদের দূষণ রোধে আমাদের যেমন সচেতন হতে হবে তেমনি স্থানীয় প্রশাসনকেও ব্যবস্থা নিতে হবে।

সংবাদ কর্মীদের সংগঠন প্রেসক্লাবের এই নেতা আরও বলেন, কাপ্তাই হ্রদকে নতুন অর্থনৈতিক মেরু অঞ্চল গড়ে তুলতে হলে হ্রদটির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। তাহলে দেশের বৃহৎ অথনৈতিক যোগান এ হ্রদ থেকে দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।