ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

জাতীয়

পু‌লি‌শের আচরণে সুশীল সমা‌জের উদ্বেগ

জাহিদুল ইসলাম মেহেদী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২২
পু‌লি‌শের আচরণে সুশীল সমা‌জের উদ্বেগ বামে গোল চিহ্নিত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলী, ডানে এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ

বরগুনা: বরগুনায় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের উত্তেজনা সামাল দেওয়ার নামে পুলিশের লাঠি দিয়ে পেটানোর দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে জেলাসহ সারা দেশে সমালোচনার ঝড় বইছে।

 

কাউকে পেটানোর অধিকার পুলিশের না থাকলেও স্থানীয় সংসদ সদস্যের সামনেই তারা কাজটি করেছেন। আর পুলিশের এহেন আচরণে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সুশীল সমাজ।  

মঙ্গলবার বিকেল (১৬ আগস্ট) সোয়া ৩টার দিকে আলোচনায় আসা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলীকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে নিযুক্ত করা হয়েছে।  

মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) এসএম তারেক রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে তিন কর্ম দিবসের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে হামলার ঘটনার তদন্তের স্বার্থে ২ ( দুই ) সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ ঘটনায় তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মু. তৌফিকউজ্জামান তনু স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গতকাল ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বরগুনা জেলা প্রশাসন আয়োজিত কর্মসূচিতে বরগুনা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলীর নেতৃত্বে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বরগুনা-১ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী অ্যাড. ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এমপি মহোদয়ের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করা ও ছাত্রলীগের অসংখ্য নেতাকর্মীর ওপর পৈচাশিক নির্যাতন করায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলীর বিচারে দাবিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
 
সমাবেশে বক্তারা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিচার চাই। প্রশাসনের হাত থেকে সাধারণ নাগরিক, মানুষ যেন বাঁচতে পারে। হাত পা বেঁধে মারারও একটা লিমিট আছে, এমনভাবে মারা হয়েছে যা বলার মতো না, এর তীব্র নিন্দা জানাই।

এই সংবাদটি পড়ে প্রথম মনে প্রশ্ন জাগে, কেমন পুলিশ তারা? তারা কি আসলেই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে নিয়োজিত, নাকি শিক্ষার্থীদের অকারণে লাঠিচার্জ করার মিশনে ব্যস্ত?

এ বিষয়ে বরগুনা সদর উপজেলার কুমরাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল আজিজ বাংলানিউজকে বলেন, শোক দিবসে ছাত্রদের রক্তাক্ত করা হয়েছে। শিল্পকলা একাডেমির মধ্য এমন কোনো আপত্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি যেখানে পুলিশ লাঠিচার্জ করতে পারে।  

তিনি আরও বলেন, বরগুনা-১ আসনের এমপির সামনেই পুলিশের লাঠিচার্জে রক্তাক্ত হয়েছেন শতাধিক ছাত্রলীগ ও সাধারণ শিক্ষার্থী। পরে ওই ভবনের ছাদ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের গাড়িতে ইট নিক্ষেপ করার কারণে ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশকে আমরা সত্যিকারের সেবকের ভূমিকায় দেখতে চাই।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্বাস হোসেন মন্টু মোল্লা বাংলানিউজকে বলেন, বরগুনা জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা সভায় জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে গতকাল যে ঘটনা ঘটেছে তাতে আমাদের বরগুনার ১২ লাখ মানুষ হৃদয়ে আঘাত পেয়েছে।

বরগুনার প্রবীণ সাংবাদিক ও প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হাসান ঝন্টু বলেন, শিল্পকলা একাডেমিতে যথেষ্ট নিরাপত্তার ঘাটতি ছিল। কিভাবে জেলা প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত আলোচনা সভায় ইট-পাটকেল, লাঠি সোটা নিয়ে দুষ্কৃতকারীরা শিল্পকলা অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করল? শহরে আইনশৃঙ্খলার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে, এর প্রমাণ গতকালকের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। বিভিন্ন স্কুল কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জাতীয় প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেতে এসে পুলিশের লাঠিচার্জে আহত হয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা একজন সংসদ সদস্যের উপস্থিতিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ সাধারণ ছাত্রদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। এমপির সাথে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলী ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেছেন। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের কর্মকাণ্ড যেন না হয়। একই সঙ্গে পুলিশের ভাবমূর্তি যাতে ক্ষুণ্ন না হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে।

প্রসঙ্গত, সোমবার (১৫ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্সে ফুল দিতে যান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে ফেরার সময় শিল্পকলা একাডেমির সামনে পৌঁছালে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত গ্রুপের সদস্যরা তাদের ওপর হামলা চালান। এতে দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ছাড়া শিল্পকলা একাডেমি ভবনে আটকে গণহারে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পেটায় পুলিশ। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শহরজুড়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এর আগে দীর্ঘ আট বছর পর গত ১৭ জুলাই বরগুনা শহরের সিরাজ উদ্দীন টাউন হল মিলানায়তনে বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২৪ জুলাই রাতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটির অনুমোদন দেন।

এতে জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৩৩ সদস্যের নাম প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকেই সদ্য ঘোষিত এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বরগুনা শহরে পদবঞ্চিতরা প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২২
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।