ঢাকা, রবিবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ১২ মে ২০২৪, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

উত্তরায় গার্ডার চাপা

‘টাকা বাঁচাতে গিয়ে আমার সব কেড়ে নিয়েছে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২২
‘টাকা বাঁচাতে গিয়ে আমার সব কেড়ে নিয়েছে’

ঢাকা: রাজধানীর উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার চাপা পড়ে একই পরিবারের ৫ জন নিহত হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান গাড়িতে থাকা নবদম্পতি হৃদয় ও রিয়া। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে ছুটে এসেছেন সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের মর্গের সামনে।

যেখানে একই গাড়িতে থাকা বাকি ৫ জনের মরদেহের ময়নাতদন্ত চলছিল। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও মাত্র একদিনের ব্যবধানে চোখের সামনে পরিবারের ৫ জনকে মারা যেতে দেখে কিছুতেই সামলাতে পারছেন না নিজেদের।

কান্না থামিয়ে এই দম্পতি বলছেন, টাকা বাঁচাতে কোনো ধরনের নিরাপত্তা ছাড়াই এতো বড় কাজ করাতেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। ফলে পরিবারের ৫ জনকে হারাতে হয়েছে তাদের।

রিয়া বলেন, এই দুনিয়াতে আমার মা-ই সবচেয়ে আপান। সেই ছোট থেকে আমাকে আর আমার ভাইকে বড় করছেন। সেই মা-ই আমার সঙ্গে থেকে মারা গেলেন। চাপা পড়ার পর মায়ের শরীরের রক্ত আমার গায়ে এসে লাগে, এটা কোনো ভাবেই কল্পনা করা যায় না।

তিনি বলেন, এমন ব্যস্ত একটা সড়কে এ ধরনের কাজ করার সময় যান চলাচল বন্ধ রাখা উচিত ছিল। গার্ডারের মতো এমন একটা জিনিস ঝুলিয়ে রেখেছিল কোনো ধরনের নিরাপত্তা ছাড়াই। দুইটা টাকা বাঁচানোর জন্য তারা এমন একটা কাজ করল। কাজ করতেছে ঠিক আছে, কিন্তু নিরাপত্তাটা যদি নিশ্চিত করতো, তাহলে আমার এতো বড় ক্ষতি হতো না।

তিনি আরও বলেন, আমার শ্বশুর আমার বাবার মতো। তিনি আমাকে মা বলে ডাকতেন। আমাকে নিয়ে তার কতো স্বপ্ন ছিল, আজকে সব শেষ হয়ে গেল। তিনি শখ করে ছেলের জন্য বউ নিয়ে এসেছিলেন। বিয়ের সময় তিনি নিজেই গাড়ি চালিয়ে আমাকে নিয়ে আসেন, আবার নিজেই দিয়ে আসতে যাচ্ছিলেন।

এরমধ্যে এমন একটা ঘটনা ঘটলো, আমার শ্বশুর চলে গেলেন, মা চলে গেলেন। আমার সব শেষ হয়ে গেছে।

রিয়ার স্বামী হৃদয় বলেন, বউভাতের অনুষ্ঠান ছিল আমাদের কাওলার বাসায়, সেখানে শ্বশুরবাড়ির লোকজন আসেন। বউভাতের অনুষ্ঠান শেষ হতে তিনটা বেজে যায়। তারা চাইছিলেণ, আমি যেন তাদের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি যাই। শ্বশুরবাড়ি সাভারের আশুলিয়া খেজুরবাগানে।

কিন্তু বাবা বললেন তুমি যেহেতু শ্বশুরবাড়ি যাবা আমি তোমাকে গাড়িতে করে দিয়ে আসি। তার কথামতো আমি গাড়ির সামনে বসি। আমার শাশুড়ি-খালা শাশুড়ি, ও স্বামী পেছনের সিটে বসেন। বিমানবন্দর ক্রস করার পরে দেখি প্রজেক্টের গার্ডার ঝুলে ছিল রাস্তার উপরে। ওইটার নিচ দিয়ে সব গাড়ি যাচ্ছিল। অন্য গাড়ি যেভাবে যাচ্ছিল আমাদেরটাও সেভাবে যাচ্ছিল।

আমরা যখন ক্রস করছিলাম, তখন গার্ডার গাড়ির ডানসাইডে আছড়ে পড়ে। ডানসাইডে আমার বাবা ড্রাইভ করছিলেন, আমার শাশুড়ি, খালা শাশুড়ি ছিলেন, আর দুটি বাচ্চা ছিল। সঙ্গে সঙ্গে তারা মারা যায়। আমরা গাড়িতে আটকে পড়ি। স্থানীয়রা গাড়ির গ্লাস ভেঙে আমাদের গাড়ি থেকে বের করে। পরে ফায়ার সার্ভিস গাড়ি কেটে ৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করে।

সোমবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের প্যারাডাইস টাওয়ারের সামনে গার্ডার চাপায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। গাড়িটিতে মোট ৭ যাত্রী ছিলেন। এরমধ্যে দুই শিশু, দুই নারী ও একজন পুরুষ মারা গেছেন।

নিহতরা হলেন- রুবেল (৫০), ঝরণা (২৮), ফাহিমা (৩৭), জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)। তাদের মরদেহ রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। গাড়িতে থাকা হৃদয় (২৬) ও রিয়া মনি (২১) নামে নবদম্পতি ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০২২
পিএম/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।